প্রথমে সর্দি-কাশি, পরে ঝাঁকুনি দিয়ে জ্বর ও শরীরে লাল গুটি উঠে অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত মঙ্গলবার থেকে আজ রোববার পর্যন্ত ছয় দিনে একই পরিবারের তিন শিশুসহ চার ত্রিপুরা শিশু মারা গেছে। চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নের সোনাই ত্রিপুরাপল্লিতে এ ঘটনা ঘটে।

মারা যাওয়া শিশুরা হলো অন্নরায় ত্রিপুরা (৫), শ্রীমণি ত্রিপুরা (৩), সমরায় ত্রিপুরা (৩) ও অন্নবালা ত্রিপুরা (৭)। আজ রোববার ওই পল্লির ২২ শিশুকে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের বয়স ১ থেকে ১০ বছরের মধ্যে। এই শিশুদের তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা শিশুদের মধ্যে রয়েছে সোনালি চাকমা (৪), মেনসন চাকমা (৫), গোপাল চাকমা (২), সুনীল ত্রিপুরা (৫), স্বপ্না ত্রিপুরা (১), রিপন ত্রিপুরা (১), রতন ত্রিপুরা (৩), রত্না ত্রিপুরা (২), ইমারানী ত্রিপুরা (৮), বিজলি ত্রিপুরা (৭), কিরণমালা ত্রিপুরা (১০), বিজয় ত্রিপুরা (৬), সীমারানী ত্রিপুরা (৪), লক্ষ্মণ ত্রিপুরা (৩), শুভরানী ত্রিপুরা (১), গীতারানী ত্রিপুরা (৩), গুনাধর ত্রিপুরা (৬), সুধান্দ ত্রিপুরা (৪), রনি ত্রিপুরা (৭), শিমুল ত্রিপুরা (৫), রতন ত্রিপুরা (৫) ও সুমুন ত্রিপুরা (১০)।

হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু সৈয়দ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ভাইরাস রোগে গত ছয় দিনে চার ত্রিপুরা শিশু মারা গেছে। দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে ত্রিপুরাপল্লির ২২ শিশুকে। তাদের রক্তের নমুনা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা করে জানা যাবে তারা কোন রোগে আক্রান্ত।

দুপুরে ত্রিপুরাপল্লিতে গিয়ে দেখা যায়, তিন শিশুসন্তান হারিয়ে আহাজারি করছেন তাদের মা সামলক্ষ্মী ত্রিপুরা। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘অভাব অনটনের মধ্যে তিন সন্তানকে বড় করছিলাম। ওদের মুখ দেখলেই সব দুঃখ ভুলে যেতাম। এখন কী নিয়ে বাঁচব?’

ত্রিপুরাপল্লির কার্বারি ধনকুমার ত্রিপুরা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ত্রিপুরাপল্লিতে ৫২টি পরিবারের ৩৭০ জনের বসবাস। ছয় দিনে ওই এলাকায় কোনো জনপ্রতিনিধি আসেননি। রোববার সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এসেছিলেন।’

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান সিদ্দিকী রোববার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি হাটহাজারীতে এসেছি। কাল সোমবার ঢাকা থেকে চিকিৎসক টিম এসে রক্তের নমুনা নিয়ে যাবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here