ঢাকা ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলকাতায় ২ বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় নতুন মোড়, ক্ষোভ ঝাড়লেন মমতা

Reporter Name

সবুজদেশ ডেস্কঃ

চোখের ডাক্তার দেখাতে গিয়ে কলকাতা থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন মঈনুল ও তানিয়া নামে দুই বাংলাদেশি। শুক্রবার মধ্যরাতে কলকাতার লাউডন স্ট্রিটের কাছে গাড়িচাপায় মৃত্যু হয় তাদের।

রোববার (১৮ আগস্ট) বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে স্বজনদের কাছে তাদের মরদেহ হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ।

শুক্রবার গভীর রাতে একটি পুলিশ পোস্টে আশ্রয় নেয়া মঈনুল ও তানিয়াকে চাপা দিয়ে চলে যায় তীব্র গতিতে ছুটে চলা একটি জাগুয়ার। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

তীব্র গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আরসালান পারভেজ নামে এক শিল্পপতির ছেলেকে।

কিন্তু সে ঘটনার পাঁচ দিন যেতে না যেতেই ভিন্ন বার্তা জানাল কলকাতা পুলিশ। বলতে গেলে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে তদন্তের মোড়।

ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ জানাচ্ছে, গ্রেফতার সেই আরসালান পারভেজ দুর্ঘটনার রাতে নাকি গাড়িতেই ছিলেন না। সে রাতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তার বড় ভাই রাঘিব পারভেজ।

সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় বাড়ির গ্যারেজ থেকে ঘাতক জাগুয়ারটি বের করেন রাঘিব, আরসালান নয়। বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এটিই বলছে।

তারা আরও জানান, ওই দুর্ঘটনার পর গাড়ি থেকে নেমে তার মামা মহম্মদ হামজার সঙ্গে কথা বলেন রাঘিব। পুলিশ যখন আরসালানকে গ্রেফতার করে সেই ফাঁকে পর দিন হামজার সাহায্যে দুবাই পালিয়ে যান রাঘিব।

দুর্ঘটনাস্থলে জাগুয়ার থেকে বের হওয়া ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে আরসালানের নয়, রাঘিবের মিল পাওয়া গেছে বলে দাবি পুলিশের।

এদিকে ঘটনার মোড় এভাবে ঘুরে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গতকাল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় শহর দিঘা সফরে গিয়ে সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঘটনার তদন্তে নতুন মোড় খোলায় তিনি তদন্তকারীদের এক হাত নিয়ে বলেন, অ্যাক্সিডেন্ট করল একজন আর অন্যজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নানা চালাকি চলছে এখানে, এই তো দেখছি।

তিনি যোগ করেন, অপরাধীকে না ধরে রেহাই দিয়ে অন্য কাউকে আত্মসমর্পণ করানো বেআইনি।

এভাবেই পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতা। এ সময় বেপরোয়া গাড়ি চালানো কখনই মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে মমতা বলেন, সড়কে যারা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায়, তাদের কোনো জরিমানা নয়, সরাসরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মমতার এমন বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা কলকাতায়ও। আচমকা এমন নাটকীয় মোড় বদলে যাওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

প্রশ্ন উঠেছে- পাঁচ দিন ধরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ এখন জানল যে, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি নন, গাড়ি চালাচ্ছিলেন অন্য কেউ!

সে রাতে ঘাতক জাগুয়ার সাতবার সিগন্যাল অমান্য করেছিল তার প্রমাণ মিললেও গাড়িচালকের বিষয়টি এমন রহস্যময় ছিল পুলিশের কাছে!

সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো- দোষী না হয়েও আরসালানকে কেন পরের দিন আত্মসমর্পণ করাল তার পরিবার?

এসব প্রশ্নের নেপথ্যে কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে কিনা আপাতত সে বিষয়ে তদন্তে নেমেছেন কলকাতারা গোয়েন্দারা।

মমতার কটাক্ষ ও কলকাতাবাসীর এমন সব প্রশ্নের মুখেই বুধবার রাঘিবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুবাই থেকে ফেরার পথে বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হয়েছেন রাঘিবের মামা মহম্মদ হামজাও।

About Author Information
আপডেট সময় : ০২:৫৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০১৯
৫১৬ Time View

কলকাতায় ২ বাংলাদেশি নিহতের ঘটনায় নতুন মোড়, ক্ষোভ ঝাড়লেন মমতা

আপডেট সময় : ০২:৫৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২২ অগাস্ট ২০১৯

