ভবদহে টিআরএম চালুর দাবিতে অভয়নগরে মানববন্ধন
যশোরঃ
ভবদহের জলাবদ্ধার স্থায়ী সমাধানে টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালুসহ ৬ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষে যশোরের অভয়নগরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকা-ে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। ভবদহের সমস্যা সমাধানে দ্রুত সময়ের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে অনশন কর্মসূচিসহ কঠোর আন্দোলনেরও হুশিয়ারি দিয়েছেন নেতৃবৃন্দ।
রবিবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২ টা পর্যন্ত যশোর-খুলনা মহাসড়কের নওয়াপাড়া নূরবাগ বাসস্ট্যান্ডে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। জলাবদ্ধ এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ বিভিন্ন প্লাকার্ড হাতে মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন।
ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটি ও কেন্দ্রীয় পানি কমিটির আয়োজনে মানববন্ধন অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটি ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল।
মানববন্ধন চলাকালে সহমত পোষণ করে বক্তব্য রাখেন, অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহীনুজ্জামান। এছাড়া আরও বক্তব্য রাখেন- অভয়নগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক কমিটির নেতা শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর, নওয়াপাড়া পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক সুশান্ত কুমার দাস শান্ত, পায়রা ইউপি চেয়ারম্যান ও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব বিষ্ণুপদ দত্ত, খুলনা ডুমুরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মফিকুল ইসলাম, তালা উপজেলা পানি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মঈনুল ইসলাম, পাইকগাছা উপজেলা পানি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আব্দুল মান্নান, অভয়নগর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মোল্যা, যশোর জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লায়লা খাতুন, মনিরামপুর উপজেলার নেহালপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব কামরুজ্জামান, নেহালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, কুলটিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখর চন্দ্র, সুন্দলী ইউপি চেয়ারম্যান বিকাশ রায় কপিল, পৌর কাউন্সিলর জাকির হোসেন, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান শিক্ষক ফিরোজ আলম, মুক্তেশ্বরী কলেজের প্রভাষক মদন মহন চক্রবর্তী প্রমুখ।
বক্তারা যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকা-ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- যশোরের অভয়নগরসহ খুলনার ৩৩০ বর্গকিলোমিটার এলাকার প্রায় ২৫ লাখ মানুষের দুঃখ-দুর্দশার নাম ভবদহ। ২৭টি বিলের সাথে জড়িত লাখ লাখ পরিবার এ জলাবদ্ধার শিকার হয় প্রতি বছর। ভবদহ এলাকার স্লুইস গেটগুলো বিকল হয়ে আছে। সব কয়টি নদীতে নাব্যতা সংকট। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন করা না হলে চলতি বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। বিপদগ্রস্থ হবে ২৫ লাখ মানুষ, গবাদিপশু, ফসলি জমি ও হাজার মৎস্য ঘের। ভবদহ সমস্যার সমাধানের নামে প্রজেক্টের পর প্রজেক্ট গ্রহণ করে যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি টাকা শুধু লুটপাটই হয়েছে, ন্যুনতম সমাধান হয়নি।
ভবদহ জলাবদ্ধতা নিরসন আন্দোলন কমিটি ও অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক আলহাজ্ব এনামুল হক বাবুল বলেন, জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে টিআরএম এর বিকল্প নেই। উজানের সাথে সংযোগ স্থাপন এবং বিল কপালিয়াসহ খাল-বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্টে (টিআরএম) চালু করতে হবে। শ্রীনদী, হরিহর নদী, টেকা নদী, মুক্তেশ্বরী নদীর ভরাট হওয়া তলদেশের মাটি কেটে পাড় বাঁধানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তিনি হুশিয়ারি দিয়ে বলেন ঘোষিত দাবিগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা না হলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধ, রাজপথ-রেলপথ অবরোধ, অনশনসহ কঠোর আন্দোলনের মধ্যদিয়ে হত দরিদ্র ও পানিবন্দি অসহায় ভবদহবাসীর ভাগ্যে ফিরিয়ে আনা হবে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও দাবি বাস্তবায়ন করা হবে।
উল্লেখ্য, সবুজ বিপ্লবের ঘোষণা দিয়ে ১৯৬০ সালের দিকে যশোরের সদর, মনিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর উপজেলা এবং খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ নামকস্থানে শ্রীনদীর উপর নির্মাণ করা হয় ২১ ভেল্টের স্লুইস গেট। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে বর্ষা মৌসুমে বিল তীরবর্তী আশেপাশের শত শত গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এসময় পানিবন্দী মানুষ আন্দোলন শুরু করলে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় ভবদহের পানি নিষ্কাশন প্রকল্প (কেজিডিআরপি) গ্রহণ করা হয়। ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৫৭ কোটি টাকা। সমুদয় অর্থ ব্যয় হওয়ার পরও পানিবদ্ধতার নিরসন হয় না। অভিযোগ ওই অর্থের বড় অংশই লুটপাট হয়। এরপর ২০০৭ সালে ৫৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, দফায় দফায় টিআরএমসহ ছোট ছোট প্রজেক্টে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়।