শনিবার বিকালে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার উদ্দেশে একটি অভিনন্দনপত্র পড়ে শোনান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
এর আগে সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় কণ্ঠশিল্পী ও সংসদ সদস্য মমতাজের গান এবং নৃত্যশিল্পী সাদিয়া ইসলাম মৌ’র নির্দেশনায় নৃত্যনাট্যেও ছিল শেখ হাসিনার
নেতৃত্বের প্রশস্তি।
এরপর বক্তৃতা দিতে দাঁড়িয়ে শুরুতেই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গান উদ্ধৃত করে শেখ হাসিনা বলেন, “এ মণিহার আমায় নাহি সাজে..।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আখতারুজ্জামান
তিনি বলেন, “আমার সংবর্ধনার প্রয়োজন নেই। জনগণ কতটুকু পেল, সেটাই আমার কাছে সব থেকে বিবেচ্য বিষয়। এর বাইরে আমার আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।”
বাবার স্বপ্ন বাস্তবায়নে নিজের পথচলার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, বাসস্থান পায়, শিক্ষা পায়, উন্নত জীবন পায়- জাতির পিতার সেই স্বপ্ন পূরণ করাই আমার লক্ষ্য।”
“এই সংবর্ধনা আমি উৎসর্গ করছি বাংলার জনগণকে, বাংলার মানুষকে,” বলেন শেখ হাসিনা।
“আমার সৌভাগ্য জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা হিসাবে জন্ম নিতে পেরেছি। অন্তত আমি জানি, বেহেশত থেকে তিনি দেখবেন তার দেশের মানুষ ভালো আছে। তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। ছবি: আখতারুজ্জামান
শেখ হাসিনা তার এক ঘণ্টার বক্তৃতার শুরুর দিকে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে দেশ পুনর্গঠনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডের পর ‘কঠিন পরিস্থিতির’ মধ্য দিয়ে চলা ও দল গোছানো এবং বাংলার মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনার কথা তুলে ধরেন তিনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। তার কয়েক বছর পর শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তাকে দলের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
এরপর ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রতিকূল অবস্থায় বিরূপ আবহাওয়ায় দেশে ফেরার কথা মনে করে বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার দুঃখের সাথে প্রকৃতিও যেন অঝোর ধারায় ঝরছিল।
“সকলের আপনজন হারানোর বিচার চাইতে পারে, মামলা করতে পারে। আমার সে অধিকারও ছিল না।”
নিজের জীবনের ওপর বারবার হামলার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “মৃত্যু যখন আসার, তা আসবেই। কিন্তু, মৃত্যুর আগে আমি মরতে চাই না।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের জীবনমানের উন্নয়নই তার জীবনের মূল লক্ষ্য।
“আমি শুধু পাঁচ ঘণ্টা ঘুমাই। এছাড়া আমার প্রতিটি মুহুর্ত দেশের মানুষের জন্য, জনগণের জন্য কাজ করি। কোনো উৎসবে যাই না। আমি স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।
“আমার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। শুধু একটি জিনিস দেখতে চাই। বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে উঠেছে।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের একাংশ। ছবি: আখতারুজ্জামান
নির্বাচনের বছর রাজধানীতে এই সমাবেশে আওয়ামী লীগবিরোধী রাজনীতিকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “নৌকা ঠেকাবেন কেন? নৌকা ঠেকিয়ে কি রাজাকার, যুদ্ধাপরাধীদের আবার ক্ষমতায় আনবেন? যারা নৌকা ঠেকাতে চায়; তাদের কাছে এই প্রশ্ন আমার।”
তিনি বলেন, “দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলুক; সেটা আরা কখনও বরদাশত করব না।”
বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামের জনগণকে নগরের সুবিধা নিশ্চিত করার ঘোষণা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম হবে উন্নয়নের জায়গা। প্রতিটি গ্রামের মানুষ পাবে নাগরিক সুবিধা; ঠিক শহরের মানুষ যে সুবিধা পায়।”
উন্নত যোগোযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার কথাও বলেন শেখ হাসিনা।
মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার কথাও উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “জঙ্গিবাদ নির্মূলে অনেক সাফল্য অর্জন করেছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। মাদকের প্রভাব থেকে যুব সমাজকে মুক্ত করতে হবে।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
বিকালে এই অনুষ্ঠান হলেও এতে যোগ দিতে দুপুর থেকে বৃষ্টি উপেক্ষা করে জড়ো হতে থাকেন ক্ষমতাসীন দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: আখতারুজ্জামান
বেলা সাড়ে ৩টার সময় অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় স্লোগানে স্লোগানে তাকে স্বাগত জানান নেতা-কর্মী-সমর্থকরা।
রং-বেরংয়ের টুপি ও টি-শার্ট পরে এই সমাবেশে অংশ নেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। ঢাক-ঢোল বাজিয়ে মিছিল নিয়ে আসেন অনেকে।
ইংরেজি বর্ণ ‘এল’ আকৃতির বিশাল মঞ্চের সামনে ২০ হাজার চেয়ার বসানো হয়। তবে তাতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেকেই বসেন বাইরে।
ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশপথে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা
মৎস্য ভবন থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনার ভিআইপি গেইট পর্যন্ত ৪০টি তোরণ তৈরি করা হয় এই অনুষ্ঠান ঘিরে। তোরণগুলো ছিল প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও উন্নয়নের ছবি দিয়ে সাজানো।
এছাড়া উদ্যানের মঞ্চের সামনের দিকে পশ্চিমপাশে করা হয় চিত্র প্রদর্শনী। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন অর্জনসহ শেখ হাসিনার অসংখ্য ছবি আঁকা ছিল।