তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় গ্রেপ্তার অভিনেত্রী ও মডেল কাজী নওশাবা আহমেদ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। চিকিৎসার জন্য আজ সোমবার বিকেলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরই বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হওয়ায় অভিনেত্রী নওশাবা আহমেদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মো. নাসের প্রথম আলোকে জানান, অভিনেত্রী নওশাবাকে তিনি দেখেছেন। তাঁর ডায়ারিয়া এবং কোমরে ব্যথা আছে। পরে নওশাবাকে মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হয়।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, অভিনেত্রী ও মডেল কাজী নওশাবা আহমেদের শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আদালত সূত্র বলছে, গত শুক্রবার নওশাবাকে পুনরায় দুই দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত। এরপর পুলিশ তাঁকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সোমবার আদালতে আনার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে পুলিশ। আদালতকেও পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে নওশাবার অসুস্থ হওয়ার বিষয়টি জানিয়েছে।

এর আগে ৫ আগস্ট প্রথমবারের মতো নওশাবাকে চার দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। সে সময় রিমান্ড আবেদনে পুলিশ বলে, জিজ্ঞাসাবাদে আসামি স্বীকার করেছেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় ‘দুই ছাত্রের মৃত্যু এবং একজনের চোখ তুলে ফেলার’ কথা নিজের ফেসবুকে ছড়ান। এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত আছেন, তাঁদের গ্রেপ্তারের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। পুলিশ আদালতকে জানিয়েছে, নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোই নওশাবার উদ্দেশ্য ছিল।

৪ আগস্ট দুপুরের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ের কর্মীদের সংঘর্ষে জিগাতলা এলাকা রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। ওই দিন বিকেল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চলা সংঘর্ষে হেলমেট পরা একদল যুবককে দেখা গেছে, যাঁদের একজনের হাতে আগ্নেয়াস্ত্রও দেখা যায়। সংঘর্ষে শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে অভিনেত্রী নওশাবা বিকেল ৪টার দিকে ফেসবুক লাইভে আসেন। ১ মিনিট ৩৭ সেকেন্ডের লাইভ ভিডিওর শুরুতেই তিনি বলেন, ‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ বলছি, আপনাদের জানাতে চাই, একটু আগে জিগাতলায় আমাদের ছোট ভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে, দুজনকে মেরে ফেলা হয়েছে।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে চলমান আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোই নওশাবার উদ্দেশ্য ছিল বলে জানিয়েছে র‍্যাব।

র‍্যাবের ভাষ্য, নওশাবা স্বীকারোক্তিতে জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভে আসার আগে তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। তিনি জিগাতলা নিয়ে কথা বলার সময় উত্তরায় ছিলেন। রুদ্র নামের এক ছেলে তাঁকে লাইভ করতে বলেন। তাই তিনি উত্তরা থেকে লাইভ করেছেন।

ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে ৪ আগস্ট রাতেই রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে নওশাবাকে আটক করে র‍্যাব । র‍্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ‘গুজব’ ছড়ানোর কথা স্বীকার করেন তিনি। পরে র‍্যাব বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে এ মামলা করে নওশাবাকে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here