অনিবার্য মৃত্যু ও তার প্রস্তুতি
ফারুক নোমানীঃ
মৃত্যু মানুষের জন্য অবধারিত। শুধু মানুষ কেন, যার ভেতরেই প্রাণ আছে সেই একদিন মৃত্যুর মুখে পতিত হবে। এটা চির সত্য ও সর্বজন স্বীকৃত কথা। পৃথিবীর আস্তিক নাস্তিক কেউই মৃত্যুকে অস্বীকার করার ক্ষমতা রাখে না। পরজনমে বিশ্বাস যে করে না, সেও কিন্তু মৃত্যুকে বিশ্বাস করে। ধর্ম মতবাদ দৃষ্টিভঙ্গি যার যাই হোক না কেন, একটি জায়গায় সকলে একমত আর তা হলো নিশ্চিত মৃত্যু। মহান আল্লাহ সে কথাই বলেছেন পাক কুরআনে। তিনি বলেন-‘জীব মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভাল দ্বারা বিশেষভাবে পরীক্ষা করে থাকি। আর আমারই নিকট তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।’ (সুরা আম্বিয়া : ৩৫)
পৃথিবীতে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে মানুষ বের হতে পারে। পালাতে পারে আদালত থেকেও। ভয়ঙ্কর অপরাধীও বেঁচে থাকতে পারে অন্যদেশে আত্মগোপন করে। কিন্তু মৃত্যু থেকে কেউ কি রেহায় পেতে পারে? মৃত্যুর হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া কখনো কি সম্ভব? কিছুতেই নয়। সে বিষয়েই আল্লাহ বলেন- ‘বলুন, তোমরা যে মৃত্যু হতে পলায়ন কর সে মৃত্যু তোমাদের সাথে অবশ্যই সাক্ষাত করবে। তারপর তোমাদেরকে ফিরিয়ে নেয়া হবে অপ্রকাশ্য ও প্রকাশ্যের জ্ঞানী আল্লাহর কাছে অতঃপর তোমরা যা আমল করতে সে সম্পর্কে তিনি তোমাদেরকে জানিয়ে দিবেন। (সুরা জুমআ : ৮)
সুউচ্চ দুর্গ, কোন নিরাপদ আশ্রয় অথবা অন্য কোথায়ও পালিয়ে মৃত্যু থেকে মানুষ রক্ষা পাবে না। সে যেখানেই যাক না কেন, সময় হলে মৃত্যু সেখানে পৌঁছে যাবে। পাক কুরআনে বিষয়টি খুলে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন- ‘তোমরা যেখানেই থাক না কেন মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, এমনকি সুউচ্চ সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান করলেও।’ (সুরা নিসা : ৭৮)
মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট সময় আছে
মানুষ সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর আগে আল্লাহ মানুষের তাকদীর বা ভাগ্য লিপিবদ্ধ করেছেন। নির্ধারণ করেছেন কে কতটা সময় বাঁচবে তাও। কোথায় কার মৃত্যু হবে মহাজ্ঞানী আল্লাহ তাও লিখেছেন। তবে তা তিনি প্রকাশ করেননি। জানাননি মানুষকে যে, কে কতদিন বাঁচবে। কার হায়াত কতটুকু। তবে এই গোপনীয়তার রহস্য তো একদম স্পষ্ট। মানুষের হায়াতকে গোপন রেখে তিনি পরীক্ষা করতে চান তাকে। কে কতটা ভালো কাজ করে সেটাই তিনি দেখতে চান। তাই তিনি বলেন-‘আর প্রত্যেক জাতির জন্য এক নির্দিষ্ট সময় আছে। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহুর্তকাল দেরি করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না।’ (সুরা আরাফ : ৩৪)
অর্থাৎ প্রতিটি মানুষের জন্য তিনি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়েছেন। সময় হলেই তাকে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেও কেউ মারা যাবে না, আবার সময় হওয়ার পরও কাউকে অবকাশ দেয়া হবে না। তবুও মানুষ বুঝেও না বুঝের মত কাজ করে। অন্যায় অপরাধ অত্যাচারে পৃথিবীকে ভারি করে তুলেছে। অপরাধী ও অত্যাচারীকে তিনি তার যথাসময়েই ধরবেন। বোকা মানুষ ভাবে, আল্লাহ যেহেতু কিছু বলছেন না তাই আমাকে ঠেকায় কে? অথচ আল্লাহ আগেই বলে দিয়েছেন-
