ঢাকা ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে গরীবের ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও একটি ভুয়া সংগঠন

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

সমাজ সেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি ভুয়া সংগঠন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে প্রায় তিন শতাধিক গরীব অসহায় মানুষের কাজ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে।

এ ঘটনাটি বৃহস্পতিবার বিকালে চাউর হয়ে পড়ে। এর পর থেকে গত দুই ধরে কোটচাঁদপুর দুধসরা সড়কের লিমা বেকারির মালিক সাইফুল ইসলামের বাসভবনে নিচতলা তালাবদ্ধ অফিসের সামনে ভুক্তভোগীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মাহবুবুল আলম এবং পরিদর্শক (তদন্ত) ইমরান আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ভুক্তভোগী কোটচাঁদপুর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী শাহিদা খাতুন এবং একই গ্রামের দাউদ হোসেনের স্ত্রী কামরুন নাহার অভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে দুজন পুরুষ ও একজন মহিলা আমাদের গ্রামে যেয়ে বলেন, কোটচাঁদপুরে সমাজ সেবা উন্নয়ন সংস্থার শাখা অফিস খোলা হয়েছে। এখানে গরীব অসহায় মানুষের মধ্যে থেকে পুরুষ-মহিলা আলাদাভাবে ১০ জনের একেকটি দল গঠন করে সদস্য করা হবে। ওই সকল সদস্যের মাঝে সুদবিহীন ঋণ বিতরণ করা হবে। সেই সাথে সদস্যদের এবং তাদের ছেলে মেয়েদের বিনা টাকায় হস্তশিল্পের কাজ শেখানো হবে। কাজ শেখানো শেষ হলে তাদেরকে সেলাই মেশিন দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিনা সুদে ১ লাখ ঋণ নিতে ১০ হাজার টাকা এবং ৫০ হাজার টাকা নিতে হলে ৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। সাথে ভর্তি ফি ১৫০ টাকা দিতে হবে। শাহিদা খাতুন ও কামরুন নাহার প্রত্যেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার কথা চিন্তা করেন এবং তাদের শর্ত অনুযায়ী দুজন মিলে প্রতারকদের হাতে মোট ২০ হাজার ৩০০ টাকা তুলে দেন।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই প্রতারকরা কোটচাঁদপুর শহর থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরের গ্রামগুলিতে যেতো। সেখানে ৪-৫ দিন ধরে গ্রামে গ্রামে সহজ সরল মানুষের মাঝে এমন লোভনীয় প্রচার চালায় । সেই সাথে ৩১ আগস্ট (শনিবার) কোটচাঁদপুর দুধসরা সড়কে লিমা বেকারীর মালিক সাইফুল ইসলামের মালিকাধীন বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়ে ওই প্রতারকরা অফিসের সাইন বোর্ড লাগান এবং ওই দিনই কয়েকটি চেয়ার টেবিল তোলেন ওই বাড়িতে। পরের দিন ১ সেপ্টেম্বর (রবিবার) পর্যায়ক্রমে একেক গ্রুপের সদস্যেদের ডেকে তাদের অফিস দেখান। এর পর আগামী রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঋণ প্রদানের কথা বলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় ওই প্রতারকরা।

বৃহস্পতিবার বিকালে সদস্যরা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি জমা দিতে এসে অফিস তালাবদ্ধ পান এবং তাদের মোবাইলও বন্ধ পান।

দোড়া ইউপি সদস্য আশরাফ আলী বলেন, তাদেরকে বিশ্বাস করে আমিও পুরুষ গ্রুপের সাথে ১০ হাজার ১৫০ টাকা দিয়েছি। তিনি বলেন বুঝতেই পারিনি আমরা প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছি।

বেশ কয়েক জন ভুক্তভোগী বলেন, আমাদের মত বহু মানুষের কাছ থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে ওই প্রতারকচক্র।

বাড়ির মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবসায়িক কাজে অধিকাংশ সময় বাইরে থাকি । তাদেরকে অফিস হিসাবে ভাড়া দেয়া হয়েছিল। শুক্রবার ভাড়ার চুক্তিনামা হওয়ার কথা। কিন্ত তারা বাসায় ওঠার চার দিনের মাথায় এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে চলে গেছে বলে আমি মোবাইল ফোনের জানতে পারলাম।

কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) বলেন, এই কোটচাঁদপুর থেকেই প্রতারক হুন্ডি কাজল হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। সেখানে আবার অপরিচিত মানুষকে এ এলাকার লোকজন টাকা দিয়ে বিশ্বাস করে কি করে বুঝি না! তিনি বলেন বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৭:৫৫:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯
৪৮৪ Time View

ঝিনাইদহে গরীবের ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও একটি ভুয়া সংগঠন

আপডেট সময় : ০৭:৫৫:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঝিনাইদহঃ

সমাজ সেবা উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি ভুয়া সংগঠন ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে প্রায় তিন শতাধিক গরীব অসহায় মানুষের কাজ থেকে ২০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দিয়েছে।

