ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ঃ এমনিতে ধানের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষক। বাধ্য হয়ে ছুটছেন অন্য চাষে। এতকিছুর পরেও ১৫ কৃষকের ২ বিঘা জমি দখল করে রাতারাতি ফসল নষ্ট করে মাটি কাটা ভেকু মেশিন দিয়ে সড়ক তৈরি করেছে প্রভাবশালীরা। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ছোট শিমলা গ্রামের।
সরেজমিনে ভুক্তভোগী কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কাউকে না জানিয়ে পুকরিয়া গ্রামের প্রভাবশালী কয়েকটা পরিবারের যাতায়াতের সুবিধার কারণে এই রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। পূর্বে এখানে কোন রাস্তায় ছিল না। সরকারিভাবে রাস্তা করার কোন বিধানই নাই। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে প্রায় ৫০০/৬০০ লোক নিয়ে সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির চৌধুরির নেতৃত্বে ছোট সিমলা গ্রামের কয়েকজন কৃষকের প্রায় ২ বিঘা জমি দখল ও গাছ-ফসল নষ্ট করে মাটি কাটা ভেকু মেশিন দিয়ে এই রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। রাস্তাটি প্রায় ৮০০ ফুট দৈর্ঘ্য। এই রাস্তা তৈরির সময় কৃষকের জমির ২০টা মেহগনি গাছ, আখক্ষেত ও মরিচ গাছ নষ্ঠ করা হয়েছে। এছাড়া অনাবাদি জমিতে মাটি কেটে বড় বড় গর্ত করা হয়েছে। এই রাস্তা তৈরিতে ছোট শিমলা গ্রামের মোমিন হোসেন, জাকির হোসেন, সিরাজ হোসেন, বিল্লাহ হোসেন, আব্দুল মান্নান, ওলিয়ার রহমান, খোকন মাষ্টার, সলেমান হোসেন, বাহার আলী, পিন্টু মেম্বর, মন্টু হোসেন, হামিদুর রহমান প্রায় ১৫জন কৃষকের জমি দখল করা হয়েছে।

ভুক্তভোগী ছোট শিমলা গ্রামের এক কৃষকের স্ত্রী সালেহা খাতুন বলেন, ঋণের টাকা দিয়ে পরের জমি লিজ নিয়ে আখ চাষ করেছি। প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতে হয়। আমার স্বামী কাজ করতে পারে না। ছোট ছেলেকে দিয়ে ভ্যান চালিয়ে খায়। আমি নিঃস্ব গরীব মানুষ। ২ মেয়ে আর এক ছেলে নিয়ে খুব কষ্ট করতে হয়। ফসল ও জমির ক্ষতি করে রাস্তা করা ঠিক হয়নি।

ভুক্তভোগী কৃষক ছোট শিমলা গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২ টার পর মাটি কাটা ভেকু মেশিন নিয়ে পুকুরিয়া গ্রামের লোকজন নিয়ে আমাদের নিজস্ব জমির উপর দিয়ে ফসল নষ্ট করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। মেহগনি গাছ, মরিচ চাষের গাছ ও আখক্ষেত নষ্ট করে তারা রাস্তা করেছে। রাস্তা করার ব্যাপারে আমরা কিছু জানি না। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বা মেম্বর কেউ আমাদের এ ব্যাপারে জানায়নি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এই রাস্তা করেছে। চেয়ারম্যান না থাকলে এই রাস্তা করার সাহস তারা কিভাবে পেল।

এ ব্যাপারে ৫নং শিমলা রোকনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাসির চৌধুরী বলেন, আমি উপস্থিত ছিলাম না। ঘটনাটি আমি শুনে সকালে দেখতে গিয়েছিলাম। পুকুরিয়া উত্তরপাড়ার লোকের যাতায়াতের সুবিধার্থে রাস্তাটি করেছে। এই রাস্তা ইউনিয়ন পরিষদের না।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রানী সাহা বলেন, এ ব্যাপারে আমি অভিযোগ পেলে তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here