ঢাকা ০৪:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সন্ত্রাসী ছেলের হাত থেকে বাঁচতে চায় তার বাবা

Reporter Name

‘আমার সন্ত্রাসী ছেলে আমাকে আর বাঁচতে দেবে না। তার জন্য কোথাও মুখ দেখাতে পারছি না। ছেলের অপকর্মের জন্য পুলিশ খোঁজে আমাকে। আমার দুই মেয়ে কলেজে পড়ে। তারাও ভাইয়ের অপকর্মের জন্য বাইরে বের হতে চায় না। এখন আপনারা আমাকে বাঁচান। তা না হলে ছেলের কারণে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’ গতকাল শনিবার (১৩ অক্টোবর) সাংবাদিকদের কাছে এসে এভাবে আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স চালক আজব আলী। আজব আলী বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমি কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কর্মরত। আমার সুখের সংসার ছিল। কিন্তু একমাত্র ছেলের কারণে সে সুখের সংসারে আজ নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি সবাই।’ আজব আলীর তিন ছেলেমেয়ে। একমাত্র ছেলে রাজু আহমেদ (৩৫) নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এখন বড় ধরনের সন্ত্রাসী। মেয়ে দুটি বর্তমানে মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে অধ্যায়নরত। ছেলে রাজু সবার বড়। সংসারে একমাত্র ছেলে হওয়ায় সবাই রাজুকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো। তাকে ঘিরে পরিবারের বড় আশা ছিল সে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু সে আশা আজ ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছে পরিবারটিতে। আজব আলীর বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর গ্রামে হলেও চাকরির সুবাদে তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোয়ার্টারে বসবাস করতেন পরিবার নিয়ে। ওই সময় কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে রাজু। এরপর বখে যায় সে। আজব আলী বলেন, ছেলেকে ভালো পথে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। দিন দিন রাজুর অপকর্মের মাত্রা বাড়তে থাকে। বিষয়টি আমি মেনে না নেওয়ায় সে বাড়ি থেকে চলে যায়। বর্তমানে সে চার-পাঁচ বছর ধরে বাড়িতে আসে না। বাড়ির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সে কোথায় আছে আমরা কেউ তা জানি না। ছেলে চলে যাওয়ায় মনোকষ্টে পরিবারের অন্য সবাইকে কোয়ার্টার থেকে গ্রামের বাড়ি মহেশপুরে পাঠিয়ে দিয়েছি। অথচ পুলিশ প্রায়ই আমার বাড়ি আসে বিভিন্ন থানা থেকে তাকে খুঁজতে। তাদের কাজ থেকে জানতে পারি রাজুর নামে হত্যা, ডাকাতি, মোটরসাইকেল চুরির মামলা রয়েছে। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানায় রাজুর বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল চুরির মামলা করেছেন ওই এলাকার অ্যাড. আবু তালেব। তিনি রাজুর সঙ্গে আমাকেও (আজব আলীকে) আসামি করেছেন। আজব আলী বলেন, কয়েক দিন আগে বাসায় পুলিশ আসলে বিষয়টি আমি জানতে পারি। সরকারি চাকরি করি বিধায় পুলিশ আমাকে দয়া দেখিয়ে গ্রেপ্তার না করে আদালত থেকে জামিনের পরামর্শ দেন। এরপর চুয়াডাঙ্গা আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন আজব আলী। রাজু সম্পর্কে মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশিদুল আলম বলেন, আমরা রাজুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সে বড় ধরনের সন্ত্রাসী। আমার থানাতেই হত্যা, ডাকাতি, মোটরসাইকেল চুরিসহ চারটি মামলা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজুর দলে ৫-৬ জন সদস্য রয়েছে। এরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কামলা খাটার কাজ বেছে নেয়। সেখানে কয়েক দিন অবস্থান নিয়ে সুযোগ বুঝে অপকর্ম ঘটিয়ে অন্যত্র চলে যায়। রাজুর বিরুদ্ধে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, দামুড়হুদা থানাসহ বিভিন্ন থানায় হাফ ডজনের ওপর মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। সবশেষে পিতা আজব আলী বলেন, ‘আমি এ নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। দয়া করে আপনারা রাজুকে দেখামাত্র পুলিশের হাতে তুলে দেন। আর পারছি না। আমি একজন বড় অসহায় পিতা। পিতা হয়ে আমার বড় আদরের রাজুর মৃত্যু কামনা করছি। কথাটি বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আজব আলী।

About Author Information
আপডেট সময় : ১২:৪২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৮
৮৯৬ Time View

