ঢাকা ১২:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝিনাইদহে ৪৮ কি.মি. রাস্তায় বরাদ্দ ৭৮ কোটি টাকা, দেড় বছরেও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

৪৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। তারপরও বাজেট ঘাটতির অজুহাতে রাস্তাটির নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদার। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ বাজেট বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়, নুতন করে টেন্ডার আহবান করতে বলেছে। ফলে খালিশপুর-যাদবপুর ভায়া জিন্নানগর সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অনেক স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। কয়েকটি জায়গা এতোটা খারাপ যে, সেখান দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছে, সড়কটি সংষ্কারের জন্য যে সময় প্রাক্কলন তৈরী করা হয়, বর্তমানে তার চেয়েও খারাপ অবস্থা। যে কারনে তারা পূর্বের বাজেটে কাজ করতে পারবেন না বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাবি এবং সরেজমিনে যাচাই করে অতিরিক্ত বরাদ্ধের জন্য প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা অনুমোদন না হওয়ায় পুনরায় পুনরায় টেন্ডার করার জন্য পক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজার থেকে মহেশপুর-দত্তনগর-জিন্নানগর হয়ে যাদবপুর সড়কচি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সংষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরই প্রাক্কলন তৈরী করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ওই সড়কটি মেরামতের জন্য একনেকে ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এরপর তিনটি প্যাকেজে বিভক্ত করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে তিনটি প্যাকেজের কাজ পান যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। যার মধ্যে রয়েছে কালিশপুর থেকে সেজিয়া, সেজিয়া থেকে ভোলাডাঙ্গা ও ভোলাডাঙ্গা থেকে যাদবপর সড়ক। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ কাজটি শুরু হয়ে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর শেষ করার কথা। ঠিকাদার সেভাবেই কাজ শুরু করেন, কিন্তু এক বছর পার হলেও আজো সড়কের কাজ শেষ করতে পারেননি। প্রথম দফায় কাজ করে বন্ধ রাখা হয়। এরপর আবারো শুরু করলেও দত্তনগর থেকে জিন্নানগর আনুমানিক ১২ কিলোমিটার ও সামন্তা থেকে মোমিনতলা ৫ কিলোমিটার কাজ না করে ফেলে রাখা হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, যে দুইটি স্থান তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন সেখানে শুধুমাত্র ভেঙ্গেচুরে যাওয়া জায়গা মেরামত করে কার্পেটিং করার কথা। কিন্তু সড়কটির বর্তমান যে অবস্থা তাতে ওই স্থানে কোনো ভাবেই গর্ত ভরাট করে কার্পেটিং করলে থাকবে না। স্থানটি সম্পূর্ণ খুড়ে নতুন করে করতে হবে। যে কারনে তারা ওই দুইটি স্থানে কাজ করবেন না বলে সওজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। সওজ এর কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখে তারাও নতুন করে করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এলাকায় গিয়ে দেখা যায় দত্তনগর থেকে জিন্নানগর ও সামন্তা থেকে মমিনতলা পর্যন্ত সড়কে বর্তমানে চলাচলের কোনো উপায় নেই। সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়ে ২/১ টি যানবাহন গেলেও প্রায়ই গর্তে আটকে থাকছে।

মহেশপুরের সামন্তা বাজারের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, একটু বর্ষা হলেই তারা এলাকা থেকে বের হতে পারছেন না। বিশেষ করে সামন্তা থেকে মোমিনতলা পর্যন্ত এতোটাই খারাপ যে ওই ৫ কিলোমিটার কোনো ভাবেই চলাচল করা যাচ্ছে না। জিন্নানগর এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম জানান, মহেশপুর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ এই রাস্তার কারনে বর্তমানে খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছেন। তারা মাঠে উৎপাদিত কৃষি পন্যও বাজারে নিতে পারছে না।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দার রহমান জানান, ওই সড়কের সংষ্কার কাজের প্রাক্কলন তৈরীর সময়ের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা অনেক পার্থক্য। যে কারনে ঠিকাদার কাজটি করছেন না। সওজের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও এসে দেখে গেছেন। তারাও নতুন করে প্রাক্কলন তৈরীসহ টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এখন সেই পক্রিয়া চলছে।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৪:০২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৯
৬১৭ Time View

ঝিনাইদহে ৪৮ কি.মি. রাস্তায় বরাদ্দ ৭৮ কোটি টাকা, দেড় বছরেও কাজ শেষ করেনি ঠিকাদার

