কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) : মেরুদন্ডহীন প্রাণী কেঁচো আজ কলেজ পড়ুয়া সাকিলের মেরুদন্ড সোজা করতে সহযোগিতা করছে। পড়াশোনার পাশাপাশি সাকিল কেঁচো আর কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করে নিজেই স্বাবলম্বী। কৃষি ইনস্টিটিউটে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে পিতার সংসারে আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করছেন তিনি। প্রতি মাসের সাকিলের কম্পোষ্ট সার উৎপাদন কারখানা থেকে ২ হাজার কেজির বেশি উন্নত মাসের কেচো ও কম্পোষ্ট সার উৎপাদিত হচ্ছে। খরচ বাদে তার মাসিক আয় প্রায় ১৫ হাজার টাকা। কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছেন আরো ২ জনের। তার উৎপাদিত সার চলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। উন্নত মানের এই কম্পোষ্ট সার ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন ছাদ বাগানে। সাকিল হোসেন কালীগঞ্জ পৌরসভার চাপলি গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে। ঝিনাইদহ-খুলনা মহাসড়কের নীমতলা ব্রীজের পাশেই সাকিলের কম্পোষ্ট সার বিক্্রয় কেন্দ্র। সরেজমিন সাকিলের কারখানায় গিয়ে কথা হয়। সাকিল জানান, তার পিতা একজন গরীব মানুষ। চায়ের দোকান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চলে। তিনি পড়াশোনা করছেন ঝিনাইদহ সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এগ্রিকালচার ৭ম সেমিস্টারে।তার বাবা ঠিকমতো পড়াশোনার খরচ দিতে না পারায় তার নিজ উদ্যোগে কিছু করার আগ্রহ জাগে। এর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের দিকে গড়ে তোলেন কম্পোষ্ট কারখানা। পড়াশোনার পাশাপশি তিনি নিজে হাতেই সব কাজ করেন। কেচো লালন পালন, গোবর সংগ্রহ, হাউজ বা চাড়িতে দেওয়া, কম্পোষ্ট সার তৈরির পর সেগুলো সংগ্রহ করা, সার প্যাকেজিং এবং বাজারজাত করন করা।সসাকিল হোসেন জানান, বর্তমানে তার কারখানায় ১০টি বড় হাউজ রয়েছে। এছাড়াও শতাধিক মাটির চাড়িতে এই কম্পোষ্ট সার উৎপাদন করেন। প্রতি মাসে ২০০০ কেজি সার উৎপাদন করেন শাকিল। প্রতি কেজি সার ১৫ টাকা দামে বিক্রি করেন। তার উৎপাদিত সার তিনি অনলাইন ( ফেসবুক গ্রুপের ) মাধ্যমে বিক্রি করেন। তার গ্রুপের নাম ডিজিটাল ছাদ বাগান ও সখের ছাদ বাগান গ্রুপ। ক্রেতারা এই গ্রুপের মাধ্যমে তার কাছে কম্পোষ্ট সারের অর্ডার দেন। এরপর তিনি ৫ কেজি কিংবা ১০ কেজির প্যাকেট তৈরি করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করে থাকেন। তিনি আরো জানান, তিনি কেচো আর কম্পোষ্ট সারের পাশাপাশি নারিকেলের কেকোডাস্ট প্যাকেট করে বাজারজাত করেন। একই সাথে তিনি কম্পোষ্ট, কেকোডাস্ট ও মাটি মিশ্রিত করে রেডি মাটি তৈরি করে প্যাকেট জাত করে বিক্রি করেন। প্রতি কেজি কেকোডাস্ট বিক্রি করেন ২০ টাকা আর রেডি মাটি ১৫ টাকা কেজি।সাকিল হোসেন শুরু করেন মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে । বর্তমানে তার কাছে আছে ১০০ কেজি কেচো। যার আনুমানিক মুল্য প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তার এই উদ্যোগ দেখে এগিয়ে এসেছে উপজেলা কৃষি অফিস। সাকিল হোসেন বলেন, তার কারখানায় ২ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছি। প্রতিদিন ৩০০ টাকা হাজিরায় কাজ করেন। তার প্রতি মাসে সব খরচ খরচা বাদ দিয়ে ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা আয় থাকছে। পড়াশোনা শেষ করে তিনি বড় কারখানা তৈরি করবেন বলে আশা করছেন। কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার জাহিদুল করিম জানান, কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিটের ছাত্র সাকিলের উদ্যোগ দেখে কৃষি অফিস তাকে বড় ধরনের উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য তাকে একটি প্রদর্শনী প্লট তৈরি করে দিয়েছে। সাকিলকে ১০ কেজি কেঁচো এবং পাকা ১০টি চেম্বার তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। যেখান থেকে সাকিল প্রতি মাসে ১০০০ কেজি সার উৎপাদন করতে পারছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here