সন্ত্রাসী ছেলের হাত থেকে বাঁচতে চায় তার বাবা

আপডেট সময় : ১২:৪২:৩৭ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৮

‘আমার সন্ত্রাসী ছেলে আমাকে আর বাঁচতে দেবে না। তার জন্য কোথাও মুখ দেখাতে পারছি না। ছেলের অপকর্মের জন্য পুলিশ খোঁজে আমাকে। আমার দুই মেয়ে কলেজে পড়ে। তারাও ভাইয়ের অপকর্মের জন্য বাইরে বের হতে চায় না। এখন আপনারা আমাকে বাঁচান। তা না হলে ছেলের কারণে আমার আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই।’ গতকাল শনিবার (১৩ অক্টোবর) সাংবাদিকদের কাছে এসে এভাবে আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স চালক আজব আলী। আজব আলী বলেন, ‘২০ বছর ধরে আমি কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে কর্মরত। আমার সুখের সংসার ছিল। কিন্তু একমাত্র ছেলের কারণে সে সুখের সংসারে আজ নরক যন্ত্রণা ভোগ করছি সবাই।’ আজব আলীর তিন ছেলেমেয়ে। একমাত্র ছেলে রাজু আহমেদ (৩৫) নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে এখন বড় ধরনের সন্ত্রাসী। মেয়ে দুটি বর্তমানে মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজে অধ্যায়নরত। ছেলে রাজু সবার বড়। সংসারে একমাত্র ছেলে হওয়ায় সবাই রাজুকে প্রাণের চেয়ে বেশি ভালোবাসতো। তাকে ঘিরে পরিবারের বড় আশা ছিল সে লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু সে আশা আজ ভীষণ যন্ত্রণাদায়ক হিসেবে দেখা দিয়েছে পরিবারটিতে। আজব আলীর বাড়ি ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভালাইপুর গ্রামে হলেও চাকরির সুবাদে তিনি কোটচাঁদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোয়ার্টারে বসবাস করতেন পরিবার নিয়ে। ওই সময় কোটচাঁদপুর পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে রাজু। এরপর বখে যায় সে। আজব আলী বলেন, ছেলেকে ভালো পথে আনতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি। দিন দিন রাজুর অপকর্মের মাত্রা বাড়তে থাকে। বিষয়টি আমি মেনে না নেওয়ায় সে বাড়ি থেকে চলে যায়। বর্তমানে সে চার-পাঁচ বছর ধরে বাড়িতে আসে না। বাড়ির সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। সে কোথায় আছে আমরা কেউ তা জানি না। ছেলে চলে যাওয়ায় মনোকষ্টে পরিবারের অন্য সবাইকে কোয়ার্টার থেকে গ্রামের বাড়ি মহেশপুরে পাঠিয়ে দিয়েছি। অথচ পুলিশ প্রায়ই আমার বাড়ি আসে বিভিন্ন থানা থেকে তাকে খুঁজতে। তাদের কাজ থেকে জানতে পারি রাজুর নামে হত্যা, ডাকাতি, মোটরসাইকেল চুরির মামলা রয়েছে। সম্প্রতি চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা থানায় রাজুর বিরুদ্ধে মোটরসাইকেল চুরির মামলা করেছেন ওই এলাকার অ্যাড. আবু তালেব। তিনি রাজুর সঙ্গে আমাকেও (আজব আলীকে) আসামি করেছেন। আজব আলী বলেন, কয়েক দিন আগে বাসায় পুলিশ আসলে বিষয়টি আমি জানতে পারি। সরকারি চাকরি করি বিধায় পুলিশ আমাকে দয়া দেখিয়ে গ্রেপ্তার না করে আদালত থেকে জামিনের পরামর্শ দেন। এরপর চুয়াডাঙ্গা আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেন আজব আলী। রাজু সম্পর্কে মহেশপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাশিদুল আলম বলেন, আমরা রাজুকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সে বড় ধরনের সন্ত্রাসী। আমার থানাতেই হত্যা, ডাকাতি, মোটরসাইকেল চুরিসহ চারটি মামলা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজুর দলে ৫-৬ জন সদস্য রয়েছে। এরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে কামলা খাটার কাজ বেছে নেয়। সেখানে কয়েক দিন অবস্থান নিয়ে সুযোগ বুঝে অপকর্ম ঘটিয়ে অন্যত্র চলে যায়। রাজুর বিরুদ্ধে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, দামুড়হুদা থানাসহ বিভিন্ন থানায় হাফ ডজনের ওপর মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। সবশেষে পিতা আজব আলী বলেন, ‘আমি এ নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি চাই। দয়া করে আপনারা রাজুকে দেখামাত্র পুলিশের হাতে তুলে দেন। আর পারছি না। আমি একজন বড় অসহায় পিতা। পিতা হয়ে আমার বড় আদরের রাজুর মৃত্যু কামনা করছি। কথাটি বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন আজব আলী।