মোবাইল ফোনের ‘অযৌক্তিক কলরেট’ বাতিলের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে এ দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দীন আহমেদ বলেন, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন গ্রাহকদের স্বার্থ বিবেচনায় না নিয়ে শুধু অপারেটরদের স্বার্থ বিবেচনা করে কলরেট ২৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪৫ পয়সা নির্ধারণ করেছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার আগে গ্রাহকদের মতামত নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। তাঁর মতে, এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে গ্রাহকদের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এর জন্য কমিশন প্রয়োজনে গণশুনানি করতে পারত। তা না করে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত গ্রাহককে মানতে বাধ্য করা একটি অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক সিদ্ধান্ত।

মহিউদ্দীন আহমেদ আরও বলেন, ‘গণমাধ্যমে বিটিআরসি কর্মকর্তাদের বক্তব্যে জানতে পারলাম, আগের ২৫ পয়সা কাগজে-কলমে হলেও রেট পড়ত ৩৫ পয়সার ওপরে। আমরা মনে করি, তাদের এ ধরনের বক্তব্য ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থী। এতে করে অপারেটরদের দুর্নীতিকে প্রকাশ্যে প্রশ্রয় দিয়েছে কমিশন।’ তাঁর মতে, বর্তমান রেটে অপারেটর, আইসিএক্স, আইজিডব্লিউ, এনটিটিএন এবং ভ্যাট যোগ করলে কলরেট দাঁড়াবে প্রায় ৫২ পয়সা, যা আগের অফনেটের ফ্লোররেটের সমান। এই কলরেট বৃদ্ধির ফলে অপারেটররা সাময়িকভাবে লাভবান হলেও ভবিষ্যতে গ্রাহকেরা বিকল্প পথে কথা বলা শুরু করলে অপারেটররা ব্যবসায় বিনিয়োগ হারাতে পারে।

মহিউদ্দীন আহমেদ অভিযোগ করেন, এমএনপি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দুর্বল অপারেটরদের বাঁচিয়ে রাখার স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত বিটিআরসি নিয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তিনি সরকারের কাছে এ ধরনের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে জনমত যাচাই করে বাস্তবায়ন করার দাবি জানান।

মানববন্ধনে সিপিবির সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রুহিন হোসেন বলেন, শুধু অপারেটরদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লোকচক্ষুর অন্তরালে এই মূল্যবৃদ্ধি মেনে নেওয়া যায় না। অতি দ্রুত মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল করে জনগণের কাছ থেকে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ জনগণকে ফেরত প্রদান করার দাবি জানান তিনি।

গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন।

বাসদের কেন্দ্রীয় নেতা রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, নতুন এই কলরেটের ফলে গ্রাহকের পকেট থেকে বছরে ছয় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হবে। তাই মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে সরকারকে দ্রুত নতুন কলরেট বাতিল করা আহ্বান জানান তিনি।

মানববন্ধনে আরও অংশ নেন সাবেক সাংসদ অধ্যাপক হুমায়ুন কবির, ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান কাজী ছাবের আহমেদ ছাব্বীর, দুর্নীতি প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি হারুন অর রশিদ খান, নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক সামছুল আলম প্রমুখ।

১৩ আগস্ট মধ্যরাত থেকে মোবাইল ফোনের প্রতি মিনিটে সর্বনিম্ন একক কলরেট ৪৫ পয়সা চালু হয়। এর ফলে মোবাইল ফোনে কথা বলার ক্ষেত্রে অফনেট ও অননেট সুবিধা থাকছে না। একই অপারেটরের নম্বরে ফোন করা হলে সেটিকে বলা হয় অননেট আর অন্য অপারেটরে ফোন করা হলে তা হয় অফনেট। সর্বোচ্চ কলরেট আগের মতোই ২ টাকা রয়েছে।

খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নম্বর পরিবর্তন না করে অপারেটর পরিবর্তনের সুবিধা মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) চালুর আগে অননেট ও অফনেট কলের পার্থক্য দূর করা দরকার ছিল। এটা না করা হলে বাজার প্রতিযোগিতায় ছোট অপারেটররা ক্ষতিগ্রস্ত হতো। নতুন কলরেট অনুযায়ী এখন মোবাইল ফোন অপারেটররা গ্রাহকদের জন্য নতুন মূল্য নির্ধারণ করবে।

অপারেটরদের দাবি, নতুন কলরেটে গ্রাহকের ফোন করার খরচ কমবে। কারণ, এত দিন অননেট কলে সর্বনিম্ন মূল্য কাগজে-কলমে ২৫ পয়সা হলেও প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কলে গড়ে গ্রাহকের খরচ হতো ৪০ পয়সা। আর অফনেট অর্থাৎ অন্য অপারেটরে কল করার খরচ পড়ে ৯০ পয়সা থেকে ১ টাকা ৪৫ পয়সা পর্যন্ত। একক কলরেট চালু হলে অননেট কলের খরচ ৫ পয়সা বাড়বে, কিন্তু অফনেট কলের খরচ কমবে ৪৫ থেকে ৫০ পয়সা। এতে গ্রাহকসংখ্যায় পিছিয়ে থাকা অপারেটরের গ্রাহকেরা বেশি সুবিধা পাবেন।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে গ্রামীণফোন থেকে ৯০ শতাংশ কল হয় অননেটে, ১০ শতাংশ কল অফনেটে হয়। অন্যদিকে, সরকারের মালিকানাধীন অপারেটর টেলিটকের ১০ শতাংশ কল অননেটে ও ৯০ শতাংশ কল অফনেটে হচ্ছে। রবি ও বাংলালিংকের অননেট-অফনেট কলের পরিমাণ ৭০ ও ৩০ শতাংশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here