ঢাকা ০২:১২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার হয়, বিশ্বাস করবেন না

Reporter Name

সবুজদেম ডেক্সঃ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়, এই অপপ্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না। এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে সাইবার ক্রাইম আইন তৈরি করা হয়েছে। কেউ যদি এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার করে, সঙ্গে সঙ্গে সেই আইন দ্বারা তাদের বিচার করা হবে, গ্রেপ্তার করা হবে।

আজ রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা ‘হাইআতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমি বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে শুকরানা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ধর্ম ইসলাম ধর্ম। নবী করিম (সা.)-এর সম্পর্কে কেউ কোনো কথা বললে আইন দ্বারাই তার বিচার হবে। আমরা সেভাবেই সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনোরকম যেন অপপ্রচার করতে না পারে, সেটা বন্ধ করার জন্য সাইবার ক্রাইম আইন করে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না, আইনের দ্বারাই তাদের বিচার করে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেব যাতে কখনো তারা এ ধরনের অপপ্রচার চালাতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের শান্তি বিঘ্নিত হোক, তা আমরা চাই না। দেশে শান্তি থাকলেই উন্নতি হবে। উন্নতি থাকলে, সবাই লাভবান হবে। আপনারা আমাদের উন্নতি দেখেছেন। তৃণমূলে গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত উন্নয়ন করা হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভিক্ষা করবে না। প্রত্যেক মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করব। প্রতিবন্ধী, অসুস্থদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, তাদের জন্য বিনা পয়সার খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিশ্বব্যাপী মুসলমানের মধ্যে নিজেরা নিজেরা হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি—সেখানে লাভবান হচ্ছে কারা? যারা অস্ত্র তৈরি করে, অস্ত্র বিক্রি করে তারা লাভবান হয়। রক্ত যায় কাদের? রক্ত যায় আমাদের মুসলমানদের। তিনি বলেন, এই কথাটি আমি ওআইসির (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা) সেক্রেটারির কাছেও তুলে ধরেছি। আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বিরোধী সম্মেলন করেছিলাম জাতিসংঘে, তখনো এই কথাটি বলেছি।

বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদের স্থান হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতির স্থান হবে না। বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হবে। সামান্য কয়েকটা লোক আমাদের ধর্মের (ইসলাম) নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ইসলাম ধর্মের বদনাম দেয়। আমি যখনই কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাই, কেউ যদি বলে ইসলামি টেররিস্ট, আমি সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানাই। বলি, এটা বলতে পারবেন না। কারণ সবাই এই টেরোরিজমে বিশ্বাস করে না বা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। যারা সন্ত্রাসী তাদের কোনো ধর্ম নেই, দেশ নেই, কোনো সমাজ নেই—তারা হচ্ছে সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী। যারা সত্যিকার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, তারা কখনো সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী হতে পারে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলেম-ওলামাদের কাছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া চান। সামনে নির্বাচন, এ উপলক্ষে সবার কাছে দোয়া চান। তিনি বলেন, আমি সব সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করি। আল্লাহ যদি চান, তাহলে আবার ক্ষমতায় আসব, না চাইলে আসব না।

কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা ‘হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমি বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে এই শুকরানা মাহফিল হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী সংগঠনটির চেয়ারম্যান। তিনি সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে কওমি শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই অবদান ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

আল্লামা শফী শুকরিয়া স্মারক প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন

হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন মাওলানা ফরীদ ঊদ্দীন মাসঊদ। কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ায় আল-হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশে এই শোকরানা মাহফিলে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দুটি আহ্বান জানাব। একটি হলো হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে স্বাধীনতা পদক। আরেকটি হলো দেশের মসজিদগুলোর ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা প্রদান। একজন ইমামকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা ও মুয়াজ্জিনকে তিন হাজার টাকা প্রদানের কথা বলেন তিনি।

মাহফিলে কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা, ইসলামবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত এবং আলেম, ইমাম ও ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড গওহরডাঙ্গার চেয়ারম্যান ও গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমিন।

মাহফিলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

About Author Information
আপডেট সময় : ০২:৪১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৮
৮৩২ Time View

সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার হয়, বিশ্বাস করবেন না

আপডেট সময় : ০২:৪১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৪ নভেম্বর ২০১৮

সবুজদেম ডেক্সঃ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হয়, এই অপপ্রচারে কেউ বিশ্বাস করবেন না। এই অপপ্রচার বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে সাইবার ক্রাইম আইন তৈরি করা হয়েছে। কেউ যদি এই ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার করে, সঙ্গে সঙ্গে সেই আইন দ্বারা তাদের বিচার করা হবে, গ্রেপ্তার করা হবে।

