ঝিনাইদহের সেই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ
ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে অবৈধভাবে ৭ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া বহুল আলোচিত প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান দৌড় ঝাপ শুরু করেছেন। নিজে বাঁচতে বিভিন্ন মহলে তদবির করে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার “কালীগঞ্জে শিক্ষক নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগ” শিরোনামে একটি তথ্যবহুল রিপোর্ট প্রকাশ হওয়ার পর দুর্নীতিবাজ প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে আরো অনেক তথ্য এই প্রতিবেদককে দেয় ভুক্তভোগীরা। দূর্নীতিবাজ ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসছে।
জানা গেছে, গত কয়েক বছরে স্কুল থেকে অবসরে যাওয়া ৭ শিক্ষক ও এক পিওনের গ্রাচুইটির প্রায় আড়াই লাখ টাকা পরিশোধ না করে প্রধান শিক্ষক আত্মসাৎ করেছে বলে ভুক্তভোগিরা জানিয়েছে। গ্রাচুইটির টাকা পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকরা হলেন, মৃত অরবিন্দু বিশ^াস, মনোরঞ্জন বিশ^াস, রেজাউল ইসলাম, রনক তরফদার, জামাত আলী, আব্দুস সামাদ, রবিউল ইসলাম ও পিওন মৃত রেজাউল করিম মন্টু। এরমধ্যে শিক্ষক অরবিন্দু বিশ^াস ও পিওন রেজাউল করিম মন্টু মারা গেছেন। তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে স্কুলে টাকা চাইতে গেলেও প্রধান শিক্ষক দিতে অস্বীকার করেন।
এছাড়া, দূর্ণীতিবাজ এই প্রধান শিক্ষক স্কুলে যোগদানের পর রিঞ্জুনা খাতুন নামের একজনকে আয়া পদে নিয়োগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। গত ১০ বছর নাম মাত্র বেতন ভাতা দিয়ে কাজ করিয়ে নিলেও তাকে নিয়োগ না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। এমনকি এই আয়া বৈধভাবে নিয়োগ প্রাপ্ত না হলেও ২০১৬ সালের মিনিষ্ট্রি অডিটের কথা বলে ২৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় এই ধূর্ত প্রধান শিক্ষক।
রোস্তম আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমি ২৫ বছর চাকরি করেছি। বেতন থেকে কেটে নেওয়া গ্রাচুইটির টাকার কোন হিসাব দেয় না প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান। অনেকদিন তার কাছে বলেও এই টাকা দেওয়ার কোন ব্যবস্থা তিনি করেননি। আমার মতো প্রায় ৭ শিক্ষকের গ্রাচুইটির টাকা তিনি আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ করেন এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান টাকা আত্মসাতের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, স্কুল ফান্ডে কোন টাকা নেই। আমি ২০০৯ সালে এখানে যোগদান করি। তখন থেকেই পিএফ ফান্ড বন্ধ। আমি ম্যানেজিং কমিটির সভায় বার বার বলেছি টাকা দেওয়ার জন্য। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই টাকা তাদের পাওনা। নিরাশ হওয়ার কিছু নেই, দেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রঘুনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিয়ার রহমান অবৈধভাবে ৭ জন শিখ্ষকের নিয়োগ দিয়ে প্যাটার্ন বাদেই এমপিওভুক্ত করে এনেছেন। এছাড়া নিয়োগ বানিজ্য ও স্কুল ফান্ডের কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক যশোরের একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি নিয়ে চলে যাওয়ার পর সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন। কিন্তু স্কুলে প্যার্টান বহির্ভূত অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ থাকায় স্থানীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেন। এ ঘটনার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের জাল-জালিয়তির ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ে। এসব ঘটনা নিয়ে মঙ্গলবার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর নড়েচড়ে বসে শিক্ষা প্রশাসন সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।