অপহরণকারীরা অস্ত্র ঠেকিয়ে তার কাছ থেকে দুই সেট খালি স্ট্যাপে স্বাক্ষর নিয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
ক্ষমতাসীন দলের এই নেতাকে কারা অপহরণ করেছিল, সেই বিষয়ে এখনও কিছু জানতে পারেনি পুলিশ। তবে তাদেরও সন্দেহ রাজনৈতিক বিরোধ।
রাজনৈতিদক কারণের কথা বললেও অপহরণের পেছনে কে বা কারা জড়িত, সে বিষয়ে কিছু বলেননি পারভেজ।
কুমিল্লার তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান পারভেজ ঢাকার লালমাটিয়ায় নিজের ফ্ল্যাটে সপরিবারে থাকেন।
শুক্রবার ওই বাসার পাশের মসজিদে জুমার নামাজ পড়ে বাসায় ফেরার পথে একটি গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়েছিল তাকে। রাতে পূর্বাচলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় ।
অপহরণের বর্ণনা দিয়ে শনিবার দুপুরে তিনি সাংবাদিকের বলেন, জুমার নামাজ শেষ করে বাসায় ফেরার সময় গাড়ি করে এক লোক এসে তাকে সালাম দেয়, ঠিক ওই সময় পেছন থেকে আরেকজন এসে ধাক্কা দিয়ে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নেয়। এরপর মুখে কাপড়ের মতো কিছু একটি ধরে তাকে অজ্ঞান করে ফেলেছিল।
“জ্ঞান ফেরার পর গাড়ির ভেতরেই ইংরেজি-বাংলা দুই সেট তিনশ টাকার খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। এরপর দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে করে ঘুড়িয়ে আনুমানিক রাত ১০টার দিকে রূপগঞ্জ কাঞ্চন ব্রিজের আগে একটি উন্মুক্ত স্থানে আমাকে নামিয়ে দেওয়া হয়।”
স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার সময় তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রেখেছিল বলে জানান পারভেজ। তিনি বলেন, তাদের হেফাজতে থাকাকালে প্রায় সময় তার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে রাখা হয়েছিল।
অজ্ঞান করে নেওয়ার কারণে কাউকে দেখতে পাননি বলে জানান পারভেজ। তবে গাড়িতে তোলার আগে যে ব্যক্তি তাকে সালাম দিয়েছিল, তাকে দেখলে হয়ত চিনতে পারবেন তিনি।
গাড়িতে তার চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে অপহরণকারীদের কাউকে দেখতে পাননি বলে জানান তিনি। তবে তার ধারণা, অপহরণকারীরা ৫/৬ জন ছিল।
তাহলে স্ট্যাম্প কীভাবে দেখলেন- সাংবাদিকদের প্রশ্নে পারভেজ বলেন, স্বাক্ষর নেওয়ার সময় তারা চোখের কাপড়টি সামান্য খুলেছিল, তাতে তিনি বুঝতে পারেন যে এটা তিনশ’ টাকার স্ট্যাম্প।
অপহরণের কারণ জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “আমার কোনো ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব নেই, রাজনৈতিক কারণেই এটি হতে পারে।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুমিল্লা-২ (হোমনা-তিতাস) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কাজ করছেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ। তবে স্থানীয় দ্বন্দ্বে হামলার শিকার হওয়ার পর এলাকায় যাচ্ছিলেন না তিনি।
কাউকে সন্দেহ করছেন কি না- সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পারভেজ বলেন, তিতাসের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল শিকদারের সঙ্গে তার বিরোধ থাকলেও তার সঙ্গে এই ঘটনার সংশ্লিষ্টতা আছে কি না, তা তিনি নিশ্চিত নন।“বিরোধের জের ধরে কুমিল্লায় আমার গাড়িতে হামলাও হয়েছিল। তখন আমি সোহেল শিকদারকে আসামি করে মামলা দায়ের করি, যা চলমান আছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। তবে এই ঘটনায় আমি কাউকে সন্দেহ করছি না। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করেছে, অপরাধীদের তারাই খুঁজে বের করবে।”
রাজনৈতিক কারণে হুমকির মুখে ছিলেন বলে দাবি করেন পারভেজ।
কয়েক দিন আগে স্ত্রীকে চলাফেরায় সতর্ক থাকতে বলেছিলেন তিনি। সেটা কী কারণে- প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এটা রাজনৈতিক কারণে বলেছি।”
ব্যবসায়িক কোনো বিরোধ থেকে কি স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেওয়া হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ব্যবসার কারণে নয়, ভয় দেখানোর কারণে তারা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে পারে। তবে কিছু বলেনি।”
অপহরণকারীরা শারীরিক কোনো নির্যাতন চালায়নি বলে জানান তিনি।
পারভেজকে অপহরণের বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মীর শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তারা এখনও কাউকে শনাক্ত করতে না পারেননি।
তবে পারভেজের সঙ্গে কথা বলে তথ্য নিয়ে অপরাধীদের শানাক্ত করার বিষয়ে আশাবাদী তিনি।
যে গাড়িতে করে পারভেজকে তুলে নেওয়া হয়েছিল, তার নম্বর প্লেটটি ভুয়া ছিল বলে জানান ওসি।
তিনি বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, তিতাস এলাকায় তার রাজনৈতিক কিছু বিরোধ আছে। ঢাকায় কোনো বিরোধের খবর নেই। তিতাস থেকে কেউ ঢাকায় এসে এই ঘটনা ঘটিয়েছে কি না, তা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।”