মার্জিন ঋণের নীতিমালার বরখেলাপ করে ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় আরও ১২ মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ সোমবার দুদকের জনসংযোগ বিভাগ জানিয়েছে, রাজধানীর রমনা মডেল থানায় এসব মামলা করেন সংস্থার সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

এই ১২ মামলায় মোট আসামি করা হয়েছে মোট ১৫ জনকে। ১২ মামলায় ৬১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সব কটি মামলাতেই আসামি হয়েছেন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) পাঁচ কর্মকর্তা। তাঁরা হলেন আইসিবির সাবেক উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) টিপু সুলতান ফারাজি, তিন সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মো. এহিয়া মণ্ডল, মো. সামছুল আলম আকন্দ ও শরিকুল আনাম, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার ধনঞ্জয় কুমার মজুমদার।

অন্য আসামিরা হলেন আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুস সামাদ ও তাঁর স্ত্রী নাসিমা আক্তার; তেজগাঁও স্টাফ কোয়ার্টারের এ কে এম রেজাউল হক ও তাঁর স্ত্রী পাপিয়া সুলতানা; মোহাম্মদপুর খিলজী রোডের লাইলা নুর; তেজাগাঁও মণিপুরিপাড়ার এ কে এম আতিকুজ্জামান; গ্রিন রোডের কাজী মাহমুদুল হাসান; গুলশানের শেখ মেজবাহ উদ্দিন ও তাঁর মেয়ে শিমা আক্তার এবং শ্যামলীবাগের বুলবুল আক্তার।

গত বৃহস্পতিবার একই ধরনের অভিযোগে রমনা থানায় আরেকটি মামলা হয়। সে মামলায় আইসিবির পাঁচ কর্মকর্তা ও আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপক আব্দুস সামাদকে আসামি করা হয়। একই দিন আইসিবির তিন কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এঁরা হলেন টিপু সুলতান ফারাজি, মো. এহিয়া মণ্ডল ও মো. আবদুস সামাদ।

শেয়ারবাজারে কারসাজির এই ১৩ মামলার ঘটনাগুলোর ধরন একই রকমের। এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০০৮ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে শেয়ারবাজারে উল্লম্ফনের সময় কারসাজির ঘটনাগুলো ঘটে। ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান আইসিবি সিকিউরিটিজ ট্রেডিং কোম্পানি লিমিটেডের (আইএসটিসিএল) কিছু কর্মকর্তা গ্রাহককে অনিয়মের মাধ্যমে লেনদেনের সুযোগ করে দিয়ে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত বছরের শেষ দিকে এ-সংক্রান্ত অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।

সূত্র জানায়, অনুসন্ধান শুরু করার পরও অকাট্য প্রমাণের অভাবে জালিয়াতদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। দীর্ঘ অনুসন্ধানে আইসিবির বেশ কিছু কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ৬৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা আত্মসাতের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ মিলেছে। দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, অনুসন্ধান এখনো চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে মামলার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মামলার অনুসন্ধানের তথ্য উদ্ধৃত করে দুদকের উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র বলেছে, বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাবের মালিকদের মার্জিন ঋণের সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করে শেয়ার কেনার পাশাপাশি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ডেবিট স্থিতির ওপর টাকা তুলে নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

এজাহারে বলা হয়, ২০০৯ সালের শেষের দিকে শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে ক্রমাগত বাড়তে থাকে। অতি মুনাফার লোভে গ্রাহক ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় নেগেটিভ পারচেজ থাকা সত্ত্বেও বিও হিসাবধারী তাঁর অ্যাকাউন্টের সীমার বাইরে ব্যাপক অনিয়ম ঘটিয়ে সরকারি অর্থে অস্বাভাবিক ঋণ নিয়ে শেয়ার কেনেন। পরে শেয়ারের দর পড়ে যাওয়ায় সরকারের বড় অঙ্কের আর্থিক ক্ষতি হয়।

দুদক বলেছে, বিও হিসাব এবং আইসিবি তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্ট হিসাবে মার্জিন ঋণের সীমা অতিক্রম করে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগ হিসাবধারীকে আইএসটিসিএলের কর্মকর্তারা সুবিধা দিয়েছেন। এসব কর্মকর্তা প্রতিদিন লেনদেন শেষে গ্রাহক হিসাবের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় আদেশ অনুযায়ী যথাযথ আছে কি না, তা নিশ্চিত না করে জেনেশুনে অসৎ উদ্দেশ্যে নিজেরা লাভবান হয়ে অনৈতিক সুবিধা দিয়েছেন।

মামলায় এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণার মাধ্যমে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করে সরকারি অর্থের ক্ষতি সাধন করে অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মার্জিন ঋণের অনিয়ম ঘটিয়ে গ্রাহককে তাঁর অ্যাকাউন্টে নিয়মবহির্ভূত লেনদেন করার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here