‘আর আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের সীমালংঘনের জন্য শাস্তি দিতেন তবে ভূপৃষ্ঠে কোন জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না; কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। অতঃপর যখন তাদের সময় আসে তখন তারা মুহুর্তকাল আগাতে বা পিছাতে পারে না। (সুরা নাহাল: ৬১)
কখন কিভাবে কোথায় কার মৃত্যু হবে
মানুষকে শেখানোর জন্য আল্লাহ কতকিছুই তো পৃথিবীতে দেখালেন। দুঃখজনক হলেও তবু সত্য যে, আমরা যা দেখি তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি না। সমাজে এমন অনেক বাবা আছেন যারা সন্তানকে কবরে রেখেছেন নিজহাতে। নিজের হাতে সন্তানের জন্য কবর খুঁড়েছেন যে বাবা তাদের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু কেউ কি জানত যে, বাবার আগেই ছেলে বিদায় নিবে? বাবার কাঁধে
সন্তানের লাশ বহন করতে হবে? পৃথিবীর এই মায়াজালে আটকে আমরা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য ভুলে গেছি পুরোপুরি। আমরা মনে করি, এখন যৌবন কাল, যেভাবে পারি এটাকে উপভোগ করি, পরে ভালো হয়ে যাব। মনে করি, অন্যায় অপরাধ তো আর বৃদ্ধকালে করতে পারব না, তাই যা করার এখনই করে নিই, পরে তওবা করে ফিরে আসব! এমন অলীক কল্পনা তো অনেকেই করে। তবে আমরা নিশ্চিতভাবে কি বলতে পারি যে, আমি বৃদ্ধ হওয়া পর্যন্ত বাঁচব! আমাদের জীবনকে সুধরে নেয়ার আগে মৃত্যু আমাদের কাছে আসবে না! কত যুবক তো আমাদের চোখের সামনে চিরবিদায় নিয়ে কবরে চলে গেল। কত তরুণ তো স্বপ্ন দেখতো, লেখাপড়া শেষ করে মোটা বেতনে চাকরি করে নতুনভাবে জীবন শুরু করবে। কিন্তু কই, আকষ্মিক মৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনা, লঞ্চডুবি ও হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তো এমন কত অবধারিত মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে! এদের সংখ্যাও তো বেশুমার।
তাই আমি, আপনি কে কখন কোথায় কিভাবে মারা যাব তা কোনভাবেই বলা যায় না। বিড়িতে শেষ টান দিয়ে তো কত লোক চিরদিনের মত ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে। কত মদ্যপের জীবনের ইতি ঘটেছে মদের বোতল হাতে ধরেই। আলো আঁধারির জমকালো মঞ্চে কত তারকার জীবনের প্রদীপ চিরতরে নিভে গেছে। আবার নিষিদ্ধ পল্লী থেকেও অনেক মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এগুলোও যেমন মৃত্যু, আবার কিছু মৃত্যু আছে বড় ঈর্ষা ও প্রশংসার। অন্যের জীবন বাঁচাতে কত ত্যাগী মানুষ আছেন যারা নিজের জীবনকে করেছেন বিপন্ন। দরাজ দিলের এমন কত মানুষ আছেন, যারা মানুষের জন্য হাসতে হাসতে মৃত্যুকে করেছেন আলিঙ্গন। পাক কুরআন পড়তে পড়তে আল্লহর কত প্রিয় বান্দা তো তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। এমন অনেক মানুষ তো অতীত হয়েছেন, যারা নামাযে এক পাশে সালাম ফেরানোর পর অপর পাশে সালাম ফেরানোর সুযোগ পাননি।
পাঠক, মৃত্যু এভাবেই আসে। কাউকে না বলে, না জানিয়ে। তাই আমরাও বলতে পারি না, আমাদের মৃত্যুটা কোথায় কখন কিভাবে হবে। এজন্যই সদাসর্বদা সত্য ও সুন্দরের পক্ষে, ন্যায় ও কল্যাণের ওপর অবিচল থাকব। অন্ততপক্ষে নিজেকে পাপ ও অন্যায় থেকে বাঁচিয়ে রাখব। (আল্লাহ না করুন) যদি পাপে লিপ্ত থাকাকালে মৃত্যু চলে আসে, তবে পরিণতি হবে বড়ই ভয়াবহ।
পাপী ও পুণ্যবানদের মৃত্যু
