বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে রাজধানীর অধিকাংশ কোরবানির পশুর বর্জ্য পরিষ্কার করা হলেও দুর্গন্ধ এখনো কমেনি। বেশির ভাগ এলাকায় দুর্গন্ধের তীব্রতা রয়ে গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, দুর্গন্ধ কমাতে তারা সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। প্রয়োজনে বারবার পানি ব্যবহার করা হচ্ছে।

দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, কোরবানির পর গত তিন দিনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) প্রায় ১৭ হাজার টন বর্জ্য পরিষ্কার করেছে। আর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) বর্জ্য পরিষ্কার করেছে ৮ হাজার ৫০০ টন।

ঈদের আগে দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ঈদের পর গত বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে কোরবানির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে ৯০ শতাংশ কোরবানির বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করেছেন ডিএসসিসি মেয়র সাঈদ খোকন। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে উত্তরের প্যানেল মেয়র জামাল মোস্তফা দাবি করেছেন, জনগণ আগের চেয়ে বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। তাই সাফল্যের সঙ্গে এই বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ হয়েছে।

শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত আজিমপুর, লালবাগ, পরীবাগ, শাহবাগ, খিলগাঁও, মালিবাগ, বনশ্রী, কল্যাণপুর ও বাড্ডা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে কোরবানির পশুর বর্জ্য নেই। এসব এলাকা অনেকটাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। তবে বেশির ভাগ এলাকায় বর্জ্য না থাকলেও এখনো দুর্গন্ধ রয়ে গেছে। লালবাগ, পরীবাগ ও শান্তিনগরের কয়েকটি সড়কে এখনো রাস্তায় পশুর রক্ত পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

বর্জ্য অপসারণে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটির ৯০ ভাগ এবং উত্তরে শতভাগ বর্জ্য পরিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

কল্যাণপুরের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেলের মধ্যে কোরবানির বর্জ্য পরিষ্কার করা হয়েও এখনো অনেক দুর্গন্ধ রয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় ব্লিচিং পাউডার ছিটানো হলেও গতকাল আর ছিটানো হয়নি।

দুপুরে আজিমপুর ইরাকি মাঠের সামনে, মালিবাগ রেলগেটের কাছে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত গাড়িতে বর্জ্য রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যেতে দেখা গেলেও সেখানে দুর্গন্ধ কমাতে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, যথাসময়ে বর্জ্য অপসারণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে দুর্গন্ধ কমাতে তাঁরা ব্লিচিং পাউডার ছিটানো অব্যাহত রেখেছেন। কিছু কিছু স্থানে পানি দিয়ে আবারও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করছেন।

আর উত্তর সিটি করপোরেশন অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবুল হাসনাত মো. আশরাফুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গন্ধ কমাতে এবারই ১০টি পানির গাড়ি সংযুক্ত করা হয়েছে। এসব গাড়িতে থাকা স্যাভলনযুক্ত পানি দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করার পর ব্লিচিং পাউডার ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। দুর্গন্ধ কমাতে আজও পানি ব্যবহার করা হবে।

শান্তিনগরের বাসিন্দা পিয়ার আহমদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বিগত বছরগুলোতে বর্জ্য পরিষ্কার করতে পাঁচ-ছয় দিনও লেগে যেত। তবে এবার যথাসময়ে বর্জ্য পরিষ্কার হওয়ার সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। তবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আগের চেয়ে এবার উন্নতি হলেও দুর্গন্ধ কমাতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

এখনো সড়কে বর্জ্য থাকার বিষয়ে খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, কোরবানির পর অনেকে বর্জ্য বাসার নিচে রেখে গতকাল রাস্তায় ফেলেছেন। সেসব ময়লা গতকাল বিকেলের মধ্যে পরিষ্কার করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here