ফাইল ফটো

সবুজদেশ প্রতিবেদকঃ

গত তিন সপ্তাহে ভারত থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় ৩২৯ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। ঝিনাইদহ ও যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশের সময় তাদের আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিজিবি ও পুলিশ সূত্র বলছে, আটক হওয়া ব্যক্তিরা নিজেদের বাংলাদেশি হিসেবে দাবি করেছেন। তবে দাবি প্রমাণের জন্য কোনো নথিপত্র দেখাতে পারেননি। তারা আরো দাবি করেছে, ভারত থেকে হয়রানি ও আটক হওয়ার আতঙ্কে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন তারা।

ঝিনাইদহের ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তারা জানান, চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনে ৬৭ জন অপ্রাপ্তবয়স্ক, ৬৯ জন পুরুষ ও ৭৮ জন নারীকে আটক করা হয়। তারা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার জালুলি, পলিয়ানপুর, খাশালপুর পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

ব্যাটালিয়নের হাবিলদার মোকতার হোসাইন জানান, আটক হওয়া অনুপ্রবেশকারীদের বেশিরভাগই এসেছে বেঙ্গালুরু থেকে। এদের মধ্যে অনেকে আসামে ভারত সরকার জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকরণ (এনআরসি) শুরু হওয়ার পর অনেকে সেখান থেকে বেঙ্গালুরুতে চলে গিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি ভারতের বেঙ্গালুরুতে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো শুরু করেছে ভারতীয় পুলিশ।কর্ণাটক রাজ্য সরকারের মদতে আটক করা হচ্ছে বাংলাভাষী অভিবাসীদের। মোকতার জানান, আটক হওয়া ব্যক্তিদের অনেকে চার-পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারত যাওয়ার দাবি করেছেন। তবে ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হওয়ার ভয়ে ফিরে এসেছেন।

মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাশেদুল আলম জানান, আটককৃতদের বিরুদ্ধে থানায় ১৭টি মামলা দায়ের হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আটককৃতদের অনেকে দাবি করেছেন, তাদের আদিনিবাস ঝিনাইদহের মহেশপুর ও বাঘেরহাটের স্বর্নখোলা উপজেলায়। তবে সেখানকার কোনো ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যের নাম বা বাংলাদেশে থাকা কোনো আত্মীয়ের ফোন নম্বর বলতে পারেননি তারা।

মহেশপুর ৫৮ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল আহসান জানান, আটক করা অনেকে চার-পাঁচ বছর আগে বাংলাদেশ থেকে ভারত যাওয়ার দাবি করেছে। চলতি মাসের শুরু থেকেই বিজিবি প্রচুর পরিমাণে এমন অনুপ্রবেশকারী আটক করছে। এদের বেশিরভাগই মুসলিম ধর্মালম্বী। অনেকে জানিয়েছেন, ভারতীয় নাগরিকত্ব না থাকায় সেদেশে প্রায়ই পুলিশি হয়রানির শিকার হতো তারা।

আটককৃতদের উদ্ধৃত করে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ জানান, তাদের কাছে কোনো বৈধ পাসপোর্ট বা অন্যকোনো ভ্রমণ সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র ছিল না। বেঙ্গালুরু পুলিশের ধরপাকড় অভিযান এড়াতে পালিয়ে এসেছে তারা। মহেশপুরের স্থানীয়রা জানাচ্ছে বিজিবির হাতে যতজন আটক হয়েছেন, সত্যিকারের অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।

এদিকে, যশোরের বেনাপোল ও অন্যান্য সীমান্ত পয়েন্ট থেকে ৪৯ ও ২১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদস্যরা ভারত থেকে আসা ১১৫ অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে। বিজিবি সূত্র জানিয়েছে, এদের মধ্যে ২০ শিশু, ২৮ জন নারী ও ৬৭ জন পুরুষ রয়েছে। ৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মোহাম্মদ মনজুর-ই-এলাহী জানান, বুধবার দৌলতপুর সীমান্ত থেকে বাংলাদেশে ঢোকার সময় এক মানব পাচারকারী সহ ৫৪ অনুপ্রবেশকারীকে আটক করেছে তারা।  

উল্লেখ্য, ভারতের আসামে গত ৩১ আগস্ট এনআরসি চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হয়। এতে নাম উঠেনি ১৯ লাখের বেশি মানুষের। তালিকা প্রকাশের পর এই বিশালসংখ্যক মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। তাদের বাংলাদেশে পালিয়ে আসার আশঙ্কা দেখা দেয়। প্রাথমিকভাবে এ নিয়ে উদ্বেগ জানায় বাংলাদেশ। তবে নিউ ইয়র্ক ও নয়া দিল্লিতে দুই দফা বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, এনআরসি নিয়ে বাংলাদেশের উদ্বেগের কিছু নেই।

কিন্তু গত বুধবার ভারতের ক্ষমতাসীন দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি ও দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, আসামের মতো এনআরসি সারা ভারতেই হবে। এতে ফের উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের আসাম, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম মিলে ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

Please enter your comment!
Please enter your name here