বেড়েছে নারী প্রার্থীদের উপস্থিতি
সবুজদেশ ডেক্সঃ আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মনোনয়ন পেতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী প্রার্থী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুরুষ প্রার্থীদের পাশাপাশি অনেক নারী প্রার্থী এবার মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বলছেন, দলের পক্ষ থেকে যোগ্য নারীদের মনোনয়ন দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণের সময় এসেছে।
সরাসরি নির্বাচন করতে মনোনয়ন দৌড়ে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, বেগম মতিয়া চৌধুরী, সাহারা খাতুন, সাগুফতা ইয়াসমিন, সিমিন হোসেন রিমি, দীপু মনি, মেহের আফরোজ চুমকিসহ অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি তারকা প্রার্থী ও তরুণ নারী প্রার্থীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। চলচ্চিত্রের একসময়ের দাপুটে নায়িকা সারাহ বেগম কবরী; অভিনয়শিল্পী তারানা হালিম, জ্যোতিকা জ্যোতি, অরুণা বিশ্বাস, রোকেয়া প্রাচী, শমী কায়সার; ছোট পর্দার জনপ্রিয় তারকা তারিন; গায়িকা মমতাজ, কনকচাঁপা, বেবী নাজনীন; খালেদ মোশাররফের মেয়ে মাহজাবিন খালেদসহ অনেকের নাম গণমাধ্যমে আলোচনায় এসেছে। নৃত্যশিল্পী ও অভিনেত্রী মৌ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারে যোগ দিচ্ছেন বলেও খবর প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন পেশার নারীদের নাম এবার ঘুরেফিরে আসছে। নির্বাচনে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমাদ, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আরিফা রহমান রুমা প্রমুখ।
এবার সংরক্ষিত আসনের নির্বাচিত সাংসদ তারানা হালিম, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীসহ অনেকেই সরাসরি নির্বাচনে আগ্রহী হয়েছেন। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি, তাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন নিয়ে কর্মরত বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
তবে মনোনয়ন দৌড়ে সংখ্যা বাড়ার চেয়ে যোগ্যতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন অনেক প্রার্থী। সারাহ বেগম কবরী ২০০৮ সালে নারায়ণগঞ্জ সদর আসন থেকে সাংসদ হয়েছিলেন। এবার তিনি ঢাকা-১৭ আসনের প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন।
টেলিফোনে কবরী প্রথম আলোকে বলেন, যে নারীদের রাজনীতি নিয়ে কোনো ধারণাই নেই, তাঁদের মনোনয়ন দেওয়া হলে তা ভুল সিদ্ধান্ত হবে। যাঁরা আগে নির্বাচিত হয়েছেন, সে ধরনের প্রার্থীদের ক্ষেত্রে তাঁরা আসলেই কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছেন, তা–ও নজরদারির আওতায় আনা প্রয়োজন। শুধু সংখ্যা বিচার করলে চলবে না। বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সেলিমা আহমাদ কুমিল্লা-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্ষুদ্র পরিসরে না থেকে বৃহত্তর অঙ্গনে প্রবেশ করে নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করতে চাই বলেই সরাসরি নির্বাচন করতে চাচ্ছি।’
আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী সংরক্ষিত আসনের সাংসদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার হবিগঞ্জ-১ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন তিনি। সরাসরি নির্বাচন করার অনেক চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমার টাকা বা প্রভাব প্রতিপত্তি না থাকতে পারে, কিন্তু জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। সেই সাহসেই এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি।’
এবার রংপুর-৬ (পীরগঞ্জ) থেকে নির্বাচন করতে চাচ্ছেন দেশের প্রথম নারী স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নারীরা সব সময়ই চান সাধারণ আসন থেকে জয়ী হতে। সংরক্ষিত আসনে থাকলেও তিনি চান পরেরবার সরাসরি নির্বাচন করতে। দলের ভেতর থেকে বেশি করে মনোনয়ন দিলেই নারীদের পক্ষে জিতে আসা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সম্প্রতি রাজধানীতে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নির্বাচন করতে ইচ্ছুক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, স্বামী, ভাই মারা গেলে পারিবারিক সূত্রে অনেক নারী নির্বাচনে আসেন। তবে এই নারীদের নারী কোটায় ধরলে চলবে না।
নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে (আরপিও) ২০২০ সালের মধ্যে ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূর্ণ করার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা আছে। আরপিওর ৯০-এর খ-এর খ(২) অনুচ্ছেদে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে অন্তত ৩৩ শতাংশ পদ নারী সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ এবং এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে পর্যায়ক্রমে ২০২০ সাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া আছে।
মনোনয়ন দৌড়ে অন্য যাঁরা
ঢাকা-৭ আসন থেকে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন প্রয়াত নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা। নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টুর বোন সাবেক কমিশনার ও ঢাকা মহানগর উত্তরের সহসভাপতি ফেরদৌস আহমেদ মিষ্টিও ঢাকা-১৪ আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আক্তার উদ্দিন আহমেদের মেয়ে জেবা আহমেদ খান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, জাসাসের সহসভাপতি শাহরিয়া ইসলাম শায়লা, নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী, ব্যারিস্টার সাকিলা ফারজানা, ইসমত আরা সাদেক, মাহাবুব আরা বেগম গিনি, জয়া সেনগুপ্তা, সৈয়দা সায়রা মহসীন, ফরিদুন্নাহার লাইলী, মারুফা আক্তার পপি, সাবিনা আক্তার তুহিনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নারীদের নাম ঘুরেফিরে আসছে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়শা খানম বলেন, এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে নারীদের উপস্থিতি বেড়েছে। নারী প্রার্থীদের ছবি দিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। তবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল যোগ্য নারীদের মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে, সে শঙ্কা থেকেই যায়।