সবুজদেশ ডেক্সঃ চট্টগ্রামে ভোটের মাঠে যেন ‘সবেধন নীলমণি’ সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে তিনি এখন ‘অগ্নিপরীক্ষায়’ বলেও মনে করছেন রাজনীতি সচেতনরা। একদিকে বিভক্তি রোধ, অন্যদিকে দলের অতীত বিভক্তির জেরে নানাভাবে বঞ্চিতদের মান অভিমান ভাঙিয়ে সক্রিয় রেখে চট্টগ্রামের সব কটি আসনে বিজয় অর্জন মেয়র নাছিরের জন্য যেন প্রেস্টিজ ইস্যু। আরও একটি বিশেষ কারণে     এবারকার নির্বাচনে চট্টল মেয়রের অবস্থান বিশেষভাবে আলোচনায়। ঢাকাসহ অন্য একাধিক শহরের মেয়র মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীর মর্যাদা পেলেও মেয়র নাছিরের এই মর্যাদা মিলেনি। এবারকার নির্বাচনের সাফল্যের ওপরই তার পরবর্তী স্বীকৃতি নির্ভর করবে বলেও আলোচনা চলছে রাজনীতির অঙ্গনে। চাটগাঁর অন্য শীর্ষ নেতারা প্রায় সবাই নিজের নির্বাচনী আসন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সিটি মেয়রকে শহর চট্টগ্রাম ছাড়িয়ে কক্সবাজার, ফেনী, কুমিল্লা ও পার্বত্য চট্টগ্রামের আসনগুলো নিয়েও মাথা ঘামাতে হচ্ছে। সকাল থেকে গভীর  রাত  প্রচারণায় ছুটতে হচ্ছে আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম মহানগর শাখার এই সাধারণ সম্পাদককে। গ্রুপিং রাজনীতির তীব্র ভোগান্তি সয়ে দীর্ঘদিন পদবঞ্চিত থাকা সাবেক ছাত্রনেতা আ জ ম নাছির উদ্দিন প্রায় পাঁচ বছর আগে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। এর দেড় বছরের মাথায় মেয়র নির্বাচিত হন। প্রবীণ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তার দীর্ঘকালীন দূরত্ব থাকলেও জীবন সায়াহ্নে তারা দুজনে একই কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন। মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রয়াণের পর মেয়র নাছিরের ওপরই এখন দলের একচ্ছত্র নির্ভরতা। এর শতভাগ প্রমাণও উঠে এসেছে তার নির্বাচনী তৎপরতায়। দল ও মিত্র দলগুলোর প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার পর পরই বিভক্তি কাটিয়ে এক নৌকায় তুলেছেন তিনি। ঐক্য সুসংহত করতে প্রচারণার প্রথম দিনেই নগরের ৪১ ওয়ার্ড আওতাধীন সব কেন্দ্রের নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বই মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজ হাতেই নেওয়ার ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগের শুভার্থীরাও বলছেন, চট্টগ্রামে মহাজোটের প্রার্থীদের জয়-পরাজয় নির্ভর করে মেয়রের ওপরই।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শহরের তিনটি আসন চট্টগ্রাম-৯, ১০ ও ১১। এই তিনটি ছাড়াও চান্দগাঁও-বোয়ালখালী, সীতাকুণ্ড ও হাটহাজারী আসনের আংশিক এলাকা মহানগরের আওতাধীন। চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ এলাকার ভোটার প্রায় ৩ লাখ ১০ হাজার।  মহানগরের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ড হাটহাজারীর অধীন। অন্তত মহানগরীর এই ছয়টি আসনের জয় নিশ্চিত করতে দলের নেতা-কর্মীদের সব বিভক্তি কাটাতে মাঠে নেমেছেন চট্টল মেয়র।

মহাজোট প্রার্থীদের বিজয় নিশ্চিত করতে সভা সমাবেশে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে মেয়র বলেছেন, আমার ওপর আস্থা যদি থাকে, ভালোবাসা থাকে, তাহলে আমার সুস্পষ্ট নির্দেশ মহাজোটের প্রার্থীদের জন্য ভেদাভেদ ভুলে প্রত্যেকেই মাঠে নামুন। ওয়ার্ড কমিটিতে আপনাদের অন্তর্ভুক্ত করল কি করল না, প্রার্থীরা ডাকল কি ডাকল না, সেটা দেখার সময় নেই। প্রার্থীরা আপনাকে মূল্যায়ন করল কিনা, সেটা মনে রাখারও দরকার  নেই। আপনারা আমার আস্থাভাজন। তাই আমি যেটা বলব, সেটাই আপনাদের জন্য সিদ্ধান্ত।

কর্মীদের উদ্দেশে মেয়র নাছির বলেন, মানুষের কাছে গিয়ে হাতে পায়ে ধরে নওফেল, আফছার ভাই, লতিফ ভাই এবং দিদারের জন্য ভোট চাইবেন। যারা চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ এলাকার তারা বাদল ভাইয়ের জন্য ভোট চাইবেন। হাটহাজারী এলাকার নেতা-কর্মীরা লাঙ্গল প্রতীকের জন্য ভোট চাইবেন। এখানে নির্বাচনী কমিটি বড় কথা নয়, নির্বাচনই একমাত্র কথা। নৌকার বিজয়ই চূড়ান্ত কথা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here