রাজধানী ঢাকায় হঠাৎ করেই জুলাই মাসের পোস্টপেইড বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে বলে অভিযোগ করছেন গ্রাহকেরা। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) আওতাভুক্ত এলাকার গ্রাহকেরা বলছেন, গত কয়েক মাসের তুলনায় বিদ্যুৎ বিল বেশি এসেছে এবার। কারও কারও আগের মাসগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বিল এসেছে।

কর্তৃপক্ষ বলছে, জুলাই মাস থেকে মিটার রিডিংয়ে নতুন প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগের মাসগুলোর এরিয়ার (বিলের জন্য বাদ রাখা ইউনিট) জুলাই মাসের সঙ্গে জুড়ে দিয়ে বিদ্যুৎ বিল করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। গ্রাহকদের এ ব্যাপারে নিজ নিজ এলাকায় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাতে বলা হয়েছে।

ঢাকার বেশির ভাগ এলাকাসহ নারায়ণগঞ্জ ডিপিডিসির আওতাভুক্ত। অন্যদিকে, মিরপুরের কিছু অংশ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, গুলশান, বারিধারা ও গাজীপুর ডেসকো এলাকাভুক্ত। ডিপিডিসি ও ডেসকো এলাকার কয়েকজন বিদ্যুৎ গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে গেছে, হঠাৎ করে জুলাই মাসে তাঁদের বিদ্যুতের বিল বেশি এসেছে।

বসুন্ধরা এলাকায় সি ব্লকের চার নম্বর রোডের বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামান জানান, এবার বিদ্যুতের বিল দেখে তিনি চমকে গেছেন। অন্যান্য মাসের তুলনায় এবার তাঁর ফ্ল্যাটের বিদ্যুতের বিল এসেছে প্রায় দ্বিগুণ। তিনি বলেন, মাসে গড়ে তাঁর বিল আসে পাঁচ হাজার টাকার কাছাকাছি। এবার নয় হাজার টাকার বেশি বিল এসেছে।

মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বেশি বিল আসার কারণ বুঝতে পারছি না। আমার মেয়েরা বেশির ভাগ সময় এসি ছেড়ে রাখে। এ কারণেই বিল বেশি আসে বলে এত দিন মেনে নিতাম। কিন্তু বিদ্যুতের ব্যবহার একই থাকার পরও এ মাসে প্রায় দ্বিগুণ বিল কেন এসেছে, বুঝতে পারছি না।’

কালাচাঁদপুরে বসবাসকারী মারুফ আহমেদের অন্য মাসগুলোর তুলনায় এবার বিল এক হাজার টাকা বেশি এসেছে। সাধারণত মাসে তাঁর বাসার বিদ্যুৎ বিল ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। এবার দুই হাজার টাকারও বেশি বিল এসেছে। তিনি জানান, তাঁর ওপরের তলায় শাশুড়ি থাকেন। শাশুড়ির বিলও অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি এসেছে। তাঁদের (শাশুড়ি) বিল দুই হাজার টাকার মধ্যে থাকে সাধারণত। এবার তা বেড়ে ২ হাজার ৭০০ টাকা এসেছে। তিনি জানান, বাড়ির অন্য ভাড়াটেদের সবাই এবার বেশি বিল এসেছে জানিয়ে অভিযোগ করেছেন তাঁর কাছে।

হাতিরঝিলে মহানগর প্রজেক্টের বাসিন্দা নাজমা তুস সাদিয়া জানান, স্বামী, স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে চার সদস্যদের পরিবার তাঁদের। স্বামী-স্ত্রী চাকরিজীবী হওয়ায় দিনের প্রায় পুরোটা সময় বাসার বাইরে থাকেন। দুই ছেলের একজন স্কুলে ও অন্যজন কলেজে পড়ে। দিনের বেশির ভাগ সময় তারাও বাসায় থাকে না। মাসে তাঁর বিল আসে সাড়ে চার-পাঁচ হাজার টাকার মধ্যে। এবার এসেছে ৬ হাজার ১০ টাকা।

সাদিয়া বলেন, ‘বাসায় লাইট, ফ্যান, ফ্রিজসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী চালু থাকার পাশাপাশি রাতে একটি এসি চলে। এরপরও সাড়ে চার-পাঁচ হাজার টাকা বিল আমার কাছে অনেক বেশি মনে হতো। কারণ, দিনের বেশির ভাগ সময় আমরা বাসায় থাকি না বলে লাইট, ফ্যান, এসি বন্ধ থাকে। বিল বেশি আসা নিয়ে বেশ কয়েকবার বাড়িওয়ালাকে অভিযোগও করেছি। সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। এবার জুলাই মাসের বিল অন্যবারে চেয়েও বেশি এসেছে। কেন বেশি এসেছে, সেটাই বুঝতে পারছি না।’

গ্রাহকদের এই অভিযোগের ব্যাপারে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) রমিজ উদ্দিন সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ব্যবহার বেশি হলে বিল বেশি আসবে। বিদ্যুতের দাম তো বাড়েনি, তাই কেন বেশি বিল এসেছে, তা তদন্ত না করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, ডিপিডিসির আউটসোর্সিংয়ের কাজে জুলাই মাসে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ১ জুলাই থেকে নতুন প্রতিষ্ঠানকে মিটার রিডিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আগের মাসগুলোর এরিয়ার জুলাই মাসের ইউনিটের সঙ্গে যোগ করা হয়েছে কি না, তা দেখতে হবে। এর বাইরে মিটারে কোনো সমস্যা হয়েছে কি না, সেটাও দেখতে হবে। তিনি গ্রাহকদের মিটার রিডিং ঠিকভাবে নেওয়া হচ্ছে কি না, তা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। মিটারে সমস্যা পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রাহকদের অভিযোগ জানাতে বলেছেন তিনি।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, গরম বেশি হওয়ার কারণে গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ খরচ বেশি করেছেন। এ কারণে হয়তো বিল বেশি আসছে। এরপরও অভিযোগ থাকলে নিজ নিজ এলাকায় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের কাছে গ্রাহকেরা তা জানালে সমাধান করা হবে। তিনি বলেন, মিটার রিডিং মাসেরটা মাসে করতে বলা হয়েছে। এরিয়ার রেখে পরের মাসের বিলের সঙ্গে সমন্বয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে মিটার রিডিং প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা জাকিয়া আক্তারের মতে, তাঁর প্রিপেইড মিটার হলেও এবার বিদ্যুতের জন্য অন্য মাসগুলোর তুলনায় বেশি খরচ হচ্ছে বলে মনে করছেন। তাঁর ভাষ্য, জানুয়ারি মাস থেকে তিনি প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছেন। তবে গত তিন মাসে তাঁকে তুলনামূলকভাবে বিদ্যুৎ পেতে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে। মে মাসে তিনি তিন হাজার টাকা রিচার্জ করেছিলেন। জুন মাসে তিনি ১৫০০, ৫০০ ও ১৫০০ টাকা করে তিন দফায় মিটার রিচার্জ করেছেন। জুলাই মাসে তাঁকে দুই দফায় ২৫০০ ও ২০০০ টাকা করে রিচার্জ করতে হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here