নিজস্ব প্রতিবেদক:

ঝিনাইদহের পাঁচটি পৌরসভার ৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে দুটি পৌরসভার সড়ক বাতির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। তাই সন্ধ্যা নামলেই ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এ দুই পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও মহল্লায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ওই পৌর এলাকার বাসিন্দারা।

ঝিনাইদহে জেলা সদরসহ ছয় উপজেলায় ছয়টি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে ওজোপাডিকোর কাছে কোটচাঁদপুর পৌরসভার বকেয়া রয়েছে ৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, মহেশপুর পৌরসভার বকেয়া ২ কোটি ৭০ লাখ, কালীগঞ্জ পৌরসভার রয়েছে ১ কোটি ৫ লাখ টাকা, সদর পৌরসভার বাকি ৮৭ লাখ টাকা এবং শৈলকুপা পৌরসভার বকেয়া ২৫ লাখ টাকা। এছাড়া হরিণাকুন্ডু পৌরসভাটি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন।

কোটি কোটি টাকা বকেয়া থাকায় এরই মধ্যে মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর পৌর এলাকার রাত্রিকালীন সড়ক বাতির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে ওজোপাডিকো।

জানা গেছে, মহেশপুর পৌরসভার কাছে ওয়েস্টজোনের প্রায় ২০ বছরের বিভিন্ন সময়ে সড়ক বাতিসহ নানা খাতের ২ কোটি ৭০ লাখ টাকার বিল বকেয়া রয়েছে। এই বকেয়ার কারণে গত ৭ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের নোটিশ দেওয়া হয় পৌর কর্তৃপক্ষকে। কিন্তু পৌরসভা কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় ১৮ সেপ্টেম্বর পৌর এলাকার সব সড়ক বাতির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়।

মহেশপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা জহির উদ্দিন বলেন, শহরে থাকি কিন্তু সন্ধ্যা নামলেই মনে হয় গ্রামে আছি। ঘুটঘুটে অন্ধকার অবস্থা তৈরি হয়। সড়ক বাতি না থাকায় চুরি-ছিনতাইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জানতে চাইলে মহেশপুর পৌর মেয়র আব্দুর রশিদ খান বলেন, বকেয়া বিল মাথায় নিয়ে দায়িত্বভার গ্রহণ করেছি। তবে কয়েক ধাপে বিদ্যুৎ বিল আংশিক পরিশোধ করেছি। পৌর সভার আয় কম থাকায় একবারে এত টাকার বকেয়া পরিশোধ করা সম্ভব না। তাই ধীরে ধীরে বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা চলছে।

তিনি আরও বলেন, ২০২০ সালের আগে মাসিক বিলের কাগজ একটাও দেয়নি বিদ্যুৎ অফিস। যার ফলে এর আগে মাসিক কত টাকা বিদ্যুৎ বিল আসতো জানা নেই। ২০২০ সালের আগের বিদ্যুৎ বিল না দিয়ে এককালীন ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল করে দিয়েছে তারা। তবে ২০২০ সালের পর থেকে পৌরসভায় বিদ্যুৎ বিলের কাগজ প্রতি মাসে দিচ্ছে।

কোটচাঁদপুর পৌরসভার মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম বলেন, আমার সময়ে বিল বাকি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে প্রিপেইড মিটার ব্যবহৃত হচ্ছে। যে টাকা বাকি রয়েছে তা সবই বিগত দুই মেয়রের সময়ের। যে টাকা আমি এখন কিছু কিছু পরিশোধ করছি।

এ বিষয়ে মহেশপুর পৌরসভার বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী সেকেন্দার হাসান জাহাঙ্গীর জানান, ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা বিল বকেয়া থাকায় পৌরসভার সড়কের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। বিল পরিশোধে পৌরসভা কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত সংযোগ বন্ধ থাকবে। তবে সংযোগ বন্ধ থাকাকালে এলাকাবাসীর অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।

মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম মিয়া বলেন, সড়ক বাতি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাতে পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়কে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জেলার পাঁচ পৌরসভার প্রায় ৯ কোটি টাকা বিল বাকি রয়েছে। আমরা বারবার নোটিশ করার পরও বকেয়া পরিশোধ করতে চায় না। ফলে কয়েকদিন আগে মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর পৌরসভার সড়ক বাতির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এখন এসব পৌরসভায় বকেয়া ঠেকাতে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। প্রিপেইড মিটার চালু হলে আর বকেয়া পড়বে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here