সবুজদেশ ডেক্সঃ অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই নতুন মুখ আর তারুণ্যের জয়জয়কার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন চতুর্থ মেয়াদের সরকারে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয়বারের মতো নতুন সরকার শপথ নিতে যাচ্ছে আজ। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী মিলিয়ে মন্ত্রিসভার ৪৭ সদস্যকে বেলা সাড়ে ৩টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শপথবাক্য পাঠ করাবেন। প্রথমে শপথবাক্য পাঠ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর পর্যায়ক্রমে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করানো হবে। নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া ৪৭ জনের সবাই আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা এবং তাদের ৪৪ জন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। বাকি তিনজন স্থান পেয়েছেন টেকনোক্র্যাট কোটায়। মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি ১৪-দলীয় জোটের শরিক জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপিসহ অন্যান্য দলের সদস্যরা। আর জাতীয় পার্টি এবার বিরোধী দলে চলে যাওয়ায় তাদের কারও নাম মন্ত্রিসভায় আসেনি। নতুন মন্ত্রিসভার ২৪ জন মন্ত্রী, ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী এবং তিনজন উপমন্ত্রীর নাম ও দফতর চূড়ান্ত করে গতকাল তা প্রকাশ করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ইতিমধ্যে তাদের সবাইকে ফোন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রিসভার সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। গতকাল বিকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে পূর্বনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের নাম ও দফতর বণ্টনের তথ্য প্রকাশ করেন। অতীতের রেওয়াজ ভেঙে এবারই প্রথম শপথ নেওয়ার এক দিন আগে মন্ত্রিসভার সদস্য ও তাদের দফতর বণ্টনের বিষয়টি প্রকাশ করা হলো।

এদিকে নতুন মন্ত্রিসভায় যাদের নাম প্রকাশ করা হয়েছে তাতে বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনসহ আরও অনেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর নাম নেই। এ সংখ্যা সব মিলিয়ে ৩৬। বাদ পড়াদের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী ২৫ জন, প্রতিমন্ত্রী ৯ জন এবং উপমন্ত্রী ২ জন। আর জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ৩ জানুয়ারি মারা যান। তবে যেসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে এর বাইরে এখনো আরও অন্তত ১৬টি মন্ত্রণালয় শূন্য রয়েছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অভাবনীয় জয়ের পর টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে নতুন সরকারের যাত্রা করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা, যাদের বেশির ভাগই বয়সে তরুণ এবং রাজনীতিতে মাঠের নেতা হিসেবে পরিচিত, যাদের অনেকেই দলের সাংগঠনিক দায়িত্বে রয়েছেন। এবারের মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে যে ২৪ জন স্থান পেয়েছেন তাদের মধ্যে ১২ জন হচ্ছেন বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য। এদের মধ্যে দুজন মোস্তাফা জব্বার ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমান নির্বাচনের কয়েক দিন আগে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছিলেন। অন্য ১২ জনের মধ্যে একেবারেই নতুন মুখ এবং দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা রয়েছেন ৯ জন। তারা এবার প্রথম মন্ত্রিত্বের স্বাদ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। বাকি তিনজন ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের মন্ত্রী ছিলেন। নতুন মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী হওয়া চারজন বর্তমান মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়ত্বি পালন করছেন।

এবারের মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হিসেবে ডাক পেয়েছেন ১৯ জন, যাদের মধ্যে ১৫ জনই হচ্ছেন একেবারে নতুন মুখ। তিনজন হচ্ছেন বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য এবং একজন আওয়ামী লীগের ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদের সরকারে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। আর এবারের নতুন মন্ত্রিসভায় যে তিনজনকে উপমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে তাদের সবাই নতুন মুখ।

