ঢাকাঃ

‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমাকে মেরো না।’ আরো কিছু বলার চেষ্টা করলেও নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তা আর বলতে পারেননি আবরার ফাহাদ। ওইদিন সন্ধ্যায় বুয়েট শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে ব্যস্ত ছিলেন পড়ালেখায়। রাত ৮টার দিকে আবরারকে ওই হলের দোতলার ২০১১ নম্বর টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে হুমকি দিতে শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতারা। এ পর্যায়ে ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফেসবুক ঘেঁটে বাছ-বিচার না করেই হকি স্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করেন।

সেখানে অবস্থান করা সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিনও আরেকটি হকি স্টিক নিয়ে আবরারকে পেটানোতে অংশ নেন। ওই সময় ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন আবরারের হাত ধরে রাখেন। আর আবরারের পায়ে পেটাতে থাকেন উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল। সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইশতিয়াক মুন্নাও নির্দয়ভাবে পেটাতে শুরু করেন আবরারকে। কেউ হকি স্টিক দিয়ে, কেউ লাঠি দিয়ে, কেউ বা কিল-ঘুষি দিয়ে ইচ্ছামতো আবরারকে পেটানোতে অংশ নেন। এভাবে ২২ জন অংশ নেন এই ভয়ংকর নির্যাতনে। আবরার একটু কাঁদতেও পারেননি। কারণ তখন তাঁর মুখ চেপে ধরা হয়েছিল।

ওই অবস্থার মধ্যেই টর্চার সেলে প্রবেশ করেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ। তাঁরাও অপেক্ষা না করে নিস্তেজ প্রায় আবরারকে পেটাতে শুরু করেন। এভাবেই একপর্যায়ে মেধাবী ছাত্র আবরার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাঁদের গ্রেপ্তার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন ভয়ংকর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল তাঁদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।

জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত ও ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা ভিডিও ফুটেজে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৯ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’

আবরারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা। কিন্তু তাঁকে মামলার আসামি করা হয়নি। এজাহারের বাইরেও এ হত্যার ঘটনায় আরো তিনজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here