ঢাকাঃ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুইদিন ধরে চালিয়ে আসা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছে।

মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে এ আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা। বুধবার সকাল ১০টায় পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানায় শিক্ষার্থীরা। তবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে।

এর আগে বুয়েটের ভিসির কার্যালয়ে গেটের তালা খুলে দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। যেখানে ভিসি অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলামকে টানা ৪ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে তারা।

এর আগে বেঁধে দেয়া সময় শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সামনে হাজির হন ভিসি। এসেই শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন ভিসি। এ সময় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ভিসি বলেন, তোমরা যা দাবি দিয়েছ তোমাদের দাবির সঙ্গে অ্যাগ্রি (একমত) করছি। আমরা নীতিগতভাবে সব দাবি মেনে নিচ্ছি।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসিকে দাবিগুলো পড়ে শুনিয়ে ঠিক কোন কোন দাবি মানা হল- তা জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে চলে যেতে চান ভিসি।

একপর্যায়ে ভিসিকে শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন করেন, আবরার হত্যার ঘটনার পর তিনি কেন ক্যাম্পাসে আসেননি? জবাবে ভিসি বলেন, আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

কিন্তু আবরার হত্যার ৩৬ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার বিকাল ৫টার মধ্যেও কেন ভিসি ক্যাম্পাসে আসেননি, কেন তাকে আলটিমেটাম দিয়ে ক্যাম্পাসে আনতে হল? ভিসির কাছে এর জবাব চেয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের এসব প্রশ্নের জবাবে ভিসি বলেন, আমি সারাদিন মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, মিটিং করেছি। এগুলো না করলে দাবিগুলোর সমাধান হবে কীভাবে। সব তো আমার হাতে নেই। সরকারকে কনভিন্স করে আমাকে চলতে হয়।

ভিসি শিক্ষার্থীদের বলেন, তোমাদের দাবির সঙ্গে আমি একমত। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের উপায় বের করা হচ্ছে। আমি কাজ করে যাচ্ছি।

স্যার আপনি কী কাজ করছেন? এক শিক্ষার্থীর এ প্রশ্নের উত্তরে ভিসি বলেন, তোমাদের এই ব্যাপারটি নিয়ে কাজ করছি। আমি রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করেছি।

শিক্ষার্থীদের আলাদা ডেকে নিয়ে কথা বলার প্রস্তাব দিলে ভিসির সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এ সময় আবারও শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে শুরু করেন।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিকাল ৫টার মধ্যে উপাচার্যকে ক্যাম্পাসে আসার আলটিমেটাম দেন। তিনি না এলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলেও শিক্ষার্থীরা জানান।

প্রসঙ্গত, ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা।

তবে আবরার কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না বলে নিশ্চিত করেছেন তার পরিবারের সদস্যসহ সংশ্লিষ্টরা।

হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ না রাখতে সিসিটিভি ফুটেজ মুছে (ডিলেট) দেয় খুনিরা। তবে পুলিশের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা তা উদ্ধারে সক্ষম হন। পুলিশ ও চিকিৎসকরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পেয়েছেন।

এ ঘটনায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে তার বাবা চকবাজার থানায় সোমবার রাতে একটি হত্যা মামলা করেন। বুয়েট কর্তৃপক্ষ একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে। পাশাপাশি গঠন করেছে একটি তদন্ত কমিটিও।

এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলায় বুয়েট শাখার সহসভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১১ জনকে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here