ঢাকা ০৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনিয়মের আখড়া যেন কোটচাঁদপুর সরকারি কলেজ!

Reporter Name

ঝিনাইদহঃ

কোটচাঁদপুর সরকারি কে এম এইচ কলেজের অধ্যক্ষের উদাসীনতার কারণে পরীক্ষার তিন মাস আগেই বিদায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কলেজ থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।

এদিকে, অভিযোগ করা হচ্ছে, অধ্যক্ষের অদক্ষতার কারণে প্রশাসনিক ও শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কলেজে নিময়-নীতির বালাই নেই। অধিকাংশ শিক্ষক কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। অনুপস্থিতির জন্য ছুটি নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না। কলেজটিতে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩০ মে বর্তমান অধ্যক্ষ অনুতোষকুমার কোটচাঁদপুর সরকারি কে এম এইচ কলেজে যোগ দেন। তখন থেকে অনিয়ম জেঁকে বসেছে।

দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ১ এপ্রিল শুরু। এখনো তিন মাস বাকি রয়েছে। অথচ কলেজের শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি কলেজ চত্বরে অধ্যক্ষ অনুতোষকুমারকে প্রধান অতিথি করে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এ বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

যদিও কলেজের অধ্যক্ষ অনুতোষকুমার কলেজ কর্তৃক বিদায় সংবর্ধনার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তার ভাষ্য, কলেজের শিক্ষার্থীরা এ অনুষ্ঠানটি নিজেরাই করেছে। তবে শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনার জন্য অনুমতি দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

পরীক্ষা শুরুর এতো আগে বিদায় সংবর্ধনার অনুমতি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন খামখেয়ালিপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিভাবকরা বলছেন, পরীক্ষার তিন মাস আগে শিক্ষার্থীদের বিদায় করে দেওয়া ঠিক হয়নি। তাদের এখনো অনেক শেখার সুযোগ ছিল।

ওই কলেজের সাবেক অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ফারজেল হোসেন মন্ডল বলেন, শিক্ষকদের কাছে যাওয়া-আসা থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়ে ছাড়া কমে না। কিন্তু পরীক্ষার তিন মাস আগে কলেজ থেকে ছেড়ে দিলে এই দীর্ঘ সময়ে অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশুনায় অমনোযোগী হতে পারে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, অধিকাংশ শিক্ষক নিয়মিত কলেজে আসেন না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস হয় কম।

এদিকে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস করানোর জন্য বর্তমান সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কোটচাঁদপুর সরকারি কে এম এইচ কলেজ তার ব্যতিক্রম। বর্তমান অধ্যক্ষ অনুতোষকুমার মাল্টিমিডিয়া ক্লাস উঠিয়ে দিয়েছেন।

ক্লাসগুলো থেকে প্রজেক্টর খুলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্লাসের প্রজেক্টরের খাঁচাগুলো পড়ে আছে।

কলেজ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় কর্মসূচিতে অধ্যক্ষ কখনো হাজির থাকেন না। কলেজে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয় অ্যাসেম্বলির সময়। অ্যাসেম্বলি পরিচালনা করেন কলেজের পিয়ন। অধ্যক্ষ কোনো দিন অ্যাসেম্বলিতে উপস্থিত থাকেন না।

এই বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, অ্যাসেম্বলির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গেম টিচার রিজাউল করিমকে। তিনি অসুস্থ থাকায় আপাতত অফিসের পিয়ন দিয়ে অ্যাসেম্বলি পরিচালনা করা হচ্ছে।

কলেজের অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব বন্ধ রয়েছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ বলেন, বেশ কটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে। চালু কম্পিউটার অফিসের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই কম্পিউটার ল্যাবটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এছাড়া কলেজের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েছেই। অভিযোগ উঠেছে, অধ্যক্ষ অনুতোষকুমার তার আজ্ঞাবহ তিন সদস্যকে দিয়ে ক্রয় কমিটি গড়েছেন। এর মাধ্যমে দুর্নীতি জায়েজ করা হয়। কোনো শিক্ষক দুর্নীতি সম্পর্কে কথা বললে তাকে এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় রিপোর্ট) রিপোর্টে কম নম্বর দেওয়ার এবং বদলি সুপারিশের ভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে শিক্ষকরা অধ্যক্ষের অপকর্ম মেনে নিতে বাধ্য হন।

শিক্ষকরা বলছেন, তদন্ত করলে অধ্যক্ষের অপকর্মের বহু খতিয়ান বেরিয়ে আসবে।

সার্বিক বিষয়ে ঝিনাইদহ-৩  (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শফিকুল আজম খান চঞ্চলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমি আগেই শুনেছি। বিষয়টি দেখবো।’

About Author Information
আপডেট সময় : ০৮:২৫:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০
৮৮১ Time View

অনিয়মের আখড়া যেন কোটচাঁদপুর সরকারি কলেজ!