সবুজদেশ ডেস্কঃ

চোখের ডাক্তার দেখাতে গিয়ে কলকাতা থেকে লাশ হয়ে ফিরলেন মঈনুল ও তানিয়া নামে দুই বাংলাদেশি। শুক্রবার মধ্যরাতে কলকাতার লাউডন স্ট্রিটের কাছে গাড়িচাপায় মৃত্যু হয় তাদের।

রোববার (১৮ আগস্ট) বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে স্বজনদের কাছে তাদের মরদেহ হস্তান্তর করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ।

শুক্রবার গভীর রাতে একটি পুলিশ পোস্টে আশ্রয় নেয়া মঈনুল ও তানিয়াকে চাপা দিয়ে চলে যায় তীব্র গতিতে ছুটে চলা একটি জাগুয়ার। ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

তীব্র গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় আরসালান পারভেজ নামে এক শিল্পপতির ছেলেকে।

কিন্তু সে ঘটনার পাঁচ দিন যেতে না যেতেই ভিন্ন বার্তা জানাল কলকাতা পুলিশ। বলতে গেলে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে তদন্তের মোড়।

ঘটনার তদন্তকারী পুলিশ জানাচ্ছে, গ্রেফতার সেই আরসালান পারভেজ দুর্ঘটনার রাতে নাকি গাড়িতেই ছিলেন না। সে রাতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তার বড় ভাই রাঘিব পারভেজ।

সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন তারা।

তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় বাড়ির গ্যারেজ থেকে ঘাতক জাগুয়ারটি বের করেন রাঘিব, আরসালান নয়। বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এটিই বলছে।

তারা আরও জানান, ওই দুর্ঘটনার পর গাড়ি থেকে নেমে তার মামা মহম্মদ হামজার সঙ্গে কথা বলেন রাঘিব। পুলিশ যখন আরসালানকে গ্রেফতার করে সেই ফাঁকে পর দিন হামজার সাহায্যে দুবাই পালিয়ে যান রাঘিব।

দুর্ঘটনাস্থলে জাগুয়ার থেকে বের হওয়া ব্যক্তির চেহারার সঙ্গে আরসালানের নয়, রাঘিবের মিল পাওয়া গেছে বলে দাবি পুলিশের।

এদিকে ঘটনার মোড় এভাবে ঘুরে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

গতকাল পশ্চিমবঙ্গের উপকূলীয় শহর দিঘা সফরে গিয়ে সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকে এ বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঘটনার তদন্তে নতুন মোড় খোলায় তিনি তদন্তকারীদের এক হাত নিয়ে বলেন, অ্যাক্সিডেন্ট করল একজন আর অন্যজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নানা চালাকি চলছে এখানে, এই তো দেখছি।

তিনি যোগ করেন, অপরাধীকে না ধরে রেহাই দিয়ে অন্য কাউকে আত্মসমর্পণ করানো বেআইনি।

এভাবেই পুলিশের ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতা। এ সময় বেপরোয়া গাড়ি চালানো কখনই মেনে নেয়া হবে না জানিয়ে মমতা বলেন, সড়কে যারা বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালায়, তাদের কোনো জরিমানা নয়, সরাসরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মমতার এমন বক্তব্যে তোলপাড় শুরু হয়েছে গোটা কলকাতায়ও। আচমকা এমন নাটকীয় মোড় বদলে যাওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।

প্রশ্ন উঠেছে- পাঁচ দিন ধরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে পুলিশ এখন জানল যে, যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তিনি নন, গাড়ি চালাচ্ছিলেন অন্য কেউ!

সে রাতে ঘাতক জাগুয়ার সাতবার সিগন্যাল অমান্য করেছিল তার প্রমাণ মিললেও গাড়িচালকের বিষয়টি এমন রহস্যময় ছিল পুলিশের কাছে!

সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি হলো- দোষী না হয়েও আরসালানকে কেন পরের দিন আত্মসমর্পণ করাল তার পরিবার?

এসব প্রশ্নের নেপথ্যে কোনো ষড়যন্ত্র লুকিয়ে রয়েছে কিনা আপাতত সে বিষয়ে তদন্তে নেমেছেন কলকাতারা গোয়েন্দারা।

মমতার কটাক্ষ ও কলকাতাবাসীর এমন সব প্রশ্নের মুখেই বুধবার রাঘিবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। দুবাই থেকে ফেরার পথে বেনিয়াপুকুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার হয়েছেন রাঘিবের মামা মহম্মদ হামজাও।