রোদ-বৃষ্টি, এসব যে ঘড়ি ধরে চলে, গায়ানায় না এলে বুঝতাম না! ঝাঁ ঝকঝকে দুপুর, নীল আকাশে সাদা মেঘপুঞ্জ আর গা জুড়ানো বাতাস। একটুও ঘাম নেই, নেই রোদের তেজ। এমন উপভোগ্য আবহাওয়ায় কি না বলা নেই-কওয়া নেই ঝপ করে নেমে আসে বৃষ্টি।

বৃষ্টিতে অবশ্য বিচলিত হওয়ার কারণ নেই। এই বৃষ্টি বেশিক্ষণ থাকে না। ১০-২০ মিনিট চরাচর ভিজিয়েই নিরুদ্দেশ! আবার রোদ ওঠে, বাতাস বয়, একটা বিরতিতে বৃষ্টি আবার আসে—এখানকার আবহাওয়া নিশ্চয়ই ঘড়ি ধরে চলে!

গতকাল গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ দলকে ভিজিয়ে দিতে সময় মতোই বৃষ্টি-বাবা চলে এল। আবার চলেও গেল। অনুশীলন বন্ধ রইল মাঝের ২০ মিনিট সময়। কিন্তু মুশফিকুর রহিমের তৎপরতা দেখে মনে হলো বৃষ্টিকে পাত্তা দেওয়ার মানুষ তিনি নন। না কি গায়ানার বৃষ্টি সম্পর্কে ভালো ধারণা আছে বলেই বৃষ্টিতে গা ভিজিয়েই অনুশীলনে নামার প্রস্তুতি নিলেন।

ঘণ্টাখানেক অনুশীলন করলেন। আধঘণ্টা নেটে, আধঘণ্টা মাঝ উইকেটের পাশে। অনুশীলনের ফাঁকে মুশফিকের কাছে এগিয়ে যেতেই বুঝে গেলেন মতলব, ‘আপনারা কিন্তু বেশি লিখেন না। বেশি লিখলেই খারাপ করব।’

কিন্তু প্রথম ওয়ানডেতে যে ইনিংসটা খেলেছেন সেটি নিয়ে একটা লেখা না লিখলে গায়ানা সফর যে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। ৩ চার, ২ ছক্কায় ১১ বলে ৩০। এক ঝটকায় শেষ ২ ওভারে বাংলাদেশের স্কোর ২৩৬ থেকে ২৭৯। সাকিব বলেছেন, তামিম বলেছেন—এই ইনিংসটা বড় অবদান রেখেছে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়তে। মুশফিক যে ঝোড়ো ইনিংস খেলতে পারেন, সেটি বিসিবি সভাপতি গত মার্চে শ্রীলঙ্কার নিদাহাস ট্রফিতে হঠাৎ ‘আবিষ্কার’ করলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটি নতুন নয়।

তবুও মুশফিক স্বীকার করবেন না তিনি ঝড় তুলতে পারেন, ‘আমি এভাবে ব্যাটিং করতে পারি না। সেদিন হয়ে গেছে ভাই। ঝড়ে বক মেরেছি! আমি এ ধরনের ব্যাটসম্যান না। আন্দাজে হয়ে গেছে! আমার কাছে আবারও এমন কিছুর আশা করবেন না। সত্যি বলছি আমি এভাবে খেলতে পারি না।’

বিনয়ের বর্মে মুশফিক নিজেকে আড়াল করতে চান। দূরে থাকতে চান প্রত্যাশার চাপ থেকে। থাকুন, খেলুন নিজের মতো করেই। কিন্তু গায়ানায় যে ‘বাংলাদেশের কন্ডিশন’ পেয়ে গেলেন এটা কিছুটা অবাকই করেছে তাঁকে ‘দ্বিতীয় ওয়ানডেতে উইকেট এ রকমই থাকবে হয়তো। একটু স্লো আর স্পিনারদের জন্য সহায়ক। আসলে অবাকই হয়েছি, আমাদের শক্তির জায়গা যেটা সেটা অনুযায়ী তারা উইকেট বানাচ্ছে। এটা আমাদের বোলারদের জন্য অনেক ভালো।’

সুযোগ যখন এসেছে সেটি কেন হাতছাড়া করবে বাংলাদেশ? মুশফিকরা ভালো করেই জানেন, যা করার গায়ানাতেই করতে হবে। এমন উইকেট নিশ্চয়ই সেন্ট কিটসে পাওয়া যাবে না। মুশফিক গ্লাভস পরেন, ব্যাটটা কাঁধে নিয়ে হাঁটা দেওয়ার আগে বলে যান, ‘এখান থেকে সুযোগটা হাতছাড়া করার উপায় নাই। একটা ছন্দ যখন পেয়ে গেছি, এটা একটা দলের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। যেহেতু ছন্দটা আমাদের হাতে আছে চেষ্টা করব ধরে রাখতে।’

ধরে যদি রাখলেই তো…থাক, মুশফিক বারবার মানা করেছেন এসব নিয়ে লিখতে!

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here