ঢাকা ০৭:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শৈলকুপায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিষধর সাপ নিয়ে ঝাপান খেলা

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

বিষধর সাপকে বসে আনা মানুষের কাছে চিরকালই আকর্ষণীয়। তারওপর যদি একের পর এক প্রদর্শন করা হয় বিষধর সাপের নানা কৌশল তাহলে তো কথাই নেই । বাদ্যের তালে তালে হাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে বিষধর গোখরা সাঁপ। আর সাপুড়ে সেই সাপের সর্বোচ্চ ফনা তোলাতে দেখাচ্ছেন নানা অঙ্গভঙ্গি। সেই সাথে পরিবেশন করা হচ্ছে মনসামঙ্গলের পালাগান। অন্য সাপুড়ে সাপের ফনা নামাতে দিচ্ছেন ঝাড়ফুক। এমনই ঝাপান খেলার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার সাধুখালী গ্রামে।

গ্রামবাসীর আয়োজনে শনিবার মির্জাপুর ইউনিয়নের সাধুখালী বাজারে এ ঝাঁপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলা উপভোগ করতে আশাপাশ এলাকা থেকে ছুটে আসে হাজারো উৎসুক জনতা। খেলাকে ঘিরে ওই এলাকা পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরীতে। বাশির সুরে একে একে হাড়ি থেকে বের হয়ে আসে গোখরাসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ। বাদ্যের তালে সাপুড়েকে নিজে নাচতে হয় আর সাথে ফনা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গ ভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। শনিবার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, শিশুরা উপস্থিত থেকে নিবিড় দৃষ্টিতে উপভোগ করেন এই খেলা। আর খেলাকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। পাংশা, রাজবাড়ী, ঝ্উাদিয়া, কুমারখালী ও শৈলকুপা থেকে আসে ৮টি সাপুড়ে দল। ৮টি সাপুড়ে দলের অর্ধ শতাধিক সাপের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে প্রতিটি সাপ প্রদর্শন করে নিজেদের আকর্ষণীয় কসরত। আর এই দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে জীবনে প্রথম আবার অনেকেই অনেক দিন পর দেখছেন এ খেলা। এই ঝাপান খেলা দেখে খুবই আনন্দিত দর্শক। তাই প্রতিনিয়ত এ ধরনের আয়োজন করার দাবি তাদের। আর সাপুড়েরা জানান, মানুষকে আনন্দ দেওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্যে।

দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীরা বালেন, বাংলার ঐতিহ্য যে এত মনোমুগ্ধকর তা না দেখলে বোঝা যাবে না। ঝাপান খেলা দেখে আজ তা বুঝতে পারছি। এ ধরনের আয়োজন যদি বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে করা হতো তাহলে বর্তমান প্রজন্ম বাংলার আদি রূপ সম্পর্কে ধারনা পেত।

গ্রামবাসীর পক্ষে আয়োজক মির্জাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি বলেন, চিরায়ত বাংলার ঐহিত্যবাহী এ খেলা ধরে রাখতেই এই আয়োজন। মানুষকে নিবিড় আনন্দ দেওয়ার মধ্যে থেকে নিজেদের আনন্দ পাওয়া। প্রতিবছর এ ধরনের আয়োজন করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

দিনভর এ খেলায় সকলকে হারিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে শৈলকুপা উপজেলার ভগবান নগর এলাকার বিখ্যাত সাপুড়ে সোহেল ও তার দল। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে দুধসর চাঁদপুর এলাকার লিটন সাপুড়ে ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে বেতাই চন্ডিপুর এলাকার খোকন সাপুড়ে।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী থেকে খেলা উপভোগ করেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও মির্জাপুর ইউপি চেয়্যারম্যান মকবুল হোসেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি আবু বক্কর,সাধারন সম্পাদক আতিয়ার রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম টুলু প্রমুখ। খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

গ্রামবাসির পক্ষ হতে একক নেতৃত্বে সার্বিক তত্বাবধানে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাবেক ইউ,পি সদস্য ও মির্জাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ।

About Author Information
আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
৬৩৭ Time View

শৈলকুপায় অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিষধর সাপ নিয়ে ঝাপান খেলা

আপডেট সময় : ০৪:৪৮:৩৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ঝিনাইদহঃ