পাপী ও অপরাধীরা যেমন সমাজের চোখে ঘৃণিত, আল্লাহর কাছেও তারা ধৃক্কৃত। আবার তাদের মৃত্যুর যন্ত্রণাটাও হবে বড় কঠিন। কুরআনে পাপীদের মৃত্যুর বিবরণ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন- ‘আর আপনি যদি দেখতে পেতেন যখন ফিরিশতাগণ যারা কুফরী করেছে তাদের প্রাণ হরণ করছিল, তাদের মুখমণ্ডলে ও পিঠে আঘাত করছিল। আর বলছিল তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কর । এ হল তাদের কর্মফল। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি কখনও অন্যায় করেন না।’ (সুরা আনফাল: ৫০-৫১) কোন কোন মুফাসসির বলেছেন, এটা বদর যুদ্ধে মুশরিকদের নিহত হওয়ার ব্যাপার। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরের মতে, যারা’ শব্দের ব্যাপকতার ভিত্তিতে এর বিষয়বস্তুকেও ব্যাপক হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তাদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী আয়াতের অর্থ হবে এই যে, যখন কোন কাফের মারা যায়, তখন মৃত্যুর ফিরিশতা রূহ কবজ করার সময় তার মুখে ও পিঠে আঘাত করেন। কিন্তু যেহেতু এই আযাবের সম্পর্ক জড় জগতের সাথে নয়, বরং কবর জগতের সাথে যাকে বরযখ বলা হয়, কাজেই এই আযাব সাধারণত চোখে দেখা যায় না। এ ব্যাপারে কুরআনের অন্যান্য আয়াতে আছে- ‘আর যদি আপনি দেখতে পেতেন, যখন যালিমরা মৃত্যু যন্ত্রনায় থাকবে এবং ফিরিশতাগণ হাত বাড়িয়ে বলবে, তোমাদের প্রাণ বের কর। আজ তোমাদেরকে অবমাননাকর শাস্তি দেয়া হবে, কারণ তোমরা আল্লাহর উপর অসত্য বলতে এবং তার আয়াতসমূহ সম্পর্কে অহংকার করতে।’ (সুরা আনআম: ৯৩)
অন্যত্র আছে-‘সুতরাং কেমন হবে তাদের দশা! যখন ফিরিশতারা তাদের চেহারা ও পৃষ্ঠাদেশে আঘাত করতে করতে প্রাণ হরণ করবে।’ (সুরা মুহাম্মাদ: ২৭)
এখানে কাফেরদের সেই সময়কার অবস্থা বর্ণনা করা হচ্ছে, যখন ফিরিশতাগণ তাদের আত্মা বের করবেন। মৃত্যুর সময় কাফের ও মুনাফিকদের আত্মা ফিরিশতার হাত থেকে বাঁচার জন্য দেহের মধ্যে লুকোচুরি করতে লাগে এবং এদিক ওদিক পালাবার চেষ্টা করে। সে সময় ফিরিশতাগণ তা কঠোরভাবে ধরে সজোরে টান মারেন।
পাপীরা মৃত্যুকে সারাজীবন ভুলে থাকলেও মৃত্যুর সময় ঠিকই আল্লাহর কাছে অবকাশ প্রার্থনা করবে। এ সম্পর্কেই আল্লাহ বলেন-‘অবশেষে যখন তাদের কারো মৃত্যু আসে, সে বলে, হে আমার রব! আমাকে আবার ফেরত পাঠান, যাতে আমি সৎকাজ করতে পারি যা আমি আগে করিনি। না, এটা হবার নয়। এটা তো তার একটি বাক্য মাত্র যা সে বলবেই৷তাদের সামনে বারযাখ থাকবে উত্থান দিন পর্যন্ত।’ (সুরা মুমিনুন: ৯৯-১০০)
একটি হাদীসে বিশ্বাসী পুণ্যবান আর অবিশ্বাসীও পাপাচারীদের মৃত্যুর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। নবীজী সা. বলেন-‘মৃত্যুর সময় মানুষের নিকট ফিরিশতা আগমন করেন। অতএব মুমূর্ষু ব্যক্তি উত্তম লোক হলে তারা বলেন, হে পবিত্র আত্মা! পবিত্র দেহ থেকে প্রশংসিত অবস্থায় বের হয়ে এসো এবং আল্লাহর রহমত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকে। অতঃপর রূহ বের হয়ে আসলে তারা তা নিয়ে আসমানে আরোহণ করেন। এ রূহের জন্য আসমানের দরজা খুলে দেয়া হয়। জিজ্ঞেস করা হয়, সে কে? ফিরিশতাগণ বলেন, অমুক ব্যক্তি। তখন বলা হয়, পবিত্র আত্মাকে স্বাগতম, যা ছিল পবিত্র দেহে। প্রশংসিত অবস্থায় তুমি প্রবেশ করো, আল্লাহর রহমাত ও সুঘ্রাণের সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমার রব তোমার প্রতি অসন্তুষ্ট নন। তাকে অবিরতভাবে এ সংবাদ প্রদান করা হয়, যাবত না তা মহামহিম আল্লাহ যে আসমানে অবস্থান করেন সেখানে পৌঁছে যায়। মুমূর্ষু ব্যক্তি পাপাচারী হলে ফিরিশতা বলেন, হে নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মা! নিন্দিত অবস্থায় বের হয়ে আয় এবং উত্তপ্ত গরম পানি ও রক্ত-পুঁজের দুঃসংবাদ গ্রহণ কর এবং অনুরূপ বহু বিষাক্ত বস্তুর। রূহ বের হয়ে আসা পর্যন্ত তারা এভাবে আহবান জানাতে থাকেন। অতঃপর তারা রূহসহ উর্দ্ধাকাশে আরোহণ করেন। কিন্তু তার জন্য দরজা খোলা হয় না। জিজ্ঞেস করা হয়, এ ব্যক্তি কে? বলা হয়, অমুক। তখন বলা হয়, নিকৃষ্ট দেহের নিকৃষ্ট আত্মার জন্য নেই কোন সাদর সম্ভাষণ। তুই নিন্দিত অবস্থায় ফিরে যা। কারণ তোর জন্য আকাশের দ্বারসমূহ খোলা হবে না। অতঃপর একে আসমান থেকে ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং তা কবরে ফিরে আসে।’ (ইবন মাজাহ ৪২৬২)
এ লম্বা হাদীসে আমরা উভয় প্রকার মানুষের মৃত্যুকালীন অবস্থা জানতে পারলাম। জানলাম, পুণ্যবানদের মৃত্যু হবে খুব সহজেই। মৃত্যুর ফিরিশতা তাদেরকে অভয় ও সান্তনা দিবেন। শোনাবেন জান্নাতের সুসংবাদ। আল্লাহ এই বিশ্বাসী বান্দাদের সম্পর্কে বলেন-‘নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের রব আল্লাহ্, তারপর অবিচলিত থাকে, তাদের কাছে নাযিল হয় ফেরেশতা (এ বলে) যে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও।’ (সুরা হা মীম সাজদা : ৩০)
অর্থাৎ, যারা এক আল্লাহয় বিশ্বাস রাখে এবং এ বিশ্বাসের দাবীতে অবিচল থাকে, মৃত্যুর সময় এই সুসংবাদ তাদের জন্যই। আল্লাহ অন্য আয়াতে আরো বলেন- ‘হে প্রশান্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের কাছে ফিরে আস সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে। অতঃপর আমার বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হও। আর আমার জান্নাতে প্রবেশ কর।’ (সুরা ফজর: ২৭-৩০) কতই সৌভাগ্যবান হবেন এই নেককার বা পুণ্যবানরা! তাদের মৃত্যুটাও হবে কত স্বাচ্ছন্দের!
মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ
মানুষের জীবনে নিশ্চিতভাবে মৃত্যু আসবেই। কেউ তা থেকে রক্ষা পাবে না। তবে তারাই ধন্য যারা পুণ্যময় জীবন যাপন করে মৃত্যুকে বরণ করেছেন। তাই আসুন আমরাও মৃত্যুর প্রস্তুতি নিয়ে রাখি। যেন মৃত্যুর সময় আক্ষেপ করতে না হয়। তাই নবীজী সা. বেশি করে মৃত্যুর কথা স্মরণ করতে বলেছেন। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন- তোমরা অধিক পরিমাণে জীবনের স্বাদ হরণকারী অর্থাৎ মৃত্যুকে স্মরণ করো। (ইবন মাজাহ ৪২৫৮)
বুদ্ধিমান তো সেই যে বিপদে পড়ার আগেই উদ্ধারের পূর্ণ প্রস্তুুত নিয়ে রাখে। হাদীসে সেই মৃত্যুর প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে বারবার। ইবনে উমার রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা. -এর সাথে ছিলাম। এমতাবস্থায় এক আনসারী নবী সা.-এর নিকট এসে তাকে সালাম দিলো। অতঃপর বললো, হে আল্লাহর রাসূল! মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? তিনি বলেন, স্বভাব-চরিত্রে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অধিক উত্তম। সে পুনরায় জিজ্ঞেস কররো, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে অধিক স্মরণ করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান। (ইবন মাজাহ ৪২৫৯)
লেখক: মুহাদ্দিস, বলিদাপাড়া মাদরাসা, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
ইমাম, মেইন বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদ, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।