কুমিল্লাঃ

কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার আশাবাড়ি সীমান্ত এলাকায় অভিযানে গিয়ে ভুলক্রমে ভারতে ঢুকে পড়ে স্থানীয় মাদক চোরাকারবারীদের হাতে ব্যাপক মারধরের শিকার হয়েছেন দুই নারী সোর্সসহ র‌্যাবের তিন সদস্য।

সীমান্তবর্তী মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাব সদস্যদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে নির্দয়ভাবে পিটুনি দিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের কাছে সোপর্দ করে। পরে প্রায় ১০ ঘন্টা পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে দুই নারী সোর্সসহ র‌্যাবের তিন সদস্যকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত দেয়া হয়।

এদিকে মারধরের শিকার তিন র‌্যাব সদস্যের মারাত্মক আহত অবস্থায় পড়ে থাকার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এসব ছবি পোস্ট করে প্রায় সকলেই বিএসএফ তাদের (র‌্যাব সদস্যদের) বেধড়ক মারধর ও অমানুষিক নির্যাতন করেছেন বলে সমালোচনা করছেন।

তারা বলছেন, একটি দেশের এলিট ফোর্সের সাথে পার্শ্ববর্তী দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর এ আচরণ কখনোই বন্ধুত্বসুলভ হতে পারে না। কিন্তু ঘটনার অনুসন্ধানে স্থানীয়দের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ীরাই সংঘবদ্ধ হয়ে র‌্যাবের উপর হামলা চালায়। পরে বিএসএফের একটি টহল দল বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তাদেরকে উদ্ধার করে ক্যাম্পে নিয়ে যান।

ব্রাহ্মণপাড়ার আশাবাড়ি সীমান্ত এলাকার কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানান, বৃহস্পতিবার সকালে সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢুকে জলিল, হাবিলের বাড়িতে যায় র‌্যাবের দুই নারী সোর্স। তাদের বাড়িতে গিয়ে দুই সোর্স মাদক (ফেনসিডিল) সেবন শেষে মাদক ক্রয় করতে চাইলে তারা বিক্রি করতে রাজি হয়। পরে পাঁচ লাখ টাকার জাল টাকা নিয়ে ভারতের ২০৫৯ পিলালের ১০ গজ ভিতরে ঢুকে ব্যবসায়ী জলিল ও হাবিলকে আটকের চেষ্টা করে র‌্যাব।

খবর পেয়ে স্থানীয় অপর মাদক ব্যবসায়ী মন্টুর নেতৃত্বে অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবের তিন সদস্যসহ দুই নারী সোর্সকে আটক করে মারধর শুরু করে। এসময় তারা র‌্যাব সদস্যদের কাছে থাকা পিস্তল, গুলি ও হ্যা-কাপ ছিল ছিনিয়ে নেয়। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ বেধড়ক মারধরের পর আহত অবস্থায় ৫ জনকে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় এক যুবক বলেন, মাদক ব্যবসায়ী মন্টুর বাড়ি বাংলাদেশে। মাদক ব্যবসার সুবিধার্থে সে ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে গিয়ে বাড়ি করেছে। মন্টুর ভারতীয় নাগরিকত্ব আছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া য়ানি।

স্থানীয়দের ভাষ্যে, মূলত মন্টুর নেতৃত্বেই অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাব সদস্যদের আটক করে ব্যাপক মারধর ও অমানুষিক নির্যাতন চালায়।

জহিরুল হক নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, সীমান্তের নো-ম্যান্স ল্যান্ডে র‌্যাবের তিন সদস্যকে হাত-পা ও চোখ বেঁধে মারধর করার সময় বিএসএফ এর একটি টহল দল মানুষের জটলা দেখে এগিয়ে আসে। এ সময় পালিয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ী চোরাকারবারিরা। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে বিএসএফ ক্যাম্পে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। তার ভাষ্য, মারধরের সময় উপস্থিত স্থানীয়দের মোবাইল ফোনে তোলা ছবিগুলোই এখন ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এদিকে ভারতে আটক র‌্যাব সদস্যদের মারধর কিংবা নির্যাতনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি র‌্যাবের কর্মকর্তারা।

তবে র‌্যাব-১১ সিপিসি-২ কুমিল্লার ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার মুহিতুল ইসলাম বৃহস্পতিবার রাতে গণমাধ্যমে জানান, ‘র‌্যাব-১১ এর একটি দল বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা থেকে আশাবাড়ি এলাকায় মা দক উ’দ্ধার অভিযানে যায়। এসময় মাদক চোরাকারবারীদের ধাওয়ার একপর্যায়ে র‌্যাবের কয়েক সদস্য অসাবধানতাবশত ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে। এতে ভারতীয় নাগরিকরা তাদেরকে আটকপূর্বক মারধর করে বিএসএফ এর নিকট হস্তান্তর করে। প্রায় ১০ ঘন্টা পর সন্ধ্যা ৭টার দিকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে র‌্যাবের তিন সদস্যসহ ৫জনকে ফিরিয়ে আনা হয়।’

আটক তিন র‌্যাব সদস্য হলেন, কনস্টেবল রিগান বড়ুয়া, আবদুল মজিদ ও সৈনিক মো: ওয়াহিদ। র‌্যাবের সঙ্গে থাকা দুই নারী সোর্স হলেন, কুমিল্লার শুভপুরের জাকির হোসেনেরে স্ত্রী লিজা আক্তার ফুফি, সুজানগরের মাইনুদ্দিনের স্ত্রী মনি বেগম। আহত তিন র‌্যাব সদস্য বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here