সবুজদেশ ডেস্ক :
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে মেরে হল থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিন। একাজ করার জন্য দুইদিন সময়ও বেধে দিয়েছিলেন।
কিন্তু ৪৮ ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন হয়নি, যেদিন (৫ অক্টোবর) নির্দেশ দেওয়া হয়, তারপরের রাতেই নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রকে।
‘এসবিএইচএসএল ১৬+১৭’ নামে একটি ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপে আবরারকে মেরে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়ে কথোপকথনের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
বুয়েটের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে শেরে বাংলা হলের ১৬ ও ১৭ তম ব্যাচের যোগাযোগের জন্য এই মেসেঞ্জার গ্রুপটি ব্যবহার করা হতো।
আবরারকে মেরে বের করে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া কথোপকথনগুলোর স্ক্রিনশট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৫ অক্টোবর দুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদি হাসান রবিন ১৬তম ব্যাচের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে লিখেন- ‘১৭’র আবরার ফাহাদকে মেরে হল থেকে বের করে দিবি দ্রুত। এর আগেও তোদের বলছিলাম, তোদের তো দেখি কোনো বিকারই নাই। শিবির চেক দিতে বলেছিলাম।’
জবাবে কেউ একজন লেখেন- ওকে ভাই। তখন মেহেদি হাসান রবিন লেখেন- দুই দিন টাইম দিলাম।
জবাবে ১৬তম ব্যাচের মনিরুজ্জামান মনির লিখেন- ওকে ভাই।
এরপর রবিন লিখেন- ‘দরকারে ১৬ ব্যাচের মিজানের সাথে কথা বল। ও আরও কিছু ইনফো দিবে শিবির ইনভলমেন্টের ব্যাপারে।’
উল্লেখ্য, মিজানুর রহমান মিজান এবং আবরার ফাহাদ দুজনে রুমমেট ছিলেন। তারা শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর রুমে থাকতেন। মিজানকে এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
পরদিন রোববার (৬ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিটে মনির গ্রুপে লিখেন, ‘নিচে নাম সবাই’। এরপর রাত ৮টা ১৩ মিনিটে আবরার ফাহাদকে তার রুম থেকে ডেকে নিয়ে যায় তানিম, বিল্লাহ, অভি, সাইফুল, রবিন, জিওন ও অনিক। যা শেরেবাংলা হলে থাকা সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়েছে।
এরপর রাত ১২টা ৩৮ মিনিটে ‘এসবিএইচএসএল ১৬+১৭’ গ্রুপে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক অমিত সাহা লিখেন, ‘আবরার ফাহাদ কি হলে আছে।’ জবাবে শামসুল ও সজীব জানায়, ‘২০১১-তে আছে।’
হত্যাকাণ্ডের পর জানা গেছে, শেরেবাংলা হলের এই ২০১১ নম্বর কক্ষটি অমিত সাহারই। এখানেই বেধরক পিটিয়ে আববারকে হত্যা করা হয়। বৃহস্পতিবার অমিতকে রাজধানীর সবুজবাগের কালিবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। এরপর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় আবরার হত্যায় অমিতের পরোক্ষ সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। মেসেঞ্জারে অমিত ও হত্যাকাণ্ডের আরেক আসামি ইফতি মোশাররফ সকালের একটি ব্যক্তিগত কথোপকথনের স্ক্রিনশটও প্রকাশ পেয়েছে।
তাতে অমিত সাহা লিখেছেন, ‘আবরার ফাহাদ রে ধরছিলি তোরা’। জবাবে সকাল লেখেন, হ। পাল্টা প্রশ্নে অমিত লিখেন, ‘বের করছস?’
জবাবে সকাল প্রশ্ন ছুঁড়েন-‘কী? হল থেকে নাকি স্বীকারোক্তি?’ তখন অমিত লিখেন- ‘স্বীকার করলে তো বের করা উচিত।’ জবাবে সকাল বলেন, ‘মরে যাচ্ছে; মাইর বেশি হয়ে গেছে’। এরপর অমিত সাহা লিখেন, ‘ওওও, বাট তাকে তো লিগ্যাললি বের করা যায়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, তাদের কথোপকথনের অনেক কিছুই পাওয়া গেছে। সে সব কিছু যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, দলীয় পদ-পদবি, সামাজিক অবস্থান এগুলো বিবেচনা না করে গুরুত্ব দিয়ে আমরা তদন্ত কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আসামিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ, তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ ও সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। বাকি যারাই এই ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করা হবে।