বিশেষ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা ও সহকারী শিক্ষক মনোয়ার হোসেন অসীমের বিচার চান এলাকাবাসী। ১৪০ বছরের বিদ্যালয়টির সুনাম নষ্টকারীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার সচেতন মহল।

জানা গেছে, ১৮৮২ সালে স্থাপিত উপজেলার ঐতিহ্যবাহী নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি। এরপর থেকে সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছিল। এ বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে পার্শ্ববর্তী জেলা যশোরে এক মেয়ের সাথে অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের কাছে ধরা খায় সহকারী শিক্ষক মনোয়ার হোসেন অসীম। এরপর ওই শিক্ষককে মারধর করে ছেড়ে দেয় স্থানীয়রা। মারধর ও অনৈতিক কাজের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এ ঘটনায় একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেই ঘটনার বিচার হয়নি।

এরপর গত ২০ নভেম্বর ভোরে ২৫ মণ স্কুলটির বিভিন্ন শ্রেণীর সরকারি বই বিক্রি করতে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিক ও জনতার হাতে ধরা পড়েন প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা। ভোরে তিনি একটি আলমসাধুতে ২৫ মণ বই বিক্রি করেন। প্রতি মণ ১৬০০ টাকা দরে বইগুলো ক্রয় করেন ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লক্ষীপুর গ্রামের আলিম হোসেন। বই বোঝাই করে আলমসাধুটি স্কুল থেকে বের হয়ে রাস্তায় এলে স্থানীয় সাংবাদিক ও জনতা গাড়িটি আটক করে। এ সময় বইয়ের ক্রেতা আলিম হোসেন বইগুলো কেনার কথা স্বীকার করেন। পরে বইগুলো আবার স্কুলে ফেরত পাঠানো হয়। এর আগে তিনি আরও দুই গাড়ি বই বিক্রি করেছেন বলে স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে। এই দুই ঘটনার পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছে এলাকাবাসী।

বই ক্রেতা আলিম হোসেন জানান, রোববার ভোরে তিনি সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যান বইগুলো নিয়ে আসতে। এক আলমসাধুতে (স্থানীয় যান) ২৫ মণ বই ছিল। প্রতি মণ ১৬০০ টাকা দরে তিনি কিনেছেন। বিক্রির সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও নাইটগার্ড ইমান আলী ছিল। বইগুলো কিনে স্কুল থেকে বের হওয়ার সময় স্থানীয়রা আটকে দেয়।

এ ব্যাপারে স্কুলটির প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা জানান, অভিযুক্ত সরকারি নলডাঙ্গা ভূষণ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মকবুল হোসেন তোতা বই বিক্রির অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সরকারি পুরাতন বই রাখা কক্ষটি রং করার জন্য কিছু বই সহকারী শিক্ষক রেজাউল ইসলামের বাড়িতে নেওয়া হচ্ছিল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষক রেজাউল ইসলাম শহরের বনানী পাড়ায় ভাড়া বাসায় থাকেন। সেখানে বই রাখার জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই। তিনটি বেডরুমে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে বসবাস করেন। সেখানে বই

এ ব্যাপারে শিক্ষক রেজাউল ইসলাম জানান, স্কুলের সরকারি বইয়ের দায়িত্বে তিনি আছেন। কিন্তু বইগুলো বিক্রির সময় তিনি উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়া বইগুলো কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে সেটিও তিনি জানেন না।

বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিভাবক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যদি সরকারি বই চুরি করে বিক্রি ও অনৈতিক কাজে ধরা খায় তাহলে তাদের কাছ থেকে সন্তানরা কি শিখবে। সরকারের উচিৎ এসব শিক্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা। অন্যথায় স্কুলটি ধ্বংস হয়ে যাবে।

এলাকাবাসীরা জানায়, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৪০ বছরে এমন সুনাম ক্ষুন্ন হয়নি। হঠাৎ দুটি ঘটনায় খুব লজ্জায় পড়তে হয়েছে তাদের। ভবিষ্যতে যেন কোন শিক্ষক এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত না হয় সেজন্য বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা। অবিলম্বে দুই শিক্ষকের বিচারের দাবিতে কর্মসূচিও ঘোষণা করবেন তারা।

এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শেখ মনিরুল ইসলাম জানান, রং করার জন্য বইগুলো শিক্ষক রেজাউল ইসলামের বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন। কিন্তু এখনো বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। আরও দুই গাড়ি বই বিক্রির কথা তিনি শুনেছেন বলেও জানান। এছাড়া অনৈতিক কাজ করতে গিয়ে স্থানীয়দের কাছে ধরা পড়া সহকারী শিক্ষক মনোয়ার হোসেন অসীমের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here