ঝিনাইদহঃ

১৪ অক্টোবর, ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪১ জন নিহত হয়েছিলেন। দিবসটি উপলক্ষে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।

আজ ১৪ অক্টোবর। ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর ট্র্যাজেডি দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক সেনাদের সঙ্গে মুখোমুখি যুদ্ধে ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ নিহত হয়েছিলেন ৪১ জন।

জানা যায়, যুদ্ধের শুরুতে শৈলকূপায় মুক্তিযোদ্ধারা শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন। তারা পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেন। কখনো চোরাগোপ্তা আবার কখনো সামনাসামনি আক্রমণ চালাতে থাকেন। হামলায় পাক বাহিনীরা নাকাল হয়ে পড়ে। সুবিধাজনক অবস্থানের জন্য শৈলকূপা উপজেলার আবাইপুর, কুমড়িদহ ও ভবানীপুরে মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প স্থাপন করেন। দীর্ঘ সময় তারা ওই এলাকা হানাদার মুক্ত রাখেন।

১৩ অক্টোবর বিকেলে মুক্তিযোদ্ধারা খবর পান পার্শ্ববর্তী মাগুরা জেলার শ্রীপুরে পাক সেনারা অবস্থান নিয়েছে। ১৪ অক্টোবর সকালে খবর আসে পাক বাহিনী খামারপাড়ায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। তাদের গতি শৈলকূপার দিকে। মুক্তিযোদ্ধারা তাৎক্ষণিক বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নেন, পাক বাহিনীকে প্রতিহত করার। আবাইপুর বাজারের পাশে ১১৩ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বাঙ্কার খনন করে তার ভেতর অবস্থান নেন। যুদ্ধ পরিচালনায় কমান্ডের দায়িত্বে ছিলেন এয়ারম্যান মুজিবর রহমান। মুক্তিযোদ্ধারা তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হন। তাদের কমান্ডে ছিলেন শহীদ নজরুল ইসলাম, মনোয়ার হোসেন ও রইচ উদ্দিন। সারাদিন শত্রুর প্রতীক্ষায় ছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেদিন ছিল আবাইপুর বাজারের দিন।

মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর পাক চররা হানাদার বাহিনীর কাছে পৌঁছে দেয়। যে কারণে তারা দিনের বেলায় আসেনি। ভোর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে পাক বাহিনীরা। তারা ভারী অস্ত্র দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানগুলোর ওপর ব্যাপক গুলি বর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা আক্রমণ চালায়। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ চলতে থাকে। বাঙ্কারের ভেতর পাক সেনাদের সঙ্গে হাতাহাতি যুদ্ধও চলে। একে একে শহীদ হন ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ ৪১ জন। পাক সেনাদের একজন লেফটেন্যান্ট নিহত হন।

ভোরের আলো ফুটে ওঠার আগে পাক সেনারা শৈলকূপার দিকে রওনা দেয়। সঙ্গে করে নিয়ে আসে যুদ্ধে বন্দি ছয়জন মুক্তিযোদ্ধাকে। তাদেরকে শৈলকূপা ব্রিজের পাশে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর নদীর দক্ষিণ পাশে গণকবর দেওয়া হয়।

আবাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের আশেপাশে ও জিকে খালের পাশে তিনটি গণকবরে স্থানীয়রা শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের দাফন করেন। শহীদ যোদ্ধাদের সকলের পরিচয় আজও জানা যায়নি। আবাইপুর গণকবরে লেখা ফলকে কয়েকজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম লেখা আছে।

তাঁরা হলেন- নজরুল ইসলাম, আবুল হোসেন, আবু জাফর, ইসমাইল হোসেন, চেতন জোয়ার্দ্দার, ইউসুফ আলি, আবু সুফিয়ান, সিরাজুল ইসলাম, দিদার আলি, কাশেম আলি, আজিবর রহমান ও বাবর আলি।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here