সবুজদেশ ডেক্সঃ বগুড়া শহর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামের লাথিতে গৃহবধূর গর্ভপাত ঘটেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঋণের টাকার সুদ না পেয়ে গত শুক্রবার শহরের চেলোপাড়া এলাকায় ওই গৃহবধূর পেটে রবিউল লাথি মারেন বলে অভিযোগে বলা হয়। লাথির ঘটনায় রক্তক্ষরণ শুরু হলে ওই নারীকে হাসপাতালে নেওয়ার পর গর্ভপাত হয়।

ওই গৃহবধূর নাম শাপলা বেগম (২১)। তিনি বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর স্বামীর নাম শফি আহমেদ।

উত্তর চেলোপাড়া এলাকার বাসিন্দা শফি আহমেদ বলেন, তিন মাস আগে সাংসারিক প্রয়োজনে রবিউলের সমিতি থেকে তিনি স্ত্রী শাপলা বেগমের নামে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন। সময় মতো ঋণের টাকা পরিশোধও করে দেন। কিন্তু রবিউল তাঁর কাছে সুদ বাবদ আরও টাকা দাবি করেন। তাঁরা দিতে অস্বীকৃতি জানালে রবিউল ও তাঁর সহযোগীরা এসে তাঁদের বাসা থেকে খাট, সোফা সেটসহ কাঠের বেশ কিছু আসবাবপত্র নিয়ে যান। গত শুক্রবার বেলা তিনটার দিকে ওই আসবাবপত্র চাইতে গেলে দত্তবাড়ি সেতুর কাছাকাছি চেলোপাড়া এলাকায় শাপলার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয় রবিউলের। একপর্যায়ে রবিউল ক্ষিপ্ত হয়ে চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা শাপলার পেটে লাথি মারেন। সঙ্গে সঙ্গে রক্তক্ষরণ শুরু হলে প্রথমে মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল এবং পরে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে গর্ভপাতের বিষয়ে আশঙ্কা করা হয়। গত শনিবার আলট্রাসনোগ্রাফি করা হলে গর্ভপাতের বিষয়টি ধরা পড়ে। ওই দিন থানায় রবিউল ইসলাম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

শফি আহমেদ অভিযোগ করেন, তাঁর স্ত্রীর গর্ভপাত ঘটলেও পুলিশ হাসপাতালে না গিয়ে চিকিৎসকদের কাগজপত্র চেয়েছে। কাগজপত্র জমা দেওয়ার পর থানায় মামলা রেকর্ড হবে বলে জানিয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নেওয়ার আগে কোনো ধরনের কাগজপত্র পাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে থানায় অভিযোগ দিয়ে ছাড়পত্রের জন্য অপেক্ষায় আছেন। তিনি দাবি করেন, থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ছাত্রদল নেতা রবিউল ইসলাম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। পুলিশও অভিযোগ তদন্তের ব্যাপারে উদাসীন।

থানায় দেওয়া অভিযোগ ও আহত শাপলা বেগম এবং তাঁর স্বামীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদল নেতা রবিউল ইসলাম উত্তর চেলোপাড়া এলাকায় অগ্রগতি সমবায় সমিতির কার্যক্রমের নামে দীর্ঘদিন ধরে দাদন ব্যবসা ও সুদের কারবার চালিয়ে আসছিলেন। রবিউল ওই সমিতির সভাপতি।

বগুড়া জেলা ছাত্রদলের সম্পাদক নূরে আলম প্রথম আলোকে রবিউল ইসলামের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন।

শহর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁর সমিতি সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত। নিয়ম মেনেই তিনি ঋণ কার্যক্রম চালান। শফি আহমেদের স্ত্রী শাপলা বেগম সমিতি থেকে বছরখানেক আগে ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। সুদে আসলে পাওনা ৫০ হাজার টাকা। ২০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও এখনো তাঁর কাছ থেকে সমিতির পাওনা ৩০ হাজার টাকা। পাওনা টাকা না দেওয়ায় সমিতির একজন নারী কর্মীর সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা ও ধস্তাধস্তি হয়। আমার সঙ্গে তাঁর দেখাই হয়নি, লাথি মারার প্রশ্নই আসে না। এখন পাওনা টাকা যাতে পরিশোধ করতে না হয়, এ জন্য গর্ভপাত ঘটানোর ঘটনা সাজাচ্ছে। ওই নারী গর্ভবতী ছিলেন না, কোনো গর্ভপাতও ঘটেনি।’

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম বদিউজ্জামান বলেন, ওই গৃহবধূর স্বামী শফি আহমেদ বাদী হয়ে দাখিল করা অভিযোগটি তদন্তের জন্য নারুলী ফাঁড়ির উপপরিদর্শক আবদুল হাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রবিউল ছাড়াও তাঁর সহযোগী বারিক, আন দালিভ এবং কুলসুমের বিরুদ্ধে গর্ভপাত ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে।

নারুলী ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল হাই সোমবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে তবেই মামলা রেকর্ড হবে। তবে এখন পর্যন্ত অভিযোগের পক্ষে কোনো সাক্ষী মেলেনি।

প্রাথমিক তদন্ত শুরুর আগে ভিকটিম শাপলা বেগম ও অভিযোগকারী শফি আহমেদের সঙ্গে কোনো প্রকার যোগাযোগ করা হয়েছে কিনা কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে কি না-প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবদুল হাই বলেন, ‘এখনো সময় হয়ে ওঠেনি।’

এ দিকে শুক্রবার রাত সোয়া ১০টার দিকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ওই নারীকে গত শুক্রবার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পরপরই গর্ভপাত ঘটে। কত সপ্তাহ অন্তঃসত্ত্বা থাকার পর গর্ভপাত হয়েছে সেটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here