ঢাকাঃ

বহুল আলোচিত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডে অন্তত দুজন পুরুষ জড়িত ছিল। হত্যাকাণ্ডের পর সংগৃহীত আলামত থেকে তাদের ডিএনএ পাওয়া গেলেও, এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি পরিচয়।

সোমবার বিকালে সংশ্লিষ্ট শাখায় এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি খন্দকার শফিকুল আলম এ প্রতিবেদন দাখিল করেন।

হাইকোর্টে জমা দেয়া র‌্যাবের সর্বশেষ প্রতিবেদনে, বলা হয়েছে এমন কথা। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র যুগান্তরকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা এই প্রতিবেদন নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম যুগান্তরকে বলেন, ‘আমার কাছে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিবেদন আসেনি।’

সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার বলেন, ‘আগামী ৪ মার্চ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য আছে। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।’

মামলার এক আসামি তানভীর রহমান যখন মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আসেন, তখন সবশেষ প্রতিবেদন চান আদালত। গত ১৪ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত সংক্রান্ত এক রুলের আদেশে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ মন্তব্যসহ এ আদেশ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় প্রতিবেদন জমা দিয়েছে র‌্যাব।

যাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ পরীক্ষার যে প্রতিবেদন এসেছে, তাতে দুজন অপরিচিত পুরুষের ডিএনএ মিলেছে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, নিহত সাগর সারওয়ারের হাত পেছন থেকে যে চাদরে বাঁধা হয়েছিল, তাতে একজন অপরিচিত পুরুষের ডিএনএ রয়েছে। আর মেহেরুন রুনির টি শার্টে আছে আরেকজন অপরিচিত পুরুষের ডিএনএ। সেই সঙ্গে মামলা বাতিল চাওয়া তানভীর রহমানের আচরণকে রহস্যজনক বলছে র‌্যাব। তাদের দাবি এই মামলায় তানভীরকে বাদ দেয়া যুক্তিযুক্ত হয়নি।

ওই দিন আদালত আদেশে বলেছিলেন, এই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আটক মো. তানভীর রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়েও প্রতিবেদন দিতে হবে। আদালত তানভীর রহমানকে নিম্ন আদালতে স্বশরীরে হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন। তবে আইনজীবীর মাধ্যমে তাকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। আদালত ৪ মার্চ পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।

ওইদিন লিখিত পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, দীর্ঘসময় অতিবাহিত হলেও তদন্তের মাধমে সাগর-রুনি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন না হওয়া এবং অপরাধীদের চিহ্নিত, গ্রেফতার এবং বিচাররের সম্মুখীন না করতে পারা নিঃসন্দেহে দুঃখ ও হতাশার বিষয়। প্রযুক্তি নির্ভর, এলিট ও চৌকস বাহিনী হিসেবে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ন জঙ্গি, সন্ত্রাস, মাদক, বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার, ভেজাল প্রতিরোধসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অনন্য সফলতা কিছুটা হলেও ম্লান হবে, যদি এই চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করতে না পারে।’

আদালত আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘আদালত প্রত্যাশা করছে, র‌্যাব অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মামরার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করে হত্যা রহস্য উন্মোচন, প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারে সোপর্দ করতে সক্ষম হবে। বিশেষায়িত এই বাহিনী ব্যর্থতার দায়ভার বহন করুক, এটা কারো কাম্য নয়।’

আসামি তানভীরের করা মামলা বাতিল আবেদনের শুনানি নিয়ে ১৪ নভেম্বর আদেশের জন্য দিন রেখেছিলেন। সে দিন আদালত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মো. শফিকুল আলমের বক্তব্যও শোনেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন। তানভীরের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here