আজ রোববার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা ‘হাইআতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমি বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে শুকরানা মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। মাহফিলের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ধর্ম ইসলাম ধর্ম। নবী করিম (সা.)-এর সম্পর্কে কেউ কোনো কথা বললে আইন দ্বারাই তার বিচার হবে। আমরা সেভাবেই সোশ্যাল মিডিয়াতে কোনোরকম যেন অপপ্রচার করতে না পারে, সেটা বন্ধ করার জন্য সাইবার ক্রাইম আইন করে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আইন নিজের হাতে তুলে নেব না, আইনের দ্বারাই তাদের বিচার করে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে দেব যাতে কখনো তারা এ ধরনের অপপ্রচার চালাতে না পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের শান্তি বিঘ্নিত হোক, তা আমরা চাই না। দেশে শান্তি থাকলেই উন্নতি হবে। উন্নতি থাকলে, সবাই লাভবান হবে। আপনারা আমাদের উন্নতি দেখেছেন। তৃণমূলে গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত উন্নয়ন করা হয়েছে। আমরা চাই বাংলাদেশে কোনো মানুষ ভিক্ষা করবে না। প্রত্যেক মানুষের খাদ্যের ব্যবস্থা করব। প্রতিবন্ধী, অসুস্থদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি, তাদের জন্য বিনা পয়সার খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।

শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে বিশ্বব্যাপী মুসলমানের মধ্যে নিজেরা নিজেরা হানাহানি, মারামারি, কাটাকাটি—সেখানে লাভবান হচ্ছে কারা? যারা অস্ত্র তৈরি করে, অস্ত্র বিক্রি করে তারা লাভবান হয়। রক্ত যায় কাদের? রক্ত যায় আমাদের মুসলমানদের। তিনি বলেন, এই কথাটি আমি ওআইসির (ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা) সেক্রেটারির কাছেও তুলে ধরেছি। আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বিরোধী সম্মেলন করেছিলাম জাতিসংঘে, তখনো এই কথাটি বলেছি।

বাংলাদেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদের স্থান হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে কোনো সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক, দুর্নীতির স্থান হবে না। বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হবে। সামান্য কয়েকটা লোক আমাদের ধর্মের (ইসলাম) নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে ইসলাম ধর্মের বদনাম দেয়। আমি যখনই কোনো আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যাই, কেউ যদি বলে ইসলামি টেররিস্ট, আমি সঙ্গে সঙ্গে আপত্তি জানাই। বলি, এটা বলতে পারবেন না। কারণ সবাই এই টেরোরিজমে বিশ্বাস করে না বা সন্ত্রাসে বিশ্বাস করে না। যারা সন্ত্রাসী তাদের কোনো ধর্ম নেই, দেশ নেই, কোনো সমাজ নেই—তারা হচ্ছে সন্ত্রাসী, জঙ্গিবাদী। যারা সত্যিকার ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করে, তারা কখনো সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী হতে পারে না।

প্রধান অতিথির বক্তব্যের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলেম-ওলামাদের কাছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া চান। সামনে নির্বাচন, এ উপলক্ষে সবার কাছে দোয়া চান। তিনি বলেন, আমি সব সময় আল্লাহর ওপর ভরসা করি। আল্লাহ যদি চান, তাহলে আবার ক্ষমতায় আসব, না চাইলে আসব না।

কওমি মাদ্রাসাগুলোর সর্বোচ্চ সংস্থা ‘হাইআতুল উলয়া লিল জামিয়াতিল কওমি বাংলাদেশ’-এর ব্যানারে এই শুকরানা মাহফিল হয়েছে। হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী সংগঠনটির চেয়ারম্যান। তিনি সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন। তিনি লিখিত বক্তব্যে কওমি শিক্ষার সনদের স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই অবদান ইতিহাসে সোনালি অক্ষরে লেখা থাকবে। তিনি ওলামাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

আল্লামা শফী শুকরিয়া স্মারক প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন

হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে স্বাধীনতা পদক দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানিয়েছেন মাওলানা ফরীদ ঊদ্দীন মাসঊদ। কওমি সনদের স্বীকৃতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা দেওয়ায় আল-হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশে এই শোকরানা মাহফিলে মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দুটি আহ্বান জানাব। একটি হলো হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীকে স্বাধীনতা পদক। আরেকটি হলো দেশের মসজিদগুলোর ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের ভাতা প্রদান। একজন ইমামকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা ও মুয়াজ্জিনকে তিন হাজার টাকা প্রদানের কথা বলেন তিনি।

মাহফিলে কাদিয়ানিদের সরকারিভাবে অমুসলিম ঘোষণা, ইসলামবিরোধী শক্তিকে প্রতিহত এবং আলেম, ইমাম ও ছাত্র-শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হয়রানির মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।
শোকরানা মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘কওমি জননী’ উপাধিতে ভূষিত করেন কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড গওহরডাঙ্গার চেয়ারম্যান ও গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার মহাপরিচালক মুফতি রুহুল আমিন।

মাহফিলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রমুখ বক্তব্য দেন।