ঝিনাইদহঃ

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় ভাই হত্যার বিচার চেয়ে মামলা করায় স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যানের হামলা-অত্যাচারে ছয় বছর ধরে বাড়িছাড়া এক পরিবার। দীর্ঘদিন বাড়ি ফিরতে না পারায় বাড়ির উঠোনে এখন বড় বড় ঘাস।

অন্যদিকে মামলার সাক্ষীরাও এখন বাড়ি ছাড়া। ফলে তাদের বাড়ির উঠোনেও এখন গরু চরছে।

এই ঘটনা ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার বগুড়া গ্রামের ছয় পরিবারের। আর অভিযুক্ত  ব্যক্তি বগুড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম।

এলাকাবাসী জানান, ২০১৪ সালে ২৫ নভেম্বর শৈলকুপার রত্নাট গ্রামের মাঠ থেকে বগুড়া গ্রামের জালাল উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আগের দিন দুপুরে তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় পরদিন নিহতের ভাই নাসির উদ্দিন ইদু শৈলকুপা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

অভিযোগ, মামলার পর স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও তার সহযোগীরা শুরু করে বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট। মামলার বাদী ও সাক্ষীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়। মামলা তুলে নিতে দেওয়া হয় হত্যার হুমকি। ফলে জীবনের ভয়ে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন তারা। মামলার বাদী ইদু, সাক্ষী সায়েম শেখ, কাজী গোলাম নবী, কাজী মোহাম্মদ আলী, কাজী বিল্লাল হোসেন, তানিয়া খাতুন, সাহাবুদ্দিন অত্যাচার সইতে না পেরে বাড়ি ফেলে স্বজনদের নিয়ে পালিয়ে যান। দীর্ঘ এই সময়ে তারা বাড়ি ফিরতে পারেননি। সম্প্রতি বাড়িতে ফিরতে চাইলে, ‘মামলা তুলে বাড়ি উঠতে হবে’ বলে জানিয়ে দিয়েছেন চেয়ারম্যান।

বাদী ইদু বলেন, ‘ভাই হত্যার বিচার চেয়ে আজ ছয় বছর বাড়িছাড়া। আদালতে সাক্ষ্য দিতে গেলেও আসামিরা মারধর করতে যায়। বাড়ি যাওয়া তো দূরের কথা, এখন আদালতে যাওয়ার সাহসই পাচ্ছি না। আমি বাড়ি যেতে পারি না। আমার ভাই হত্যার বিচার চাই।’
মামলার সাক্ষী কাজী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হত্যা মামলার সাক্ষী হওয়ার কারণে পরিবার-পরিজন নিয়ে এতো বছর বাড়িছাড়া। বাড়িতে ফিরতে চাইলে চেয়ারম্যান বলছে, আগে মামলা তুলতে হবে তারপর বাড়িতে ফিরতে হবে।’

আরেক সাক্ষী কাজী বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘প্রায় ৩০ বিঘা জমি আর বাড়ি পড়ে আছে আমাদের। বাড়িতে যেতে পারছি না। উপরন্তু আমাদের জমিতে চেয়ারম্যান ফুটবল খেলার মাঠ বানিয়েছেন।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে সাক্ষী সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘যাদের ঘর নেই বর্তমান সরকার তাদের ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। আর আমাদের ঘরবাড়ি থাকা সত্ত্বেও বছরের পর বছর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়িছাড়া। আমরা বাড়ি ফিরতে চাই। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই।’

এই ব্যাপারে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হত্যা নিজেরা করে আমাদের নামে মামলা দিয়েছে। মানুষ যখন জানতে পেরেছে তারা নিজেরাই হত্যা করেছে, জনরোষের ভয়ে তারা নিজেরাই বাড়ি থেকে পালিয়েছে। আমরা কাউকে বাড়িছাড়া করিনি।’

শৈলকুপা থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ওটা আমাদের কোনো বিষয় না। কে বাড়ি উঠবে না উঠবে, কে বাড়ি থাকবে না থাকবে সেটা তাদের ব্যাপার। এটা আমাদের দায়িত্ব না।’

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here