খুলনাঃ

আবর্জনা থেকে বিদ্যুৎ তৈরি, কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সুন্দরবনের কাছে পর্যটন রিসোর্ট, গাজীপুরে ফিল্মসিটি, আধুনিক বিজ্ঞান যাদুঘর, কেডিএ নিউমার্কেটের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ আধুনিকায়নে বিশ্বমানের চিন্তার প্রয়াস

কক্সবাজারে ভবিষ্যতে নির্মিতব্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য যে স্থাপত্য নকশাটি করেছে নবীন স্থপতি আব্দুল্লাহ আল নোমান তাতে সাড়ে তিন মিনিটে একটি বিমান উড়াল দিতে পারবে, ৯হাজার মিটার রানওয়ে আর আধুনিক টার্মিনাল, পর্কিং ও অপারেশনাল সকল সুবিধা রাখা হয়েছে যাতে বিদেশি পর্যটক আকর্ষণ করে, তারা নয়নাভিরাম বিশ্বের দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত দেখতে এসে একই সাথে নৈস্বর্গিক শোভা আর বিশ্বমানের একটি বিমানবন্দরও দেখতে পায়।

চিংড়ির পোনা পরিবহনসহ কার্গোবিমানের জন্যও রাখা হয়েছে সুবিধ। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক রুটের আওতায় আসায় এখানে একদিকে বিদেশি পর্যটক, আর অপরদিকে যাত্রাবিরতিতে হয়ে উঠবে ব্যস্ততম। এর মাধ্যমেই আয় বাড়বে দেশের এমন সম্ভাবনা মাথায় রেখে নবীন স্থপতির হাতেই ৬২০ একর জমিজুড়ে তৈরি হয়েছে স্থাপত্য নকশাটি।

জুরি বোর্ডের সামনে উপস্থাপন এবং তা একাডেমিক অনুমোদন লাভের পর এখন দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। একইভাবে নবীন স্থপতি মিজানুর রহমান পারভেজের নকশায় সমাধানের পথ বাতলে দেওয়া হয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দৈনন্দিন বর্জব্যবস্থাপনার কৌশল। তার স্থাপত্য নকশায় মাতুইলে বর্তমান ১০৫ একরের ডাম্পিং ইয়ার্ডের পাশে ৮১ একর জমির ওপর প্রতিদিনকার ৫৫০০ টন বর্জের ব্যবস্থাপনাই কেবল নয়, তা থেকে প্রতিদিন ২০ মেগওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে ৩০ হাজার পবিারের চাহিদা পূরণ সম্ভব হবে। একই সাথে বর্জপ্লাস্টিক ব্যবহারসহ বহুমুখী কৌশল দেখানো হয়েছে যা খুবই জরুরী। এছাড়া ঢাকায় বিশ্বমানের আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে বিজ্ঞানপ্রযুক্তি যদুঘরের নকশা তৈরি করেছেন নবীনস্থপতি আল-আমিন, আর গাড়ি সংযোজন নয়, এখন যাতে দেশেই গাড়ি তৈরি করা যায় এজন্য ৫৫ একর জমি জুড়ে আধুনিক গাড়ি তৈরির কারখানার স্থাপত্য-নকশা করেছেন নবীন স্থপতি সৌরভ জামান, যেখানে পাজেরা, ল্যান্সারের মতো গাড়িও তৈরি করা যাবে। এমনভাবে গাজীপুরে আধুনিক ফিল্মসিটির স্থাপত্য নকশা করেছেন মুনিয়া তামিম। একেবারে খুলনার কথা ধরা হলে এখানেও বেশকিছু বিষয়ে আধুনিকমানের স্থাপত্য নকশা করা হয়েছে।

এর মধ্যে কেডিএ নিউমার্কেটকে আধুনিক একটি কমপ্লেক্স তৈরি, মংলার কাছে সুন্দরবনের পর্যটনসুবিধা সম্বলিত রিসোর্টের নকশা তৈরি করেছেন সদ্য স্থাপত্য ডিগ্রি অর্জনকারী নোভা ফারহানা। এমন নানা ভাবনার ও বৈশিষ্ট্যের ৩৭টি স্থাপত্য নকশা প্রদর্শিত হলো কেইউ-ডিগ্রিশোতে।

আজ ২৩ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. সত্যেন্দ্র নাথ বসু একাডেমিক ভবনের স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের উঠানে আর্ক কেইউ ডিগ্রি শো অনুষ্ঠিত হয়। স্থাপত্য ডিসিপ্লিন প্রধান প্রফেসর ড. খন্দকার মাহফুজ-উদ-দারাইন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে আর্ক কেইউ শো এর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর সাধন রঞ্জন ঘোষ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য কর্ম অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনেক আগেই সামনের দিকে এগিয়ে রয়েছে। নবীন স্থপতিদের স্থাপত্যকর্মে নতুন নতুন চিন্তা, ভাবনা ও উদ্ভাবনার সংশ্লেষ রয়েছে। তিনি আরও বলেন সব দেশের স্থাপত্যকর্ম এক রকম হয় না। স্থাপত্য হয় সেই দেশের জলবায়ু ও মাটির গুণাগুণের অবস্থার উপর। নবীন স্থপতিরা ভবিষ্যতে বিশ্বের সামনে নতুন এক নান্দনিক বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের সহযোগী অধ্যাপক এ টি এম মাসুদ রেজা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্থাপত্য ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী রিফাত বিন আলী ও ফাদিয়া বিনতে শহীদুল্লাহ।

এসময় আইন স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ ওয়ালিউল হাসানাত, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. মোঃ সারওয়ার জাহান, উডটেক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানীর ম্যানেজিং ডিরেক্টর আমিনুর রহমান সুমন, বিভিন্ন ডিসিপ্লিন প্রধান ও সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনের শিক্ষক, শিক্ষার্থীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। পরে প্রধান অতিথিসহ অতিথিবৃন্দ আর্ক কেইউ ডিগ্রি শো-২০২০ তে প্রদর্শীত নবীন ৩৭ জন স্থপতির থিসিস ভিত্তিক বিভিন্ন স্থাপত্য কর্মের মডেল ঘুরে দেখেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here