আপডেট সময় : ০৮:২৫:৪৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ৪ জানুয়ারী ২০২০

ঝিনাইদহঃ

কোটচাঁদপুর সরকারি কে এম এইচ কলেজের অধ্যক্ষের উদাসীনতার কারণে পরীক্ষার তিন মাস আগেই বিদায় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কলেজ থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে অভিভাবক মহলে চরম ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।

এদিকে, অভিযোগ করা হচ্ছে, অধ্যক্ষের অদক্ষতার কারণে প্রশাসনিক ও শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। কলেজে নিময়-নীতির বালাই নেই। অধিকাংশ শিক্ষক কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। অনুপস্থিতির জন্য ছুটি নেওয়ার প্রয়োজনও বোধ করেন না। কলেজটিতে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ৩০ মে বর্তমান অধ্যক্ষ অনুতোষকুমার কোটচাঁদপুর সরকারি কে এম এইচ কলেজে যোগ দেন। তখন থেকে অনিয়ম জেঁকে বসেছে।

দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা ১ এপ্রিল শুরু। এখনো তিন মাস বাকি রয়েছে। অথচ কলেজের শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি কলেজ চত্বরে অধ্যক্ষ অনুতোষকুমারকে প্রধান অতিথি করে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এ বিদায় সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

যদিও কলেজের অধ্যক্ষ অনুতোষকুমার কলেজ কর্তৃক বিদায় সংবর্ধনার বিষয়টি অস্বীকার করছেন। তার ভাষ্য, কলেজের শিক্ষার্থীরা এ অনুষ্ঠানটি নিজেরাই করেছে। তবে শিক্ষার্থীদের বিদায় সংবর্ধনার জন্য অনুমতি দিয়েছেন বলে তিনি জানান।

পরীক্ষা শুরুর এতো আগে বিদায় সংবর্ধনার অনুমতি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি।

কলেজ কর্তৃপক্ষের এমন খামখেয়ালিপনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে অভিভাবকরা বলছেন, পরীক্ষার তিন মাস আগে শিক্ষার্থীদের বিদায় করে দেওয়া ঠিক হয়নি। তাদের এখনো অনেক শেখার সুযোগ ছিল।

ওই কলেজের সাবেক অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক ফারজেল হোসেন মন্ডল বলেন, শিক্ষকদের কাছে যাওয়া-আসা থাকলে শিক্ষার্থীদের মনোবল বাড়ে ছাড়া কমে না। কিন্তু পরীক্ষার তিন মাস আগে কলেজ থেকে ছেড়ে দিলে এই দীর্ঘ সময়ে অনেক ছাত্রছাত্রী পড়াশুনায় অমনোযোগী হতে পারে।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, অধিকাংশ শিক্ষক নিয়মিত কলেজে আসেন না। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটিতে ক্লাস হয় কম।

এদিকে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ক্লাস করানোর জন্য বর্তমান সরকারের কঠোর নির্দেশনা থাকলেও কোটচাঁদপুর সরকারি কে এম এইচ কলেজ তার ব্যতিক্রম। বর্তমান অধ্যক্ষ অনুতোষকুমার মাল্টিমিডিয়া ক্লাস উঠিয়ে দিয়েছেন।

ক্লাসগুলো থেকে প্রজেক্টর খুলে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ক্লাসের প্রজেক্টরের খাঁচাগুলো পড়ে আছে।

কলেজ-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাতীয় কর্মসূচিতে অধ্যক্ষ কখনো হাজির থাকেন না। কলেজে জাতীয় সংগীত পরিবেশন হয় অ্যাসেম্বলির সময়। অ্যাসেম্বলি পরিচালনা করেন কলেজের পিয়ন। অধ্যক্ষ কোনো দিন অ্যাসেম্বলিতে উপস্থিত থাকেন না।

এই বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, অ্যাসেম্বলির জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গেম টিচার রিজাউল করিমকে। তিনি অসুস্থ থাকায় আপাতত অফিসের পিয়ন দিয়ে অ্যাসেম্বলি পরিচালনা করা হচ্ছে।

কলেজের অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাব বন্ধ রয়েছে। এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে অধ্যক্ষ বলেন, বেশ কটি কম্পিউটার নষ্ট হয়ে গেছে। চালু কম্পিউটার অফিসের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই কম্পিউটার ল্যাবটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এছাড়া কলেজের আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তো রয়েছেই। অভিযোগ উঠেছে, অধ্যক্ষ অনুতোষকুমার তার আজ্ঞাবহ তিন সদস্যকে দিয়ে ক্রয় কমিটি গড়েছেন। এর মাধ্যমে দুর্নীতি জায়েজ করা হয়। কোনো শিক্ষক দুর্নীতি সম্পর্কে কথা বললে তাকে এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় রিপোর্ট) রিপোর্টে কম নম্বর দেওয়ার এবং বদলি সুপারিশের ভয় দেখানোর অভিযোগ রয়েছে। যে কারণে শিক্ষকরা অধ্যক্ষের অপকর্ম মেনে নিতে বাধ্য হন।

শিক্ষকরা বলছেন, তদন্ত করলে অধ্যক্ষের অপকর্মের বহু খতিয়ান বেরিয়ে আসবে।

সার্বিক বিষয়ে ঝিনাইদহ-৩  (কোটচাঁদপুর-মহেশপুর) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শফিকুল আজম খান চঞ্চলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘এমন অভিযোগ আমি আগেই শুনেছি। বিষয়টি দেখবো।’