চড়েন ল্যান্ডক্রুজারে, থাকেন আলিশান বাড়িতে
সবুজ দেশ নিউজ:
মো. আক্কাস আলী, সোনালী ব্যাংক ঝিনাইদহ জেলার সদর শাখার কর্মকর্তা। ব্যাংকে অস্থায়ীভাবে যোগ দিয়ে মাঠকর্মী হিসেবে স্থায়ী হওয়ার পর দ্রুতই পদোন্নতি পেয়ে অফিসার হন তিনি। রাজনৈতিক সংগঠনের পদে থাকার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বর্তমানে তিনি জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি। সাবেক সিবিএ নেতা হিসেবে প্রভাব খাটিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। ব্যয়বহুল ল্যান্ডক্রুজার গাড়িতে করে অফিস করেন। ঝিনাইদহ সদরেই রয়েছে তার আলিশান বাসভবন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৪ সালের জানুয়ারিতে সোনালী ব্যাংকে অস্থায়ী একটি চাকরি জোগাড় করেন আক্কাস আলী। ১৯৮৮ সালের ডিসেম্বরে মাঠকর্মী হিসেবে স্থায়ী হন। ২০১০ সালে জুনিয়র অফিসার ও ২০১২ সালে অফিসার হিসেবে পদোন্নতি পান। এ সময়ের মধ্যে ঝিনাইদহ জেলা শহরে স্টেডিয়ামের পাশে বিলাসবহুল বাড়ি করেন, যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি টাকা। কিনেছেন একটি পুরনো ল্যান্ডক্রুজার গাড়ি। বাড়ি করেছেন নিজ গ্রামেও।
অভিযোগ রয়েছে, কর্মচারী ঋণ বিশেষ করে কম্পিউটার, মোটরসাইকেল ও গৃহনির্মাণ ঋণের ভাগ-বাটোয়ারার পুরো কর্তৃত্ব্ব কয়েক বছর ধরেই তার হাতে। তাকে টাকা না দিলে ঋণ মেলে না। শাখা ব্যবস্থাপকদের নানাভাবে হয়রানি করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ কর্মকর্তাদের পাঠানো একটি চিঠিতে এমন অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ঝিনাইদহ শাখার একজন সিনিয়র অফিসার, রবিনারকেলবাড়িয়া শাখার একজন সিনিয়র অফিসারসহ অনেক কর্মকর্তার কাছ থেকে কম্পিউটার ঋণ এবং কর্মচারী গৃহনির্মাণ ঋণ বাবদ টাকা নেন আক্কাস আলী। এ কর্মকর্তারা প্রিন্সিপাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপকের (ডিজিএম) কাছে এ মর্মে স্বীকারোক্তিও দিয়েছেন।
এছাড়া সোনালী ব্যাংকে চাকরির আচরণবিধিতে কর্মীদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করেছেন আক্কাস আলী। জাতীয় শ্রমিক লীগের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ২০০৫ সালের ২০ মে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রায় রমেশ চন্দ্র স্বাক্ষরিত চিঠিতে সেই কমিটির অনুমোদনও রয়েছে। এছাড়া ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগের তত্কালীন সংসদ সদস্য আবদুল হাই মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেলে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে শহরে বিভিন্ন ব্যানারে আক্কাস আলীকে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভা মেয়র আলহাজ সাইদুল করিম মিন্টু বণিক বার্তাকে বলেন, আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি শুনেছেন। বিষয়টি স্থানীয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেনও। বিধি লঙ্ঘন করে রাজনৈতিক দলের পদে থাকলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি। এ আওয়ামী লীগ নেতার অভিযোগ, জালিয়াতির মাধ্যমে ওই সময় সভাপতির পদটি বাগিয়ে নিয়ে আক্কাস আলী দলের সম্মানহানি করেছেন। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিষয়টি হাইকমান্ডকে শিগগিরই জানাবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে সোনালী ব্যাংকের ঝিনাইদহ শাখা কার্যালয় ভবনের দোতলায় এবং জেলার প্রিন্সিপাল অফিসের তিনতলায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরের দিকে গেলে আক্কাস আলীকে তার কক্ষে পাওয়া যায়নি। পরে সেলফোনে তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, আমি রাজনৈতিক মতাদর্শের হতে পারি কিন্তু জাতীয় শ্রমিক লীগ কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। সেই সংগঠনের সভাপতি হওয়ায় আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। তাছাড়া আমি স্বচ্ছতা ও দক্ষতার সঙ্গে অফিসের দায়িত্ব পালন করছি।
তবে জাতীয় শ্রমিক লীগকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বলেই উল্লেখ করেছেন ঝিনাইদহের জেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক লিকু। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমেই কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।
এদিকে ব্যাংকের বিধি লঙ্ঘন ও নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার পরও কখনই আক্কাস আলীর পদোন্নতি আটকে থাকেনি। ২০১১ সালের ২৯ ডিসেম্বর সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের পার্সোনাল ম্যানেজমেন্ট ডিভিশনের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার শেখ শাহ্ আলী মোছাদ্দেক স্বাক্ষরিত চিঠির মাধ্যমে জুনিয়র অফিসার থেকে অফিসারে পদোন্নতি পান তিনি। ২০১২ সালের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তাকে জেলা প্রিন্সিপাল অফিসে যোগ দিতে বলা হয়। এ পদোন্নতির ফলে তাকে একই কার্যালয়ে তিন বছরের বেশি সময় থাকার সুযোগ করে দেয়া হয়। ২০১০ সালের ৩ অক্টোবর জুনিয়র অফিসার হিসেবে প্রিন্সিপাল অফিসে যোগদান করে একই অফিসে পদোন্নতি পেয়ে ২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি যোগ দেন। আর চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি প্রিন্সিপাল অফিস থেকে ঝিনাইদহ শাখা অফিসে বদলি হয়ে আসেন।
এসব বিষয়ে জানতে ঝিনাইদহের প্রিন্সিপাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) খোকন চন্দ্র বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আক্কাস আলীর বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানেন না উল্লেখ করে শাখা অফিসে যোগাযোগ করতে বলেন। সোনালী ব্যাংক ঝিনাইদহ শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) আবদুল গাফফার বণিক বার্তাকে বলেন, আক্কাস আলী গত ৪ জানুয়ারি আমার অফিসে যোগ দিয়েছেন। তার বিষয়ে দাপ্তরিকভাবে আমার কাছে কোনো অভিযোগ এখনো আসেনি। তবে আপনার দেয়া অভিযোগগুলো বিভাগীয়ভাবে প্রমাণিত হয়ে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে।
বণিক বার্তা