বিষধর সাপকে বসে আনা মানুষের কাছে চিরকালই আকর্ষণীয়। তারওপর যদি একের পর এক প্রদর্শন করা হয় বিষধর সাপের নানা কৌশল তাহলে তো কথাই নেই । বাদ্যের তালে তালে হাড়ি থেকে বেরিয়ে আসছে বিষধর গোখরা সাঁপ। আর সাপুড়ে সেই সাপের সর্বোচ্চ ফনা তোলাতে দেখাচ্ছেন নানা অঙ্গভঙ্গি। সেই সাথে পরিবেশন করা হচ্ছে মনসামঙ্গলের পালাগান। অন্য সাপুড়ে সাপের ফনা নামাতে দিচ্ছেন ঝাড়ফুক। এমনই ঝাপান খেলার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ঝিনাইদহ শৈলকুপা উপজেলার সাধুখালী গ্রামে।

গ্রামবাসীর আয়োজনে শনিবার মির্জাপুর ইউনিয়নের সাধুখালী বাজারে এ ঝাঁপান খেলা অনুষ্ঠিত হয়। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ খেলা উপভোগ করতে আশাপাশ এলাকা থেকে ছুটে আসে হাজারো উৎসুক জনতা। খেলাকে ঘিরে ওই এলাকা পরিণত হয়েছিল উৎসবের নগরীতে। বাশির সুরে একে একে হাড়ি থেকে বের হয়ে আসে গোখরাসহ বিভিন্ন বিষধর সাপ। বাদ্যের তালে সাপুড়েকে নিজে নাচতে হয় আর সাথে ফনা তুলে সাপও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে। সাপুড়ের ইশারায় সাপের এই অঙ্গ ভঙ্গি প্রদর্শন মানুষকে দেয় অনাবিল আনন্দ। শনিবার বিকেলে উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, শিশুরা উপস্থিত থেকে নিবিড় দৃষ্টিতে উপভোগ করেন এই খেলা। আর খেলাকে ঘিরে এখানে সৃষ্টি হয় উৎসবের আমেজ। পাংশা, রাজবাড়ী, ঝ্উাদিয়া, কুমারখালী ও শৈলকুপা থেকে আসে ৮টি সাপুড়ে দল। ৮টি সাপুড়ে দলের অর্ধ শতাধিক সাপের মধ্যে নিজেকে সেরা প্রমাণ করতে প্রতিটি সাপ প্রদর্শন করে নিজেদের আকর্ষণীয় কসরত। আর এই দুর্লভ দৃশ্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে জীবনে প্রথম আবার অনেকেই অনেক দিন পর দেখছেন এ খেলা। এই ঝাপান খেলা দেখে খুবই আনন্দিত দর্শক। তাই প্রতিনিয়ত এ ধরনের আয়োজন করার দাবি তাদের। আর সাপুড়েরা জানান, মানুষকে আনন্দ দেওয়াই তাদের মূল উদ্দেশ্যে।

দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসা দর্শনার্থীরা বালেন, বাংলার ঐতিহ্য যে এত মনোমুগ্ধকর তা না দেখলে বোঝা যাবে না। ঝাপান খেলা দেখে আজ তা বুঝতে পারছি। এ ধরনের আয়োজন যদি বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে করা হতো তাহলে বর্তমান প্রজন্ম বাংলার আদি রূপ সম্পর্কে ধারনা পেত।

গ্রামবাসীর পক্ষে আয়োজক মির্জাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি বলেন, চিরায়ত বাংলার ঐহিত্যবাহী এ খেলা ধরে রাখতেই এই আয়োজন। মানুষকে নিবিড় আনন্দ দেওয়ার মধ্যে থেকে নিজেদের আনন্দ পাওয়া। প্রতিবছর এ ধরনের আয়োজন করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

দিনভর এ খেলায় সকলকে হারিয়ে প্রথম স্থান অধিকার করে শৈলকুপা উপজেলার ভগবান নগর এলাকার বিখ্যাত সাপুড়ে সোহেল ও তার দল। দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে দুধসর চাঁদপুর এলাকার লিটন সাপুড়ে ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে বেতাই চন্ডিপুর এলাকার খোকন সাপুড়ে।

উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথী থেকে খেলা উপভোগ করেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও মির্জাপুর ইউপি চেয়্যারম্যান মকবুল হোসেন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন আওয়ামিলীগের সভাপতি আবু বক্কর,সাধারন সম্পাদক আতিয়ার রহমান, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম টুলু প্রমুখ। খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

গ্রামবাসির পক্ষ হতে একক নেতৃত্বে সার্বিক তত্বাবধানে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন সাবেক ইউ,পি সদস্য ও মির্জাপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি মোস্তাক আহম্মেদ।