আপডেট সময় : ০৪:০২:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৯

ঝিনাইদহঃ

৪৮ কিলোমিটার রাস্তা নির্মানে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা। তারপরও বাজেট ঘাটতির অজুহাতে রাস্তাটির নির্মান কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদার। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগ বাজেট বৃদ্ধির জন্য চিঠি দিয়েছে। কিন্তু তাতে সাড়া দেয়নি সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয়, নুতন করে টেন্ডার আহবান করতে বলেছে। ফলে খালিশপুর-যাদবপুর ভায়া জিন্নানগর সড়কটি এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। অনেক স্থানে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। কয়েকটি জায়গা এতোটা খারাপ যে, সেখান দিয়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারছে না।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বলছে, সড়কটি সংষ্কারের জন্য যে সময় প্রাক্কলন তৈরী করা হয়, বর্তমানে তার চেয়েও খারাপ অবস্থা। যে কারনে তারা পূর্বের বাজেটে কাজ করতে পারবেন না বলে কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন তারা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দাবি এবং সরেজমিনে যাচাই করে অতিরিক্ত বরাদ্ধের জন্য প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা অনুমোদন না হওয়ায় পুনরায় পুনরায় টেন্ডার করার জন্য পক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর বাজার থেকে মহেশপুর-দত্তনগর-জিন্নানগর হয়ে যাদবপুর সড়কচি ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সংষ্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ওই বছরই প্রাক্কলন তৈরী করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ওই সড়কটি মেরামতের জন্য একনেকে ৭৮ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়। এরপর তিনটি প্যাকেজে বিভক্ত করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে তিনটি প্যাকেজের কাজ পান যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মোজাহার এন্টারপ্রাইজ। যার মধ্যে রয়েছে কালিশপুর থেকে সেজিয়া, সেজিয়া থেকে ভোলাডাঙ্গা ও ভোলাডাঙ্গা থেকে যাদবপর সড়ক। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ কাজটি শুরু হয়ে একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর শেষ করার কথা। ঠিকাদার সেভাবেই কাজ শুরু করেন, কিন্তু এক বছর পার হলেও আজো সড়কের কাজ শেষ করতে পারেননি। প্রথম দফায় কাজ করে বন্ধ রাখা হয়। এরপর আবারো শুরু করলেও দত্তনগর থেকে জিন্নানগর আনুমানিক ১২ কিলোমিটার ও সামন্তা থেকে মোমিনতলা ৫ কিলোমিটার কাজ না করে ফেলে রাখা হয়েছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আমির হোসেন জানান, যে দুইটি স্থান তারা কাজ বন্ধ রেখেছেন সেখানে শুধুমাত্র ভেঙ্গেচুরে যাওয়া জায়গা মেরামত করে কার্পেটিং করার কথা। কিন্তু সড়কটির বর্তমান যে অবস্থা তাতে ওই স্থানে কোনো ভাবেই গর্ত ভরাট করে কার্পেটিং করলে থাকবে না। স্থানটি সম্পূর্ণ খুড়ে নতুন করে করতে হবে। যে কারনে তারা ওই দুইটি স্থানে কাজ করবেন না বলে সওজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। সওজ এর কর্মকর্তারা সরেজমিনে দেখে তারাও নতুন করে করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এলাকায় গিয়ে দেখা যায় দত্তনগর থেকে জিন্নানগর ও সামন্তা থেকে মমিনতলা পর্যন্ত সড়কে বর্তমানে চলাচলের কোনো উপায় নেই। সড়কে বড় বড় গর্ত তৈরী হয়েছে। কোনো ভারি যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। অত্যান্ত ঝুঁকি নিয়ে ২/১ টি যানবাহন গেলেও প্রায়ই গর্তে আটকে থাকছে।

মহেশপুরের সামন্তা বাজারের বাসিন্দা আমিরুল ইসলাম জানান, একটু বর্ষা হলেই তারা এলাকা থেকে বের হতে পারছেন না। বিশেষ করে সামন্তা থেকে মোমিনতলা পর্যন্ত এতোটাই খারাপ যে ওই ৫ কিলোমিটার কোনো ভাবেই চলাচল করা যাচ্ছে না। জিন্নানগর এলাকার বাসিন্দা খায়রুল ইসলাম জানান, মহেশপুর উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নের কয়েক লাখ মানুষ এই রাস্তার কারনে বর্তমানে খুবই কষ্টে জীবন যাপন করছেন। তারা মাঠে উৎপাদিত কৃষি পন্যও বাজারে নিতে পারছে না।

ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দার রহমান জানান, ওই সড়কের সংষ্কার কাজের প্রাক্কলন তৈরীর সময়ের অবস্থা আর বর্তমান অবস্থা অনেক পার্থক্য। যে কারনে ঠিকাদার কাজটি করছেন না। সওজের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও এসে দেখে গেছেন। তারাও নতুন করে প্রাক্কলন তৈরীসহ টেন্ডারের মাধ্যমে কাজটি করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এখন সেই পক্রিয়া চলছে।