ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ অফিসের বারান্দায় জাতীয় পরিচয়পত্র আর স্মার্ট কার্ডের অনুলিপির (ফটোকপি) স্তূপ জমেছে। খাদ্য সাহায্য পাওয়ার আশায় স্থানীয়রা তাদের পরিচয়পত্রের কপি এভাবে ফেলে রেখে গেছেন। এখনো অনেক অসহায় নারী-পুরুষরা রেখে যাচ্ছেন তাদের পরিচিতিপত্র।

যেখানে এসব কাগজের স্তূপ জমেছে, তার সামনেই ‘যত্রতত্র কাগজ না ফেলতে’ উপজেলা পরিষদ টাঙিয়ে দিয়েছে একটি নোটিস। কিন্তু করোনা-পরিস্থিতিতে কাজ হারানো নিরন্ন মানুষেরা একটু খাবারের আশায় রেখে যাচ্ছেন তাদের পরিচয়ের স্মারক।

মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদে গিয়ে এরকম চিত্রই দেখা যায়। সেখানে আসা নারী-পুরুষদের সবার হাতে রয়েছে স্মার্ট কার্ড অথবা জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। তাদের ভাষ্য, ত্রাণের আশায় এখানে এসেছেন। কেউ বলছেন, রেশন কার্ডের জন্য।

তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, এখানে কোনো ত্রাণ বা রেশনের জন্য আইডি কার্ড জমা নেওয়া হচ্ছে না। তারপরও লোকজন যত্রতত্র আইডি কার্ডের কপি ফেলে রেখে যাচ্ছেন। ফলে বাধ্য হয়ে উপজেলা কর্তৃপক্ষ আইডি কার্ড ফেলে না রাখার জন্য নোটিস টাঙিয়েছে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. বদরুদ্দোজা শুভ বলেন, ‘ত্রাণের জন্য ভোটার আইডি কার্ড জমা দিতে হবে এমন কোনো নির্দেশনা আমাদের কাছে নেই। আর এমনটা আমরা কাউকে বলিওনি। লোকজন কেন ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি বারান্দায় জমা দিচ্ছেন, তারাই ভালো জানেন।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে সরকার ঘোষিত সাধারণ ছুটি (অঘোষিত লকডাউন) যত দিন গড়াচ্ছে ততই খাদ্য সংকটে সাধারণ মানুষের হাহাকার বাড়ছে।

ত্রাণের আশায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদে আসা মোহাম্মদ ফিজার মোল্লা বলেন, ‘কাজ নেই, ঘরে বসে আছি। খাব কী? শুনেছি এখানে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিলে রেশন কার্ড দেওয়া হবে। তাই আইডি কার্ডের ফটোকপি রেখে গেলাম।’

আজিম বিশ্বাস নামে এক কাঠমিস্ত্রি বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত সরকারি কোনো অনুদান পাইনি। কাজ বন্ধ, ঘরে বসে আছি। সকালে শুনলাম এখানে ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি জমা দিলে টাকা পাওয়া যাবে। এজন্য কার্ড জমা দিলাম।’

ফটোকপি জমা দিতে আসা এক বৃদ্ধা বলেন, ‘আমার স্বামী নেই। একটু সাহায্য পেলে আমরা বেঁচে থাকতে পারতাম। লোকে বলাবলি করছে, এখানে ভোটার আইডির ফটোকপি জমা দিলে যাচাই-বাছাই করে নাকি খাবার দেবে। কদিন পরেই রোজা। যদি একটু খাবার দেয় তাহলে তা খেয়ে রোজা রাখতে পারব। তাই একটু খাবারের আশায় এখানে এসেছি।’

জানতে চাইলে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. সেলিম রেজা বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আইডি কার্ড জমা দেওয়ার কোনো নিয়ম নেই। স্ব স্ব ওয়ার্ডে গঠিত কমিটির মাধ্যমে দরিদ্রদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকায় থাকা নারী-পুরুষের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি জমা দিতে হচ্ছে। তবে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদের বারান্দায় লোকেরা কেন পরিচয়পত্র ফেলে যাচ্ছে, তা বলতে পারবো না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here