এ ঘটনাটি বৃহস্পতিবার বিকালে চাউর হয়ে পড়ে। এর পর থেকে গত দুই ধরে কোটচাঁদপুর দুধসরা সড়কের লিমা বেকারির মালিক সাইফুল ইসলামের বাসভবনে নিচতলা তালাবদ্ধ অফিসের সামনে ভুক্তভোগীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মাহবুবুল আলম এবং পরিদর্শক (তদন্ত) ইমরান আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

ভুক্তভোগী কোটচাঁদপুর উপজেলার আলুকদিয়া গ্রামের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী শাহিদা খাতুন এবং একই গ্রামের দাউদ হোসেনের স্ত্রী কামরুন নাহার অভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে বলেন, গত এক সপ্তাহ আগে দুজন পুরুষ ও একজন মহিলা আমাদের গ্রামে যেয়ে বলেন, কোটচাঁদপুরে সমাজ সেবা উন্নয়ন সংস্থার শাখা অফিস খোলা হয়েছে। এখানে গরীব অসহায় মানুষের মধ্যে থেকে পুরুষ-মহিলা আলাদাভাবে ১০ জনের একেকটি দল গঠন করে সদস্য করা হবে। ওই সকল সদস্যের মাঝে সুদবিহীন ঋণ বিতরণ করা হবে। সেই সাথে সদস্যদের এবং তাদের ছেলে মেয়েদের বিনা টাকায় হস্তশিল্পের কাজ শেখানো হবে। কাজ শেখানো শেষ হলে তাদেরকে সেলাই মেশিন দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে বিনা সুদে ১ লাখ ঋণ নিতে ১০ হাজার টাকা এবং ৫০ হাজার টাকা নিতে হলে ৫ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। সাথে ভর্তি ফি ১৫০ টাকা দিতে হবে। শাহিদা খাতুন ও কামরুন নাহার প্রত্যেকে এক লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার কথা চিন্তা করেন এবং তাদের শর্ত অনুযায়ী দুজন মিলে প্রতারকদের হাতে মোট ২০ হাজার ৩০০ টাকা তুলে দেন।

খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, ওই প্রতারকরা কোটচাঁদপুর শহর থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরের গ্রামগুলিতে যেতো। সেখানে ৪-৫ দিন ধরে গ্রামে গ্রামে সহজ সরল মানুষের মাঝে এমন লোভনীয় প্রচার চালায় । সেই সাথে ৩১ আগস্ট (শনিবার) কোটচাঁদপুর দুধসরা সড়কে লিমা বেকারীর মালিক সাইফুল ইসলামের মালিকাধীন বাড়ির নিচতলা ভাড়া নিয়ে ওই প্রতারকরা অফিসের সাইন বোর্ড লাগান এবং ওই দিনই কয়েকটি চেয়ার টেবিল তোলেন ওই বাড়িতে। পরের দিন ১ সেপ্টেম্বর (রবিবার) পর্যায়ক্রমে একেক গ্রুপের সদস্যেদের ডেকে তাদের অফিস দেখান। এর পর আগামী রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) ঋণ প্রদানের কথা বলে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় ওই প্রতারকরা।

বৃহস্পতিবার বিকালে সদস্যরা ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি ও ছবি জমা দিতে এসে অফিস তালাবদ্ধ পান এবং তাদের মোবাইলও বন্ধ পান।

দোড়া ইউপি সদস্য আশরাফ আলী বলেন, তাদেরকে বিশ্বাস করে আমিও পুরুষ গ্রুপের সাথে ১০ হাজার ১৫০ টাকা দিয়েছি। তিনি বলেন বুঝতেই পারিনি আমরা প্রতারকদের খপ্পরে পড়েছি।

বেশ কয়েক জন ভুক্তভোগী বলেন, আমাদের মত বহু মানুষের কাছ থেকে কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে ওই প্রতারকচক্র।

বাড়ির মালিক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যবসায়িক কাজে অধিকাংশ সময় বাইরে থাকি । তাদেরকে অফিস হিসাবে ভাড়া দেয়া হয়েছিল। শুক্রবার ভাড়ার চুক্তিনামা হওয়ার কথা। কিন্ত তারা বাসায় ওঠার চার দিনের মাথায় এলাকার মানুষের কাছ থেকে টাকা পয়সা নিয়ে চলে গেছে বলে আমি মোবাইল ফোনের জানতে পারলাম।

কোটচাঁদপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) বলেন, এই কোটচাঁদপুর থেকেই প্রতারক হুন্ডি কাজল হাজার হাজার কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছে। সেখানে আবার অপরিচিত মানুষকে এ এলাকার লোকজন টাকা দিয়ে বিশ্বাস করে কি করে বুঝি না! তিনি বলেন বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখবো।