সবুজ দেশ নিউজ:ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর নীলকুঠি কৃষক পীড়নের সাক্ষী হিসেবে টিকে আছে। জেলার বিজুলিয়া, শৈলকুপা, জোড়াদহ, মধুপুর, বজরাপুর প্রভৃতি স্থানে একদা নীলকুঠি ছিল। একমাত্র খালিশপুর ছাড়া অন্য নীলকুঠিগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। কিন্তু সংস্কারের অভাবে খালিশপুর কুঠিও ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। হেরিটেজ ভবন হিসাবে টিকিয়ে রাখার দাবি উঠেছে অনেক দিন থেকে।

জানা যায়, এদেশের শাসন ক্ষমতায় ইংরেজরা গেড়ে বসলে বিলেত থেকে দলে দলে সাহেবরা আসতে শুরু করে। তখন নীলের ব্যবসা ছিল লাভজনক। তারা অন্যান্য এলাকার মতো তত্কালীন ঝিনাইদহ এলাকায় এসে কুঠি স্থাপন করে। জোর করে কৃষকদের দিয়ে নীল চাষ করাতে বাধ্য করে। তাদেরই এক নীলকর সাহেব কপোতাক্ষ তীরে খালিশপুরে ৩১ বিঘা জমির ওপর কুঠি স্থাপন করেন। শুরু করে নীল চাষ। দোতলা এ কুঠির চারিদিকে গড়ে তোলা হয় আম লিচুর বাগান। কালের সাক্ষী হিসেবে কয়েকটি আম গাছ এখনো বেঁচে আছে। কুঠিয়াল সাহেবদের অত্যাচারে কৃষকরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। তারা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। শৈলকুপার ষষ্ঠিবরের জমিদার বসন্ত মিত্র কৃষকদের পক্ষ নেন। ৩০ গ্রামের কৃষক অত্যাচারী ডাম্বেল সাহেবের বিজুলিয়া নীল কুঠি আক্রমণ করে। সাহেব স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে প্রাণ বাঁচান। নীল বিদ্রোহ জোরদার হলে সাহেবদের অত্যাচারের মাত্রাও বেড়ে যায়। কৃত্রিম নীল আবিষ্কার হলে নীল ব্যবসায়ে ভাটা পড়ে। কুঠিয়াল সাহেবগণ পাততাড়ি গুটাতে থাকে।

শুধু সাহেবরা নয়, এদেশের কয়েক জন অত্যাচারী জমিদারও নীল চাষ শুরু করে। নীল চাষ উঠে গেলে খালিশপুর কুঠি ফেলে চলে যায় নীলকর সাহেব। এক সময় স্থানীয় কোনো জমিদার এর মালিক হন। জমিদার দেশ ত্যাগ করলে কুঠি ও আশেপাশের জমি সরকারের মালিকানায় আসে। দীর্ঘ দিন সংস্কার না করায় কুঠিটি আজ ধ্বংসের পথে। শুধু অবকাঠামো দাঁড়িয়ে আছে। দরজা জানালা লোপাট হয়ে গেছে। স্থানীয় লোকজন কুঠি সংস্কার করার দাবি জানিয়ে আসছে। নতুন প্রজন্মের কাছে নীল চাষ ও নীলকর সাহেবদের অত্যাচারের কাহিনি জানার জন্য খালিশপুর কুঠিটি টিকিয়ে রাখা দরকার বলে স্থানীয়দের দাবি। এ জন্য এলাকাবাসী আন্দোলনও করেছে। আশ্বাস মিলেছিল কুঠি সংস্কারের। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি। বর্তমানে কুঠির জায়গায় ইকোপার্ক গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। পাশে স্থাপন করা হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতি যাদুঘর ও লাইব্রেরি এবং বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সরকারি কলেজ।

ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মো. জাকির হোসেন জানান—খালিশপুরের নীলকুঠি সংস্কারের জন্য প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে কথা বলেছেন। পর্যটনের সঙ্গেও কথা বলেছেন। এখানে একটি বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 

 

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here