সবুজদেশ ডেক্সঃ আওয়ামী লীগ ৩০টির বেশি আসনে জিতবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নিরপেক্ষ নির্বাচনকে ভয় পান বলেই তাঁরা নির্বাচনকে পুরোপুরি নিজেদের আয়ত্তে নেওয়ার জন্য সমস্যার সৃষ্টি করছেন।

আজ শুক্রবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকার কথাও বলেছেন মির্জা ফখরুল। গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার বন্ধ না হলে, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি না দিলে উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির সব দায়দায়িত্ব সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার আমাদের দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত না করে একতরফাভাবে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চলেছে। নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের নির্দেশ পালন করছে। তাদের কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে, একটা চিঠিরও জবাব দেয়নি।’ কাল বা পরশু আবারও তাঁরা নির্বাচন কমিশনে যাবেন বলে জানান ফখরুল। তিনি বলেন, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি করেনি, কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি।

বিএনপির নেতা-কর্মীরা মির্জা ফখরুলের কন্ট্রোলে নেই— আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি, আমি তাঁর কথার উত্তর দিতে চাই না। তিনি অবান্তর কথাবার্তা বলেন। আমাদের নিয়ে তাঁর এত দুশ্চিন্তা কেন? আগে বলেছেন, আমরা প্রার্থী খুঁজে পাব না, এখন আমাদের প্রতি আসনে দুইয়ের অধিক প্রার্থী, প্রার্থীর অভাব নেই। নির্বাচনটা দিন না সুষ্ঠুভাবে। দেখেন কে কতটা আসন পায়। ওরা জানে ৩০টার বেশি আসন তাদের নেই, সেই কারণে আজকে এই খেলা শুরু হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হচ্ছে, গুম করা হচ্ছে, অপহরণ করা হচ্ছে। পার্টির সিনিয়র নেতা খায়রুল কবির খোকনকে অন্যায়ভাবে আটক করা হয়েছে। প্রার্থীদের আটক করা হচ্ছে। ঢাকার প্রার্থী সাদেক হোসেন খোকার ছেলেকে চার সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে। অর্থাৎ নিম্ন আদালতকে পুরোপুরি করায়ত্ত করা হয়েছে। এগুলো কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচনের সহায়ক নয়। বরং তা বাধার সৃষ্টি করছে। আজকে খুব স্বাভাবিকভাবে জনমনে প্রশ্ন এসেছে, নির্বাচন হবে কি না। এই প্রহসনের এ নির্বাচন করে লাভ কী? তাই আস্থা আগেও ছিল না, এখনো নেই। আপনাদের মনে আছে, পঞ্চদশ সংশোধনীর যেদিন পাস হয়, সেদিন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, এর মাধ্যমে নতুন করে সংঘাত সংঘর্ষ সৃষ্টি করা হচ্ছে। পুরো জাতিকে সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি, এই উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতির দায় সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে নিতে হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ৬৯৬ জন প্রার্থীর প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলা রয়েছে। তিনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত পুলিশের হাতে আটক ৬১১ জন নেতা-কর্মীর একটি তালিকা দেন। জামায়াতকে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উপস্থিত নেতাদের দেখিয়ে বলেন, এখানে জামায়াতে ইসলামের কেউ নেই। সব ধানের শীষের।

এর আগে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার চেতনা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে কি না, বাংলাদেশের মানুষের অর্জিত গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়া যাবে কি না, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সম্ভব হবে কি না, তা নির্ভর করবে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া ও নির্বাচনের ওপর। সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ও পঞ্চদশ সংশোধনের কারণে বাংলাদেশে একদিকে জনগণের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, অন্যদিকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সব সম্ভাবনাকে রুদ্ধ করে স্বৈরাচারী একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এই সংশোধনী ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সাত বছরের সংগ্রামের অংশ হচ্ছে এই নির্বাচন।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here