বিশেষ প্রতিনিধিঃ

আবাসিক হোটেল, তবে সেখানে রান্না হয়না। তবুও খাবার বিল ৯৬ হাজার টাকা। বোর্ডার রেজিস্ট্রার আছে কিন্তু সেখানে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেেেক্সর কোন চিকিৎসক বা নার্স থাকেননি। আবাসিক হোটেলের বিল ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা। সেইসাথে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিল ৬৬ হাজার টাকা। ঘটনাটি রীতিমত চক্ষুচরখ গাছে।

করোনা ভাইরাসকালীন সময়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা হোটেলে না থেকেও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা ও হোটেলে খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য বিভাগে হৈচৈ পড়ে গেছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা) এই টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এ ভাবে করোনা প্রণোদনোর ৩ লাখ টাকা হরিলুট হয়েছে।

তবে ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা) এ তথ্য অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি সঠিক ভাবেই প্রণোদনার অর্থ ব্যয় করেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, গত জুলাই মাসের ৫ তারিখে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন স্বাক্ষরিত পরিচালক (অর্থ), স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো স্বারক নং- উঃজেঃস্বঃকমঃ/কালীঃ/ঝিনাইঃ/২০২০/৪৭৯ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত জুন মাসের ৬ তারিখ থেকে ৬ জন চিকিৎসক, নার্স ৬ জন ও অন্যান্য ১২ জন স্টাফ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের রহমানিয়া আবাসিক হোটেলে থাকা বাবদ ৫৭ হাজার ৬০০ এবং খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসের ১ তারিখ থেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৬৬ হাজার টাকা খরচের কথা বলা হয়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালীগঞ্জ রহমানিয়া হোটেলের বোর্ডার রেজিস্ট্রার খাতায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ২ জন, মে মাসে ১ জন, জুন মাসে ১৫ জন, জুলাই মাসে ১৪ জন, আগস্ট মাসে ২৯ জন অবস্থান করেছেন। কিন্তু উক্ত মাসগুলোতে থাকা বোর্ডার রেজিস্ট্রারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন চিকিৎসক, নার্স ও কোন কর্মচারীর নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এছাড়াও রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না।

কালীগঞ্জ রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন ডাক্তার, নার্স থাকেনি। রেজিস্ট্রার খাতায় যাদের নাম আছে তারাই ছিলেন। এর বাইরে কেউ ছিলেন না। রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না।

কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাঝহারুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই তিনি কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কখনো হোটেলে থাকেননি। এখনো পর্যন্ত সরকারের কোন প্রণোদনা তিনি পাননি। তিনি কোভিড-১৯ এ দায়িত্ব পালনের সময় হাসপাতালের ডরমেটরীতে ছিলেন।

আরেক চিকিৎসক আর্জুবান নেছা বলেন, তিনিও কোভিড-১৯ এ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত। বিভিন্ন সময়ে তিনি হোটেলে থেকেছেন। কিন্তু তারিখ বা কোন মাসে থেকেছেন সেটা তিনি জানাতে পারেননি এবং তিনি এখনো কোন প্রণোদনার টাকা পাননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোভিড-১৯ এ নিয়োজিত হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে সকল কাজ তাদের সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত কোন প্রণোদনা তারা পাননি।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন বলেন, হোটেলে থাকা নিয়ে রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার উনি কেন এমন বলেছেন আমি জানিনা। তিনি দাবি করেন, ডাক্তাররা রোস্টার ডিউটি করেছে। ওই সময় তারা হোটেলটিতে ছিলেন।

ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছি। এ বিষয়ে খোজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

বিষয়টি নিয়ে খুলনা বিভাগী স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ রাশেদা সুলতানা জানান, এমনটি তো হওয়ার কথা নয়। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here