আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি-
গর্ভে থাকার জন্য মায়ের প্রয়োজন পড়লো। খাবার তুলে খেতে, প্রথম কথা শিখতে, হাত ধরে হাটতে মায়ের প্রয়োজন পড়লো। যে মা সারাজীবন নিজের দিকে না তাকিয়ে কেবল সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে শত কষ্ট সহ্য করে তাদেরকে আগলে রেখে বৃদ্ধ বয়সে উপনীত হলেন, ঠিক তখনই নিজের সন্তানদের কাছে সেই মায়ের প্রয়োজন ফুরালো। আল্লাহ আমাকে বুঝি চোখে দেখেন না, এত মানুষের মরণ হয় আমার কেনো মরণ হয় না। চোখ মুছতে মুছতে কথা গুলো এভাবেই বলছিলেন, ৮০ বছরের বৃদ্ধা জাহেরা খাতুন। সে ঝিনাইদহের মহেশপুর পৌর এলাকার পতিবিলা গ্রামের মৃত শিরু মজুনদারের স্ত্রী।

বৃদ্ধা জাহেরা খাতুন দীর্ঘশ^াস ফেলে বলেন, বাবার বাড়ি থেকে পাওয়া শেষ সম্বল ভিটে বাড়ির এক টুকরো জমিই আমার আজ কাল হয়ে দাড়িয়েছে। ৭থেকে৮ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পরও ছেলে-মেয়েদের সংসারে নাতী-নাতনী নিয়ে হেসে খেলে দিন যাচ্ছিল। বড় ছেলে মান্নান ও মেঝ ছেলে মজিদ অন্য জায়গাতে জমি কিনে বসবাস করলেও তার নাতী-নাতনী ও ছেলে বউ খোজ খবর নিতো নিয়োমিত। আর ছোট ছেলে রহিম ও ছোট মেয়ের স্বামী পরিত্যাক্তা সাজেদা খাতুন আমার ভিটাতেই থাকে তারা।

সমান ভাগে ৫ ছেলে মেয়েদেরকে জমি লিখে দেয় এর পর থেকেই যেন বৃদ্ধা জাহেরা খাতুন এর কষ্টের শেষ নেই। ছেলে মেয়েরা জমি পাবার পর থেকে তারা আর কোন খোজ খবর রাখেনা মায়ের। খেয়ে আছে কি, না খেয়ে আছে তাও কেউ উকি দিয়ে পর্যন্ত দেখেন না তার সন্তানেরা। মাঝে মধ্যে বড় ছেলে ও মেঝ ছেলে আসলেও মায়ের কোন খোজ খবর না নিয়ে উল্টো মাকে বলে তাদের জায়গা খালি করে দিতে বলে চলে যান তারা।

মেয়ের স্বামী পরিত্যাক্তা এজন্য মেয়ে সাজেদা খাতুন পরের বাড়িতে কাজ করে যা পায় তা দিয়ে দুজনের সংসার চলে। আর বৃদ্ধা জাহেরা খাতুন বিধবা ভাতার যে টাকা পান তা দিয়ে পান-সুপারী তো দূরের কথা ঔষধ কিনতেই লেগে যায়। বৃদ্ধা জাহেরা খাতুন আরো বলেন, আমি আমার জমি সন্তানদের কাছ থেকে যদি জমি ফিরিয়ে নিতে পারতাম তাহলে হয়তো আমি যতদিন বেচে থাকতাম ততদিন জমির লোভে ছেলেরা আমার খোজ খবর নিতো।

মেয়ে সাজেদা খাতুন বলেন, মা তার জমি আমাদের ৫ ভাই বোনকে সমান ভাগে ভাগ করে দেওয়ার পর থেকে আমার ভাইরা আর মার কোন খোজ খবর নেয় না। আমি পরের বাড়ি কাজ করে যা পাই তা দিয়েই মা-মেয়ের খেয়ে না খেয়ে দিন চলে যায়। ছোট ছেলে রহিম বলেন, দিনমজুরের কাজ করে আমারই নুন আনতে পান্তা ফুরায়,তার পরও মার খোজ খবর নেওয়ার চেষ্টা করি আমি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here