কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাচনে আ.লীগে বিভক্তির সুযোগ নিতে পারে বিএনপি
ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৪ অক্টোবর। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের শেষ ধাপে এ উপজেলার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ক্ষমতায় থাকা দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ৮ সেপ্টেম্বর দলটির হাইকমান্ড উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রার্থী ঘোষণা করে। এদিন কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শরিফুন্নেছা মিকিকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। মিকিকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান আলীর সমর্থকরা শহরে বিক্ষোভ করেন। তারা শরিফুন্নেছা মিকির মনোনয়ন বাতিল করে শাহজাহান আলীকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার দাবি জানান।
দলীয় সূত্র জানায়, এরপর থেকে স্থানীয়ভাবে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে দলের সাধারণ সম্পাদক শাহাজাহান আলী স্বতন্ত্র বা ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ক্রয় ও দাখিল করেছেন। ১৫ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন যাচাই-বাছাই শেষে মিকি ও শাহাজাহান দুইজনই বৈধ প্রার্থী হিসেবে টিকে গেছেন।
১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলার আওয়ামী লীগের মধ্যে এর আগে বড় ধরনের কোনো কোন্দল ছিল না। এবারই প্রথম উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে শক্ত দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়েছে দলটি। দুই অংশই ইতিমধ্যে ভোটের মাঠে নেমেছে পড়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াতের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ উপজেলায় শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কী করবে তা দেখতে ২২ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত অপেক্ষ করতে হবে।
দলীয় বিভক্তিতে তৃণমূলের সাধারণ কর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেক নেতা-কর্মীকে হতাশা প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। তবে দলের জেলা ও উপজেলা নেতাদের আশা খুব দ্রæতই অভ্যন্তরীণ এ কোন্দলের সমাপ্তি ঘটবে।
ইতিমধ্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এ দুই নেতা বড় ধরনের শোডাউন করে তাদের নিজ নিজ অস্তিত্ব জানান দিয়েছেন।
অপরদিকে, এই উপজেলা থেকে বিএনপি দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রভাষক আব্দুর রাজ্জাক ভোটের মাঠে নেমেছেন। এ উপজেলায় বিএনপির ভোটার সংখ্যা বরাবরই বেশি। ফলে ক্ষমতাসীন এ দলটির কোন্দলের সুযোগ নিতে পারে কোণঠাসা বিএনপির প্রার্থী- এমন ধারণা সাধারণ ভোটারদের।
অপরদিকে, ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাঠে রয়েছেন দশজন। এরমধ্যে ছয়জনই আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থক। এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তিন নারী প্রার্থী।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া শরিফুন্নেছা মিকির প্রয়াত স্বামী নাসির উদ্দীন কালু কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নাসির উদ্দীন কালু নির্বাচিত হন। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এরপর থেকে তার স্ত্রী শরিফুন্নেছা মিকি এ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এর আগে একবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোট করে পরাজিত হন মিকি।
অপর প্রার্থী শাহজাহান আলী একজন ব্যবসায়ী হলেও দীর্ঘদিন ধরে কোটচাঁদপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু এবারই প্রথম তিনি ভোটের মাঠে নেমেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন নাকি দলের নির্দেশ অমান্য করে ভোটের মাঠে থাকবেন, তা দেখার অপেক্ষায় এই উপজেলা মানুষ।
শাহজাহান আলীর ভাষ্য, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় ডেলিগেটস ভোটে আমি ৫০ ভোট পেয়েছি। যাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তিনি মাত্র দুই ভোট পেয়েছেন। আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। দল অনেক সময় মনোনয়ন দিলেও পরিবর্তন করে। যে কারণে আমি প্রত্যহারের দিন পর্যন্ত চেষ্টা করবো। দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে নির্বাচন করবো।’ দল মনোনয়ন না দিলে নির্বাচনের মাঠে থাকবেন কি-না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২২ সেপ্টেম্বর প্রত্যাহারের পর সেটা দেখতে পাবেন।’
শরিফুন্নেছা মিকি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। প্রত্যাহার করলে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করবেন। আমি নৌকার বাইরে যাবো না। আমি এত বড় নেতা হইনি যে, দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করবো। আমার পরিবার ১৯৬৬ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সাথে জড়িত। দল যে সিদ্ধান্ত দেবে তা মেনে নেব।