কুষ্টিয়া :

ছেলেকে হারিয়ে পাগলপ্রায় বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুন। কান্না করতে করতে কখনও জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন তিনি। সন্তান হারানোর শোকে বিহ্বল এই মাকে সান্তনা দেয়ার মতো পৃথিবীতে কোনো ভাষা তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা।

স্বজনরা জানান, যদিও সব সন্তানই সব মায়ের কাছে যক্ষের ধন। তবুও আর সব সাধারণ ছেলেদের মতো ছিলেন না আবরার। ক্লাসে কখনও দ্বিতীয় হতেন না আবরার ফাহাদ। জ্ঞান অর্জনই ছিল যার লক্ষ্য উদ্দেশ্য। দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ থেকে আর কয়েক বছর পর বেরিয়েই সংসারের হাল ধরার কথা ছিল আবরারের। উজ্জ্বল ভবিষ্যত সুনিশ্চিত ছিল তার। এমন ছেলেকে হারিয়ে শোক বহুগুণ বেশি হতেই পারে।

সোমবার সকাল থেকে সারাদিন ধরেই আহাজারি চলছে নিহত আবরারের কুষ্টিয়ার বাড়িতে। বিলাপ দিতে দিতে ছেলে হারানো এই মা বলে চলেছেন, ‘আমার ছেলে কী আপরাধ করেছিল? কিসের জন্য তারা আমার ছেলেকে এভাবে হত্যা করল?’ অদৃশ্যের কাছেই প্রশ্নগুলো ছুড়ছিলেন তিনি।

কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছিলেন, ‘আমার ব্যাটা অনেক মেধাবী। আমার ব্যাটা আমাক ছেড়ে চলে গেছে। আমার ব্যাটার তো কোনো খুঁত নাই। আমার ছেলের মতো লাখে একটাও হয় না। সবার ঘরে বেটা থাকতে পারে, আমার ব্যাটার মতো বেটা ছিল না। আমার বেটা কোনো দিনও জোরে কারও সঙ্গে কথা বলে নাই। কোনো রাজনৈতিক মিছিলে যায় নাই। যেখানে রাজনীতির আলাপ করে সেইখানেও যায় নাই। আমার ব্যাটা শুধু লেখাপড়া নিয়াই থাকত।’ তবে কেন আবরারকে খুন হতে হলো বারবার জানতে চান মা রোকেয়া খাতুন।

গণমাধ্যমকর্মীদের দেখে তিনি চিৎকার দিয়ে বলেন, ‘আমি এর বিচার চাই। আমি প্রশাসনের কাছে বিচার চাই। আমার ছেলে কী অন্যায় করেছিল যে তাকে প্রাণ দিতে হলো?’ পরিকল্পিতভাবেই তার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানান আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘ আমার ছেলে তো কুষ্টিয়ায় ছিল। শনিবার বিকাল ৫টায় ঢাকায় পৌঁছালো সে। আর রাত ৮টার দিকে নির্যাতন করার জন্য ডেকে নিয়ে গেল তারা। ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালালো। এটা অবশ্যই পরিকল্পিত। আপনাদের কাছে আমি এর বিচার চাই।’

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সকাল ১০টায় গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কয়া ইউনিয়নের রায়ডাঙ্গা গোরস্থান ময়দানে আবরার ফাহাদকে সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে রায়ডাঙ্গা ঈদগাহ ময়দানে তৃতীয় দফা জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় আবরারের। সেই জানাজায় স্থানীয় কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেন।

প্রসঙ্গত ক্যাসিনো গুরু যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের গ্রেফতারের পর দেশবাসী যখন সরকারের চলমান শুদ্ধি অভিযানের ভূয়সী প্রশংসা করে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছিল তখনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করল একই বিদ্যাপীঠের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় এখন তোলাপাড় সারা দেশ। বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন লাখো কোটি নেটিজেন। ফেসবুকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তির প্রতিবাদে নিজের মত জানিয়েছিলেন আবরার ফাহাদ।

সেই স্ট্যাটাসের জেরে সোমবার (৭ অক্টোবর) রাতে তাকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করে বুয়েটের একই হলের বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। সোমবার ভোরে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির মাঝের করিডোর থেকে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এই ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থাকতেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here