দিনাজপুরঃ

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক ছয়জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২২ জনকে কারাগারে প্রেরণ করেছেন আদালত।

বুধবার মামলার নির্ধারিত তারিখে ওই ২২ জন কর্মকর্তা দিনাজপুরের স্পেশাল জজ মো. মাহমুদুল করীমের আদালতে হাজির হলে আদালত তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

এ কথা নিশ্চিত করে দিনাজপুরের কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. ইরাফিল জানান,এর আগে তারা আদালত থেকে জামিনে ছিলেন। তিনি জানান,বুধবার এ মামলায় আদালতে দায়েরকৃত চার্জশিটের শুনানির দিন নির্ধারিত ছিল। তবে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি,শুনানির জন্য পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেছেন আদালত।

যাদের জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে তারা হলেন- বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির সাবেক এমডি মো. আবদুল আজিজ খান, প্রকৌশলী খুরশীদুল হাসান, প্রকৌশলী কামরুজ্জামান, মো. আমিনুজ্জামান, প্রকৌশলী এসএম নুরুল আওরঙ্গজেব ও সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমেদ, সাবেক জিএম (প্রশাসন) মো. শরিফুল আলম, মো. আবুল কাসেম প্রধানীয়া, আবু তাহের মো. নুর-উজ-জামান চৌধুরী (মাইন অপারেশন বিভাগ), নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার মাসুদুর রহমান হাওলাদার, মো. আরিফুর রহমান (ম্যানেজার, মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন), নিরাপত্তা বিভাগের ম্যানেজার সৈয়দ ইমাম হাসান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মুহাম্মদ খলিলুর রহমান,মেইন্টেন্যান্স অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের ডিজিএম মো. মোর্শেদুজ্জামান,প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মো. হাবিবুর রহমান, মাইন ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ডিজিএম মো. জাহেদুর রহমান, ভেন্টিলেশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক ডিজিএম সত্যেন্দ্রনাথ বর্মণ ও মো. মনিরুজ্জামান, কোল হ্যান্ডলিং ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার মো. শোয়েবুর রহমান, স্টোর ডিপার্টমেন্টের ডিজিএম একেএম খালেদুল ইসলাম, প্রোডাকশন ম্যানেজমেন্টের ম্যানেজার অশোক কুমার হালদার ও মাইন প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডিজিএম মো. জোবায়ের আলী।

এর আগে গত বছরের ২৪ জুলাই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামসুল আলমের পক্ষে দুদক দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবু হেনা আশিকুর রহমান আদালতে সাবেক ৭ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ (এমডি) ২৩ জনকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন এবং আদালত গত বছরের ১৫ অক্টোবর চার্জশিট আমলে নেন। এদের মধ্যে সাবেক এমডি মো. মাহবুবুর রহমান মারা যাওয়ায় বর্তমানে এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ২২ জন।

চার্জশিটে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত (মেয়াদে) বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ঘাটতিকৃত ১ লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭.৯৯ মেট্রিক টন কয়লা আত্মসাতে জড়িত। যার বাজার মূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮২ হাজার ৫০১ টাকা। আসামিরা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ার ঘটনায় ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির পক্ষে ম্যানেজার (প্রশাসন) মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ১৯ জনকে আসামি করে পার্বতীপুর মডেল থানায় মামলা করেছিলেন। ওই মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় দুদককে। দুদকের উপ-পরিচালক মো. সামসুল আলম এ তদন্ত শেষে চাজশিট তৈরি করেন।

চার্জশিটে এজাহারভুক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৪ জনকে আসামি করা হয়। এছাড়া তদন্তে নতুন করে ৭ জন সাবেক এমডিসহ ৯ জনের নাম বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে চার্জশিটে ২৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। কিন্তু একজন সাবেক এমডি মারা যাওয়ায় তাকে বাদ দিয়ে বর্তমানে এ মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি ২২ জন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here