সবুজদেশ ডেস্কঃ

দেশে চলমান লকডাউন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়লেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ‘কার্যকর’ লকডাউনের কোন বিকল্প নেই এবং এটি কার্যকর করতে সরকার প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সহায়তা নিতে পারে এবং জারি করতে পারে রাত্রীকালীন কারফিউ।

স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৭৬২৪ জন, আর মারা গেছে ৬৩ জন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইতোমধ্যেই সতর্ক করে বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পুরো শহরকে হাসপাতাল বানালেও জায়গা দেয়া যাবে না।

বুধবারও এক অনুষ্ঠানে করোনা প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় সরকারের নানা পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে সংক্রমণ রোধের ওপরই জোর দিয়েছেন তিনি ।

তিনি বলেন, “আমরা আমাদের চেষ্টা করে যাচ্ছি। সংক্রমণ রোধ করতে হবে। একটি হাসপাতাল তৈরি করছি। কিন্তু আমরা জানি এটাও অপ্রতুল হবে সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে”।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণের গতি রোধের জন্যই গত ২৯শে মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমে ১৮-দফা নির্দেশনা দেয়া হয়েছিলো। পরে গত সোমবার থেকে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়, যা জনসাধারণের মাঝে লকডাউন হিসেবে পরিচিত পায়।

কিন্তু বাস্তবতা হলো সেটি মাত্র দু’দিন পরেই ভেঙে পড়েছে এবং কর্তৃপক্ষ নিজেই শহরের মধ্যে বাস চালনার অনুমতি দিয়েছে। অর্থাৎ, একদিকে অকার্যকর হয়েছে লকডাউন, অন্যদিকে স্বাস্থ্যবিধি পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করা যায়নি।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির পরিচালক কাওসার আফসানা বলেন, একটি কার্যকর লকডাউন ছাড়া সংক্রমণের গতিরোধের আর কোন বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, “পুলিশ বা আর্মি যাদের দিয়ে অন্য দেশে কন্ট্রোল করা হয়েছে, আমাদের দেশেও তা করতে হবে। দু’সপ্তাহ কঠোর লকডাউন করেন। লকডাউন মানে সব বন্ধ থাকবে। একটু আস্থা দিতে হবে যে তুমি ঘরে থাকলে কি করবো। কিন্তু লকডাউনের কোন বিকল্প নেই।”

কাওসার আফসানা আরো বলেন, যে কোন ধরণের জমায়েত বন্ধে কঠোরতার পাশাপাশি লকডাউনে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাদের সরাসরি সহায়তা নিশ্চিত করে আগ্রহী করতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুশতাক হোসেন বলেন, কোভিড -১৯ সংক্রমণের গতি ঠেকাতে লকডাউনই বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি উপায়। তিনি বলেন, ওপর থেকে চাপিয়ে না দিয়ে দেশের প্রেক্ষাপটে লকডাউন কার্যকর করার উপায় খুঁজতে হবে কর্তৃপক্ষকে।

“ওপর থেকে ঘোষণা করলাম, বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে করলে হবে না। শুরুর দিকে যা করা হয়েছিলো তা এখন করলে হবে না। ব্যবস্থা এটাই যে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন জায়গায় সীমিত করণ ও কোন কোন জায়গা খুলে দেয়া। কিন্তু এটি কার্যকরে মনোযোগী হতে হবে।”

দেশে গত বছর ২৫শে মার্চ সরকার প্রাথমিকভাবে ১০ দিনের একটি লকডাউন ঘোষণা করেছিল যা পরে কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছিলো। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসায় জুনের পর লকডাউন শিথিল করে নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু এবারের লকডাউন কার্যত ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে ব্যবসায়ীদের চাপ আর মানুষের দুর্ভোগ কমাতে যান চলাচলে অনুমতি দেয়ার কারণেই। আবার জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অভিভাবকের জমায়েতের সুযোগ দেয়া কিংবা মেলা চালু রাখা ছাড়াও নানা জায়গায় নানা সমাবেশ করতে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ লেনিন চৌধুরী বলেন, বাস্তবতার ভিত্তিতে কৌশল নিয়ে প্রয়োজনে রাত্রিকালীন কারফিউর কথাও বিবেচনা করতে পারে সরকার।

তিনি বলেন, “সমস্ত সভা সমাবেশ মেলা ও খেলা বন্ধ করতে হবে। দোকানপাট অফিস ছয় ঘণ্টা খোলা রাখা যেতে পারে এবং রাতে কারফিউ জারি হতে পারে।”

তবে পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে কার্যকর লকডাউনের জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নেয়া বা রাত্রিকালীন কারফিউর প্রয়োজনীয়তা আছে কি-না সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে কোন মতামত পাওয়া যায়নি।

তবে কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জায়গাগুলোকে ঘিরে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে এবং তার আলোকেই মঙ্গলবার মাদ্রাসাগুলো বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং বুধবারই ধর্মীয় উপাসনালয়েও গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here