শেখ হাসিনার নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তার হাতে রয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন, প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়। আর পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে ডাক পেয়েছেন যে ২৪ জন তারা হলেন- আ ক ম মোজাম্মেল হক (মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক), ওবায়দুল কাদের (সড়ক পরিবহন ও সেতু), আবদুর রাজ্জাক (কৃষি), আসাদুজ্জামান খান কামাল (স্বরাষ্ট্র), হাছান মাহমুদ (তথ্য), আনিসুল হক (আইন), আ হ ম মুস্তফা কামাল (অর্থ), তাজুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার), দীপু মনি (শিক্ষা), এ কে আবদুল মোমেন (পররাষ্ট্র), এম এ মান্নান (পরিকল্পনা), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (শিল্প), গোলাম দস্তগীর গাজী (বস্ত্র ও পাট), জাহিদ মালেক (স্বাস্থ্য), সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্য), টিপু মুনশি (বাণিজ্য), নুরুজ্জামান আহমেদ (সমাজকল্যাণ), শ ম রেজাউল করিম (গণপূর্ত), মো. শাহাব উদ্দিন (পরিবেশ ও বন), বীর বাহাদুর ঊশৈ সিং (পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক), সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ (ভূমি), নুরুল ইসলাম সুজন (রেলপথ) এবং টেকনোক্র্যাট কোটায় স্থপতি ইয়াফেস ওসমান (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) ও মোস্তাফা জব্বার (ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি)।

তাদের মধ্যে এবারই প্রথমবারের মতো মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করছেন তাজুল ইসলাম (স্থানীয় সরকার), এ কে আবদুল মোমেন (পররাষ্ট্র), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (শিল্প), গোলাম দস্তগীর গাজী (বস্ত্র ও পাট), সাধন চন্দ্র মজুমদার (খাদ্য), টিপু মুনশি (বাণিজ্য), শ ম রেজাউল করিম (গণপূর্ত), নুরুল ইসলাম সুজন (রেলপথ) এবং মো. শাহাব উদ্দিন (পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়ক)। আর শেখ হাসিনা সরকারের ২০০৯-২০১৪ মেয়াদে মন্ত্রী থাকা আবদুর রাজ্জাক, দীপু মনি  ও হাছান মাহমুদ এবার আবারও মন্ত্রিসভায় স্থান পেলেন। নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া ১৯ জন প্রতিমন্ত্রী হচ্ছেন কামাল আহমেদ মজুমদার (শিল্প), ইমরান আহমেদ (প্রবাসীকল্যাণ), জাহিদ আহসান রাসেল (যুব ও ক্রীড়া), নসরুল হামিদ (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি), আশরাফ আলী খান খসরু (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ), মন্নুজান সুফিয়ান (শ্রম ও কর্মসংস্থান), খালিদ মাহমুদ চৌধুরী (নৌপরিবহন), জাকির হোসেন (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা), শাহরিয়ার আলম (পররাষ্ট্র), জুনাইদ আহমেদ পলক (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), ফরহাদ হোসেন (জনপ্রশাসন), স্বপন ভট্টাচার্য (স্থানীয় সরকার), জাহিদ ফারুক (পানিসম্পদ), মো. মুরাদ হাসান (স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ), শরীফ আহমেদ (সমাজকল্যাণ), কে এম খালিদ (সংস্কৃতি), এনামুর রহমান (দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ), মাহবুব আলী (বিমান) ও শেখ মো. আবদুল্লাহ টেকনোক্র্যাট (ধর্ম)। এদের মধ্যে নসরুল হামিদ বিপু, শাহরিয়ার আলম ও জুনাইদ আহমেদ পলক বর্তমান মন্ত্রিসভার সদস্য। মন্নুজান সুফিয়ান শেখ হাসিনার আগের মেয়াদের (২০০৯-২০১৪) সরকারে শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।  

উপমন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় স্থান পেয়ে হাবিবুন নাহার পরিবেশ, বন ও জলবায়ু, এ কে এম এনামুল হক শামীম পানিসম্পদ এবং মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। এবারের মন্ত্রিসভা থেকে যারা বাদ পড়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ ছাড়া শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম, সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহা. ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, বিমানমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। এদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত আগেই জানিয়েছিলেন তিনি অবসর নিতে চান। এবারের সংসদ নির্বাচনে তিনি প্রার্থীও হননি। আর মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। এ ছাড়া মন্ত্রীদের মধ্যে টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী হওয়া নুরুল ইসলাম ও মতিউর রহমান ভোটের আগেই পদত্যাগ করেন।

প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে বাদ পড়েছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসাশিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। বাদ পড়েছেন দুই উপমন্ত্রী পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আরিফ খান জয়। এর মধ্যে আরিফ খান জয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here