ঢাকাঃ

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে নিহত আবরারের পরিবারকে অর্থিক সহায়তা এবং বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধসহ শিক্ষার্থীদের ৫ দফা বাস্তবায়নযোগ্য দাবি মেনে নিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শনিবার দুপুরে এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মু. সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত ৫টি আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা চলাকালীন সকল খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং আবরার ফাহাদেরর পরিবারকে বুয়েট প্রশাসন থেকে প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ১০১১ কক্ষের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদের অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক হত্যার ঘটনায় করা মামলায় এজাহারভুক্ত ১৯ জনকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।

এতে আরো বলা হয়েছে, এই আদেশ অবিলম্বে কার্যকর করা হবে। তদন্ত চলমান আছে এবং তদন্ত শেষে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের আলোকে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিন্ডিকেটের অনুমোদনের মাধ্যমে দোষীদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে। এ ছাড়াও আদালতের বিচারে এই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে তাকেও স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হইবে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল রাজনৈতিক সংগঠন এবং এর কার্যক্রম কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে নিষিদ্ধ করা হলো।

সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য আরো জানানো যাচ্ছে যে, অবৈধভাবে যারা আবাসিক হলের সিট দখল করে আছে তাদেরকে অতিসত্বর হলের সিট খালি করা এবং সাংগঠনিক অফিস বন্ধ করে তা সিলগালা করার জন্য ছাত্রকল্যাণ পরিচালক ব্যবস্থা নেবেন। আগামীকাল ১২ তারিখ থেকে উল্লিখিত কাজগুলো শুরু করা হবে।

ভবিষ্যতে সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি করার চেষ্টা করলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোনো শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ আসলে তা ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

র‌্যাগিংয়ের মাধ্যমে ছাত্রদের নির্যাতনের ঘটনা সংক্রান্ত অভিযোগ জমাদান ও প্রকাশের জন্য একটি ওয়েববেইজড পোর্টাল তৈরি করা হবে। সেখানে যেকোনো ছাত্র একটি ফরমের মাধ্যমে তার অভিযোগ অনলাইনে জমা দিতে পারবে। অভিযোগসমূহ পর্যবেক্ষণ করে ডিসিপ্লিনারি কমিটির মাধ্যমে দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়াও সবগুলো হলের দুই পাশে প্রয়োজনীয় সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার রাতে আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা এসব বিষয় সংক্রান্ত ৫ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান। তা না হলে আগামী ১৪ অক্টোবরের ভর্তি পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এর পর আজ শনিবার সকালে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কর্তৃপক্ষ এই বিজ্ঞপ্তি জারি করে।

উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষের আবাসিক ছাত্র আবরার ফাহাদকে ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে শিবির সন্দেহে অকথ্য নির্যাতন করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাত ৩টার দিকে সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে হল প্রশাসন।

এর পর থেকেই প্রথমে ৮ এবং পরে ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর পর আন্দোলনের পঞ্চম দিনে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন বুয়েট ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। সেখানে বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং এ ঘটনায় হওয়া মামলার ১৯ আসামিকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘোষণা দেন ভিসি।

পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বাস্তবায়নযোগ্য (যেগুলো বুয়েট কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করতে পারবে) ৫ দফা দাবি জানান। তবে অন্য দাবিগুলো আদায়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানান শিক্ষার্থীরা।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here