সবুজদেশ ডেক্সঃঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ‘সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে আমাদের সফলতা এসেছে, তবে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের মাঝে আইন না মানার মানসিকতা। মানুষকে জোর করেও আইন মানতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। এটা কেন? বিদেশে যখন যাই, আমরা আইন মানি। তাহলে ঢাকার সড়কে বেরিয়ে আমরা আইন মানি না কেন?’

আজ রোববার সার্ক ফোয়ারা মোড়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আছাদুজ্জামান মিয়া এসব কথা বলেন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘ঢাকা শহরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশুদের একটি আন্দোলন হয়েছিল। সে আন্দোলনের একপর্যায়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব। সড়কের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ঈদুল আজহার আগ পর্যন্ত ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজ করেছিলাম। ১০ দিন একটানা ট্রাফিক সপ্তাহ পালন করছি। ঈদের পর মাসব্যাপী ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছি। আমাদের সঙ্গে রোভার স্কাউট, বিএনসিসি, গার্লস গাইডসহ বিভিন্ন সংগঠন কাজ করেছে। সরকারের অন্যান্য সংস্থা, যেমন: প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, বিআরটিএ, সিটি করপোরেশন কাজ করেছে। আমাদের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে, কিন্তু আন্তরিকতায় কোনো ঘাটতি ছিল না।’

আছাদুজ্জামান মিয়া আরও বলেন, ‘ঢাকায় কোনো ধরনের বাসস্টপেজের চিহ্ন ছিল না। আমরা ১৩০টির মতো বাসস্টপেজে সাইনবোর্ড তৈরি করেছি। মোটরসাইকেল যাতে হেলমেট ছাড়া না চলে এবং একজনের বেশি যাত্রী না নেয়, তার উদ্যোগ আমার নিয়েছি। এটি অনেকটাই সফল হয়েছে এবং জনগণ প্রশংসা করেছে। মানুষ যাতে ফুট ওভারব্রিজ ও জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করে, সে জন্য বিভিন্ন সংগঠন কাজ করেছে। সেখানে আমাদের সফলতা এসেছে; তবে আমি বলব, কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সফলতা আসেনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বাসগুলো যাতে সুশৃঙ্খলভাবে যায়, যত্রতত্র না দাঁড়ায়, বাস চলার সময় দরজাগুলো বন্ধ থাকে, সেটার ব্যাপারে আমরা সকলকে অনুরোধ করেছিলাম, নির্দেশনা দিয়েছিলাম। সেটার বিষয়ে কিছু উন্নতি হয়নি। এ ছাড়া হাইড্রোলিক হর্ন, উল্টো পথে গাড়ি চালানো, গাড়িতে অবৈধ স্টিকার ব্যবহার করাসহ নানাবিধ ট্রাফিক আইন ভঙ্গের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এই অভিযানে শুধু ট্রাফিক আইন অমান্য করার জন্য আমরা সাত কোটি টাকার মতো জরিমানা আদায় করেছি। পর্যাপ্ত গাড়ি আমরা ডাম্পিং করেছি। তবে এই মামলাও জরিমানা আদায় যথেষ্ট নয়।’

মানুষের মাঝে আইন না মানার মানসিকতা আছে জানিয়ে আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের মাঝে আইন না মানার মানসিকতা। পথচারীরা আইন মানছে না। আমরা জোর করে তাদের ফুট ওভারব্রিজ ও জেব্রাক্রসিং ব্যবহার করাতে পারছি না। চলন্ত গাড়ির সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপারের প্রবণতা এখনো রয়ে গেছে। যদিও কিছুটা উন্নতি হয়েছে, কিন্তু সেই মানসিকতা এখনো রয়ে গেছে। সাধারণ পথচারীদের বিনীতভাবে অনুরোধ করতে চাই, আপনারা যদি সকলে আইন না মানেন, তাহলে পুলিশ কেন, সরকারের কোনো বাহিনী দিয়ে এই অবস্থার উন্নয়ন করা সম্ভব নয়।’

চালকদের নিয়ে অনেকবার সচেতনতামূলক সভা করা হয়েছে জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘দুঃখজনক কিছুটা উন্নতি হলেও ব্যাপক উন্নতি হয়নি। এখনো যত্রতত্র গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী নেওয়ার প্রবণতা রয়ে গেছে, আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সমাজে যাঁরা দায়িত্বশীল আছেন, শ্রমিক ও মালিক সংগঠন আছেন, তাঁদের বলব, আপনারা আইন মানার সংস্কৃতি চালু করেন। নিজেরা আইন মানেন অন্যদের আইন মানতে উৎসাহিত করুন। তাহলেই পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আছাদুজ্জামান মিয়া আক্ষেপ করে বলেন, ‘মানুষকে জোর করেও আইন মানতে বাধ্য করা যাচ্ছে না। এটা কেন? একটা সভ্য দেশে এটা চলতে দেওয়া যায় না। বিদেশে যখন যাই, আমরা আইন মানি। এমনকি ঢাকা শহরের কোনো কোনো এলাকায় গেলে আমরা আইন মানি। তাহলে সড়কে বেরিয়ে আমরা আইন মানি না কেন? এটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এটির উন্নয়ন করতে হবে। শত বছরের অভ্যাস এক মাসে বা দুই মাসে পরিবর্তন হয়ে যাবে—আমরা এটা আশা করি না। তবে আমরা আমাদের পরিবর্তন হতে হবে। ফুটপাত বেদখল হওয়ার ক্ষেত্রে আমরা পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেব। লেগুনা কোন রুটে চলবে, কোন রুটে চলবে না, এটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। কারণ, সবার ব্যক্তিগত গাড়ি নেই।

সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সব ধরনের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here