ঢাকা ০৯:০০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ

  • সবুজদেশ ডেস্ক:
  • Update Time : ০১:৩৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫
  • ১৮৪ বার পড়া হয়েছে।

 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এস কে শরীফুল আলম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এখন তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরও যখন বিষয়টা সুরাহা হচ্ছিল না, তখন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। এরপর তারা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী এ পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠানো হবে। তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে তা কার্যকর হবে।

এর আগে রাত ১টার দিকে এক দফা দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে আমরণ অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (ইউজিসি) অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান। অনশন ভাঙানোর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি বার্তা শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান তিনি।

এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই বার্তা পাওয়ার পর ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার অঞ্চলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। সেখান থেকে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এ খবরে আনন্দ মিছিল করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও।

গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে যান। সেখানে তিনি অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা সেই অনুরোধ না রেখে তাঁদের দাবিতে অনড় থাকেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। কুয়েট ভিসিকে অপসারণের দাবিতে গতকাল দিনভর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে শিক্ষক সমিতি। চাপ দিয়ে উপাচার্যের অপসারণ করা হলে মেনে নেবেন না বলে জানান শিক্ষকেরা। বুধবার দুপুরে ইউজিসির গঠন করা কমিটির ৩ সদস্যের দলও কুয়েটে আসেন। তারা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলেন।

বুধবার দুপুরে কুয়েটে সিন্ডিকেট সভা বসে। গত ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার বিকেল থেকে ছাত্রদের ৬টি ও ছাত্রীদের ১টি হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। সভায় আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু করার আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

গত ২১ এপ্রিল পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী কুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৩২ জন আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকেল ৩টায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্বদিকে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন। অনশনরত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।

এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

এর মধ্যে কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন। আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে, আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গত ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন।

সবুজদেশ/এসইউ

কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের পদত্যাগ

Update Time : ০১:৩৭:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৫

 

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেছেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক এস কে শরীফুল আলম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, বুধবার (২৩ এপ্রিল) রাতে তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন। এখন তাদের পদত্যাগপত্র গৃহীত হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।

ওই কর্মকর্তা বলেন, “সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার পরও যখন বিষয়টা সুরাহা হচ্ছিল না, তখন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে বিষয়টি বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়। এরপর তারা পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।

নিয়ম অনুযায়ী এ পদত্যাগপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির দপ্তরে পাঠানো হবে। তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করলে তা কার্যকর হবে।

এর আগে রাত ১টার দিকে এক দফা দাবিতে অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস পান করিয়ে আমরণ অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য (ইউজিসি) অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান। অনশন ভাঙানোর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো একটি বার্তা শিক্ষার্থীদের পড়ে শোনান তিনি।

এ সংক্রান্ত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হবে।

এতে আরো উল্লেখ করা হয়, অন্তর্বর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ওই বার্তা পাওয়ার পর ক্যাম্পাসের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টার অঞ্চলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উল্লাসে ফেটে পড়েন। সেখান থেকে আনন্দ মিছিল বের করা হয়। এ খবরে আনন্দ মিছিল করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও।

গতকাল বুধবার সকাল পৌনে ১০টার দিকে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার কুয়েট ক্যাম্পাসে যান। সেখানে তিনি অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। অনশন ভাঙতে অনুরোধ করেন তিনি। তবে শিক্ষার্থীরা সেই অনুরোধ না রেখে তাঁদের দাবিতে অনড় থাকেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। কুয়েট ভিসিকে অপসারণের দাবিতে গতকাল দিনভর দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল, অনশনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, বুধবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাকক্ষে প্রেস ব্রিফিং করে শিক্ষক সমিতি। চাপ দিয়ে উপাচার্যের অপসারণ করা হলে মেনে নেবেন না বলে জানান শিক্ষকেরা। বুধবার দুপুরে ইউজিসির গঠন করা কমিটির ৩ সদস্যের দলও কুয়েটে আসেন। তারা বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলাদা আলাদা কথা বলেন।

বুধবার দুপুরে কুয়েটে সিন্ডিকেট সভা বসে। গত ১৪ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বুধবার বিকেল থেকে ছাত্রদের ৬টি ও ছাত্রীদের ১টি হল আনুষ্ঠানিকভাবে খুলে দেওয়া হয়। সভায় আগামী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরু করার আগের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়।

গত ২১ এপ্রিল পূর্বনির্ধারিত ঘোষণা অনুযায়ী কুয়েটে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে ৩২ জন আমরণ অনশন শুরু করেন। বিকেল ৩টায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার সেন্টারের বারান্দার পূর্বদিকে অবস্থান নেন। এরপর সেখানে বিভিন্ন বিভাগের ৩২ জন শিক্ষার্থী আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন শুরু করেন। অনশনরত ৩২ শিক্ষার্থীর মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে ১৮ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। রাতে খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাত পরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সব রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনকে লাল কার্ড দেখান শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীরা খুলনা থেকে ঢাকায় এসে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন। এতে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার, উপাচার্যের পদত্যাগসহ ছয় দফা দাবি জানানো হয়।

এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের ৯৯তম (জরুরি) সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে সব শিক্ষার্থীকে হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় প্রকৃত দোষী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করাসহ পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য গঠিত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়।

এর মধ্যে কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোসেন আলী নামের এক ব্যক্তি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন। আবাসিক হলগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে শিক্ষার্থীরা ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিলে, আন্দোলন আবারও দানা বাঁধতে থাকে।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্তের কথা জানায় কর্তৃপক্ষ। সেই সঙ্গে আগামী ২ মে থেকে সব আবাসিক হল শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া ও ৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গত ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবির ঘোষণা দেন। ঘোষণার পর আন্দোলনকারীরা কুয়েটের ছেলেদের ছয়টি হলের তালা ভেঙে হলগুলোতে অবস্থান নেন।

সবুজদেশ/এসইউ