কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতে এবার ঈদুল আজহার ছুটি উপলক্ষে পর্যটকদের তেমন একটা পদচারণ নেই। দূর-দূরান্তের পর্যটক-দর্শনার্থীদের তুলনায় পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের উপস্থিতি বেশি লক্ষ করা গেছে। এখানকার হোটেলগুলোর ২৫ শতাংশ পূর্ণ হয়েছে বলে জানা গেছে।

ঈদের দিন বিকেল থেকে সদলবলে মানুষজনকে সৈকত এলাকায় ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। অনেকে আবার কুয়াকাটায় ঘুরতে আসার সুযোগে পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে নিয়ে সাগরে গোসল করেছেন। এসব মানুষের বেশির ভাগই ছিল বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা জেলার। এক কথায় ঈদের দিন বিকেল থেকে রাত অবধি আশপাশের এলাকার মানুষের সমাগম ছিল সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাতে।

বরিশালের বাসিন্দা আহসান হাবীব বললেন, ঈদের সকালটা নিজ বাসাতে পরিবারের সবার সঙ্গে কাটিয়েছেন। বিকেলের দিকে পরিবারের সবাই কুয়াকাটায় চলে আসেন। ঘোরাফেরা করে আবার রাতেই বরিশাল ফিরে যাবেন।

এবারের ঈদের ছুটিতে কুয়াকাটাতে বেড়াতে আসা বেশির ভাগ লোকই ঘুরেফিরে সন্ধ্যার পর নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন। এর কারণে আবাসিক সব হোটেল-মোটেল বলতে গেলে বোর্ডারশূন্য ছিল।

কুয়াকাটায় পর্যটকদের সাগরস্নান। ছবি: প্রথম আলোকুয়াকাটায় পর্যটকদের সাগরস্নান। ঈদের ছুটিকে কেন্দ্র করে বেচাকেনা সেভাবে না হওয়ায় কুয়াকাটার আবাসিক হোটেলসহ পর্যটনকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত লোকজনের অনেকেই হতাশা প্রকাশ করেছেন। তবে শুক্র ও শনিবার উপস্থিতি আরও বাড়বে বলে মনে করেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

কুয়াকাটার পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা পর্যটক না থাকার কয়েকটি কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো কুয়াকাটা সৈকতের অব্যাহত ভাঙন, কুয়াকাটায় ঘুরে বেড়ানোর জন্য অভ্যন্তরীণ সড়ক ব্যবস্থাপনা না থাকা, কুয়াকাটা সৈকতসহ পাশের এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকা। পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, কলাপাড়া-কুয়াকাটা সড়কের পাখিমারা থেকে মৎস্য বন্দর মহিপুর পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার বেহাল এবং বরিশাল থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত সরাসরি বাস সার্ভিস না থাকাটাও বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছে।

ঝিনুক ব্যবসায়ী মো. শাহীন আলম ও এইচ এম গাফফার বলেন, গত বছর কোরবানির ঈদের ছুটিতে ছোট দোকানদারেরা দৈনিক ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা, বড় দোকানদারেরা আরও বেশি বিক্রি করেছেন। সব ব্যবসায়ী গত বছর ভালো মুনাফা করেছেন। এবার পর্যটক কম হওয়ার কারণে বিক্রি কম হয়েছে। টুকটাক যা বিক্রি হয়েছে, তা বলার মতো নয়। বিক্রির অবস্থা যে এতটাই কম হবে, তা আগে অনুমান করতে পারেননি বলে এ দুই ব্যবসায়ী জানান।

কুয়াকাটা রাখাইন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘বছরের দুটি ঈদ এবং শীত মৌসুমে পর্যটকদের আগমনের ওপর কুয়াকাটার পর্যটননির্ভর ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভর করে। সেসব বিশেষ দিনেও যদি কোনো পর্যটক না আসেন, তখন ব্যবসায়ীদের হতাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। এবারের ঈদ উপলক্ষে বেচাকেনা হয়নি বললেই চলে। এতে প্রত্যেক ব্যবসায়ী আর্থিকভাবে লোকসানে পড়বেন।’ ব্যবসায়ীদের এ নেতা জানান, আবাসিক হোটেল-মোটেল, খাবার হোটেল, ঝিনুক ব্যবসায়ীসহ পর্যটনকেন্দ্রিক সব ব্যবসায়ীরা আগামী দুদিনের ভালো বেচা-কেনার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।

কুয়াকাটার অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলা। ছবি: প্রথম আলোকুয়াকাটার অভিজাত হোটেল সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলা। কুয়াকাটার হোটেল-মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেছেন, কুয়াকাটায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৭০টির মতো আবাসিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। এবারের ঈদকে কেন্দ্র করে পর্যটকদের সেবা দেওয়ার জন্য প্রত্যেকটি হোটেলই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। এসব হোটেলের মাত্র ২৫ শতাংশ রুম বুকিং হয়েছে। তা-ও মাত্র শুক্র-শনিবারের জন্য। গত বছর এ সময় প্রায় ৮০ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়েছিল বলে তিনি জানান।
মোতালেব শরীফ বলেন, বরিশাল-পটুয়াখালী থেকে সরাসরি কুয়াকাটায় যাতায়াতের বাস সার্ভিস চালু না থাকায় পর্যটকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তা ছাড়া বরিশাল-পটুয়াখালী থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলো কলাপাড়ায় এসে যাত্রীর জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। এ কারণে কুয়াকাটায় কেউ আসতে চান না। পর্যটকদের স্বার্থে সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করার দাবি জানান তিনি।

কুয়াকাটার একাধিক আবাসিক হোটেলের ব্যবস্থাপক বলেছেন, তিন-চার মাস ধরেই কুয়াকাটায় হোটেল ব্যবসায় মন্দা চলছে, যার কারণে প্রতিটি হোটেলের মালিকপক্ষকে অন্য খাত থেকে টাকা জোগাড় করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঈদের আগে বেতন দিতে হয়েছে। এবার পর্যটক কম থাকার কারণ চিহ্নিত করে হোটেল ব্যবস্থাপকেরা আরও বলেন, গত বছর আবহাওয়া ভালো ছিল। সে সময় ছুটিও বেশি ছিল। এবার মাত্র দুদিন বন্ধ। রোববার থেকে আবার সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে যাবে। এ ছাড়া এবার প্রবল বর্ষণ, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকার কারণেও কুয়াকাটায় দর্শনার্থী-পর্যটক কম হয়েছে।

পটুয়াখালী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, পাখিমারা থেকে মহিপুর পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়কের কাজ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মামলা চলছে। এর কারণে ওই সড়কটুকুর কোনো উন্নয়ন করা যাচ্ছে না। আশা করছি অতি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আবদুল বারেক মোল্লার কাছে কুয়াকাটার সার্বিক সমস্যার কথা জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনস্বাস্থ্য, পানি বিশুদ্ধকরণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ২০০ গভীর নলকূপ স্থাপনের জন্য প্রায় ৩৮ কোটি টাকা এবং কুয়াকাটা পৌরসভার অভ্যন্তরীণ পাকা সড়ক নির্মাণের জন্য ৪৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করার প্রক্রিয়া চলছে। আগামী মাসের মধ্যে দরপত্রের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শুরু করা যাবে। এ ছাড়া শহর উন্নয়নের জন্য অতিরিক্ত আরও ১৭ কোটি বরাদ্দ রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here